বৃহস্পতিবার , ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১১ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > কঠোর নজরদারিতে ১০ কর্মকর্তা

কঠোর নজরদারিতে ১০ কর্মকর্তা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার ১০ কর্মকর্তার। রিজার্ভ স্থানান্তর করাসহ সুইফট শাখার সাইবার লাইনে তারা কাজ করতে পারেন। গোপন পাসওয়ার্ডসহ নির্দিষ্ট নিরাপত্তার বিষয়গুলোও তাদের জানা। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে তথ্য দিয়ে সাইবার হ্যাকিংয়ে সহায়তা করা হয়েছে বলেও আলামত পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এই কর্মকর্তাদের এখন কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি রিজার্ভ সংরক্ষণ কাজে জড়িত আরো কয়েকজন কর্মকর্তার গতিবিধির ওপরও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

শুক্রবার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে এসব তথ্য জানান। তারা বলেন, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় একইভাবে তদন্তকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এ জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে সেই সূত্রেই তদন্ত এনিয়ে নেয়া হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এর কাছেও সহায়তা চাওয়া হবে। আগামীকাল রোববার এফবিআইর বাংলাদেশ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করবেন সিআইডির তদন্তকারী দল।

এদিকে শুক্রবার ছুটির দিনও বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে তল্লাশি করেছে সিআইডির ফরেনসিক দল। তারা ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ শাখা, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেট শাখা, ফরেন এক্সচেঞ্জ এন্ড সিকিউরিটি এবং পেমেন্ট শাখা থেকে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেন। কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন সিআইডির তদন্তকারীরা।

সিআইডির তদন্ত তদারকি দলের প্রধান উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-এইচআরএম) সাইফুল আলম বলেন, ‘আমরা ইন্টারপোল ও এফবিআই’র সহায়তা চাইছি। রবিবার এখানকার এফবিআই প্রতিনিধির সঙ্গে বসে আলাপ করব। ইন্টারপোলের মাধ্যমে বার্তা দেয়া হয়েছে। শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনে লেনদেনের বিষয়গুলো একত্রে করে আন্তঃদেশীয় তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘রিজার্ভ ব্যাংকে ১০ জন কর্মকর্তার এক্সেস আছে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। ফরেন এক্সচেঞ্জ , সিকিউরিটি সার্ভিল্যান্স ইকুইপমেন্ট, পেমেন্টে সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট (পিএসডি) এবং অডিট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির জন্য অপরাধীরা কৌশলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো বেছে নেয়। ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফটে ব্যবহৃত সফটওয়্যার ঠিকমতো কাজ করছিল না। ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল শুক্রবার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ওইদিন স্বয়ংক্রিয় প্রিন্ট না পেলে সেটি প্রিন্টারের সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যান। পরদিন শনিবারও (৬ ফেব্রুয়ারি) সফটওয়্যার চালু ও প্রিন্ট বের করা সম্ভব হয়নি। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করা হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। শরি ও রোববার যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নিউইয়র্কে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। ৮ ফেব্রুয়ারি সুইফট শাখার সফটওয়্যারটি চালুর পর নিশ্চিত হয়ে লেনদেন বন্ধ করার আগে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে ১০১ মিলিয়ন ইউএস ডলার চুরি হয়ে যায়। এতে পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে তা পুরোপুরি জানে অপরাধীরা। এছাড়া রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ডলাল স্থানান্তরের সময় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকেই তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এ কারণে সুইফট কোড সংরক্ষণ এবং সাইবার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর নজরদারিতে নিয়েছেন তদন্তকারীরা।

ইতোমধ্যেই জানা গেছে, ডিলিং রুমের সিসি ক্যামেরাগুলো সঠিক জায়গায় বসানো হয়নি, সার্ভার ও কম্পিউটার থেকে তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে এবং ঘটনার আগে থেকে ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের ডিলিং রুমের দুটি সিসি ক্যামেরা বিকল ছিল। রিজার্ভ থেকে ডলার চুরির সময় ব্যাংকের ডিলিং রুম বন্ধ ছিল। এতে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে যে বার্তা এসেছিল, তা পরীক্ষা করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানায়, এসব প্রক্রিয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা জোরদার না থাকার কারণে নাকি পরিকল্পিতভাবে হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিলিং রুম ও সুইফট কোড ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের কল রেকর্ডসহ ব্যক্তিগত যোগাযোগ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, গড়মিলগুলোর ব্যাপারে জানতে কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন তদন্তকারীরা। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মিজানুর রহমান, আবদুল্লাহ সালেহ ও প্রভাস চন্দ্র, সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন, রফিক আহমেদ মজুমদার, সনজিৎ রায়, আইটি বিভাগের দেব দুলাল রায় এবং মামলার বাদী যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা রয়েছেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মির্জা আবদুল্লাহ হেল বাকী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের ঘটনা একটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম। এ ঘটনায় বাংলাদেশসহ আরও তিনটি দেশের অপরাধী জড়িত। অন্য তিনটি দেশেও তদন্ত শুরু হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপিন্সের পত্রিকা ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে জানানো হয়- নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। এ প্রচেষ্টায় দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করলেও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরে ব্যর্থ হয় তারা। সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করা অর্থ ফিলিপাইন ও শ্রীলংকার ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। এর মধ্যে ফিলিপাইনের অ্যাকাউন্টে নেয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার, পরে তা ক্যাসিনোর মাধ্যমে হংকংয়ে পাচার করা হয়। তবে শ্রীলংকার ব্যাংকের স্থানান্তরের চেষ্টা করা ২০ মিলিয়ন ডলার প্রাপকের ভুল নামের কারণে আটকানো সম্ভব হয়েছে।

পত্রিকাটির এ খবরে দেশে-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এরই মধ্যে বাংলাদেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে পদত্যাগ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সরিয়ে দেয়া হয়েছে দুই ডেপুটি গভর্নরকে। গত মঙ্গলবার বিকেলে ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।