স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ বলেছেন, এরশাদ ওভার বাউন্ডারি মারতে গিয়ে নিজেই ক্যাচ আউট হয়েছেন। তিনি পুতুল নাচের রাজা হয়ে একেক সময় একেক ভানুমতির খেল খেলছেন। এরশাদ দাবি করেছেন তিনি আটক। অথচ এই আটকাবস্থায় তিনি গলফ খেলছেন। যাকে খুশি দল থেকে বাদ দিচ্ছেন। আবার পদোন্নতি দিচ্ছেন।
গতকাল গুলশানের কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টি আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব গোলাম মসিহ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরী, এসএমএম আলম, নবাব আলী আব্বাস, এডভোকেট হোসনে আরা প্রমুখ। সম্মেলন শেষে খালেকুজ্জামান চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং আবদুস সালাম খোকনকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী জাফর আহমদ বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’- কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেন, জাতীয় পার্টির আজকের এই কর্মী সম্মেলন এবং বেগম জিয়া ঘোষিত মার্চ ফর ডেমোক্রেসি একাকার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির ভেতর থেকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে আমরা আদর্শগত সংগ্রাম করেছি।
আমরা পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যানকে মহাজোট ছেড়ে আসার জন্য বলেছি। তিনি বলেছেন, তিনি নাকি সৈনিক। তিনি জানেন কখন কি করতে হয়। কিন্তু তিনি হয়তো ভুলে গেছেন আমিও একজন রাজনীতিবিদ। আমিও জানি কখন কি করতে হয়। মাটিতে পা দিয়ে জনগণের মনের ভাষা বলতে পারি। কাজী জাফর আহমদ বলেন, দেশে আজ ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। দেশ কোন্ দিকে যাচ্ছে, কি হবে তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা চলছে। চারদিকে ভয়ভীতি ও আশঙ্কা।
দেশের মানুষ একদলীয় এক তরফা নির্বাচন চায় না। তাই তারা মাঠে-ঘাটে পথে প্রান্তরে এই প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলেছেন। আগামী ২৯শে ডিসেম্বর এই সংগ্রামে শরিক হতে তারা ঢাকায় আসবেন। সরকারের ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী আচরণের এবং দুর্নীতি ও মানুষ হত্যার প্রতিবাদ জানাতে সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তিনি মার্চ ফর ডেমোক্রেসি সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুনেছি আমাকেও নাকি গ্রেপ্তার করা হবে। ৫৮ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ১৬ বছরই জেল-জুলম হুলিয়া খেটেছি। আমাকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে গেলেও আমার কণ্ঠ স্তব্ধ করা যাবে না।
এরশাদকে উদ্দেশ্য করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি এরশাদ সাহেবকে বহিষ্কার করতাম না। কিন্তু করতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেছিলেন সব দল অংশ না নিলে আমি নির্বাচনে যাবো না। কাউকে ক্ষমতায় নিতে আমি নির্বাচন করবো না। নির্বাচনে গেলে জনগণ আমার মুখে থুথু দেবে। আমাকে বেঈমান বলবে। এর কিছুদিন পরেই তিনি ইউটার্ন নিলেন। মহাজোট ছেড়ে আবার ১০ মিনিটের মাথায় তথাকথিত মহাজোট সরকারেই যোগ দিলেন। এর ১৪ দিনের মাথায় তিনি আবার দ্বিতীয় দফায় ইউটার্ন নিলেন। বললেন আমি নির্বাচনে যাবো না। পৃথিবীর ইতিহাসে এভাবে বারবার ইউটার্নের আর কোন নজির নেই। এরশাদের এই সিদ্ধান্ত ও ব্যক্তিগত চরিত্রের প্রতিবাদ জানাতেই আমি দল থেকে বহিষ্কার করেছি। এরপর আমরা বিশেষ কাউন্সিল করেছি। এরশাদের পক্ষ থেকে এ কাউন্সিলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। তাই আমাদের এই কমিটি বৈধ। শেষ পর্য়ন্ত জাতীয় পার্টি একটিই থাকবে এবং আমাদের পার্টিই হবে মূল জাতীয় পার্টি।
ফিরোজ রশীদকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম: কাজী ফিরোজ রশীদকে সাতদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একাংশের প্রেসিডেসিয়াম সদস্য এসএমএম আলম। গতকাল ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টি আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে এ আল্টিমেটাম দেন তিনি। কাজী জাফরকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় কাজী ফিরোজ রশীদকে উদ্দেশ্য করে এসএমএম আলম বলেন, আপনি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। আপনি মুক্তিযুদ্ধও করেছেন।
তাই আপনাকে নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাই না। শুধু এটুকু বলতে চাই, আপনার কোন লজ্জা নেই। তিনি বলেন, আপনি চিনি নিয়ে কথা বলেছেন। অথচ সেই মামলায় আমাদের নেতা কাজী জাফর আহমদ বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আপনি যদি সাতদিনের মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন, তাহলে আপনার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। আপনি এত সম্পদের মালিক হলেন কিভাবে সে মুখোশ খুলে দেবো।