শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > এলো আগুন লাগা ফাগুন

এলো আগুন লাগা ফাগুন

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পলাশ ফুটেছে, শিমুল ফুটেছে/ এসেছে দারুণ মাস- কবিতার মতো করেই বাংলা প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরাজের প্রথম মাস ফাল্গুন। একদিকে বাংলা পঞ্জিকার বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তেরও হলো শুরু। তাই তো দিকে দিকে চলছে বর্ণিল, পার্থিব-অপার্থিব নানা আয়োজন। এ দিনটিকে যৌবন বন্দনার দিনও বলা হয়।

বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ফাল্গুন ও চৈত্র দু’মাস বসন্তকাল। এ ঋতুতে শীতের শুষ্কতায় বিবর্ণ প্রকৃতি ফিরে পায় প্রাণ। গাছে গাছে দেখা দেয় কচি পাতা। দক্ষিণা হাওয়ায় মাতিয়ে তোলে চারিদিক। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে সব গাছ। কৃষ্ণচূড়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, মালতী, মাধবী, বকুল, শিমুল, পলাশসহ নানা জাতের ফুল ফোটে। আমের মুকুলের সৌরভে ম ম করে আকাশ বাতাস। আর এই আগুন লাগা ফাগুনেই গাছে গাছে সুললিত কণ্ঠে প্রিয়াকে ডেকে আকুল হয় কোকিল।

প্রকৃতির প্রাণ সঞ্চারিনী এ ঋতুকে বরণ করতে নানা আয়োজনে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে সারা দেশ। প্রতিবারের মতো এবারও তার ব্যত্যয় ঘটছে না। বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন। রাজধানী ঢাকার নানা স্থানে উদযাপন করা হবে বসন্তবরণ। শাহবাগে অবস্থিত চারুকলা ভবনের প্রাঙ্গণে বসন্তবরণের জন্য দিনভর চলবে উৎসব। রমনার বকুলতলায় সকালে বসন্তবন্দনার মাধ্যমে শুরু হবে মূল উৎসব। এর পর নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে বরণ করা হবে বসন্তকে।

পহেলা ফল্গুনকে বরণ করে নেয়ার উৎসবে অন্যতম আকর্ষণ রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান ও কবিতা। ছায়ানট, উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গান পরিবেশন করবে।

বসন্তকে বরণ করার প্রধান অনুষঙ্গ ফুল। পহেলা ফাল্গুনের দিন তরুণীরা চুলে খোপা বেঁধে কেউ বেনী করে ফুলের মালা, ফুল দিয়ে জড়িয়ে ঘুরতে বের হয়। এজন্য দেশের বৃহত্তম ফুলের বাজার শাহবাগ, কাঁটাবনসহ রাজধানীর ফুলের দোকানগুলোতে ওঠে ব্যবসা। গাঁদা, রজনীগন্ধা, বেলী ও গোলাপের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। পহেলা ফাল্গুন বা বসন্তের প্রথম দিনে বাঙালি নারীরা বাসন্তী বা হলুদ রঙের শাড়ি পরে তাজা ফুলের অলংকার ব্যবহার করে ঢাকা শহরে বের হয়।

শাহবাগ, টিএসসি, রমনা, ধানমণ্ডিলেকের চত্বর এদিন বাসন্তী রংয়ের শাড়ি পরা নারী ও বিভিন্ন রংয়ের ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে। এ মাসে একুশে গ্রন্থমেলা হওয়ার কারণে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ বসন্তের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, টিএসসি, চারুকলাসহ পুরো শাহবাগ এলাকাতেই অসংখ্য নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ,তরুণ-তরুণীরা বসন্তে উৎসবে মেতে ওঠে।

অনেকে বলে থাকে বসন্তের মাতাল হাওয়ায় সব বয়সী তরুণ-তরুণীর মধ্যে এক ধরনের পাওয়া না পাওয়ার আনন্দ ও বেদনা জেগে ওঠে। মনের মধ্যে ভালোবাসা ও বিরহের মাখামাখি মিশ্রণ দেখা যায়। তাই বুঝি কাজী নজরুল ইসলাম ফাল্গুন মাসকে ‘খুনি মাস’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ‘বল সখি কেমনে নিভাই বুকের আগুন!/ এল খুন মাখা তূণ নিয়ে খুনেরা ফাগুন!/ সে যেন হানে হুল-খুনসুড়ি/ ফেটে পড়ে ফুলকুঁড়ি/ আঁইবুড়ো আঁইবুড়ি বুকে ধরে ঘুন/ যত বিরহিণী নিম-খুন কাটা ঘায়ে নুন।’

পহেলা ফাল্গুন শুধু বসন্তউৎসবের রং ছড়ায় না, সেই সাথে আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপরও রং ছড়ায়। বসন্তে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বা একুশের পলাশ রাঙা দিনের সঙ্গে ।

বসন্তের এই রূপ দেখে আপন মনে গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করে রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- আহা, আজি এ বসন্তে/ কত ফুল ফোটে/ কত বাঁশি বাজে/ কত পাখি গায়…।