রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > এরশাদের আচরণে ক্ষুব্ধ হেফাজত

এরশাদের আচরণে ক্ষুব্ধ হেফাজত

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সর্বশেষ ডিগবাজিতে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছে হেফাজতে ইসলাম। আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরবর্তী ঘটনাকে ‘বেয়াদবি’ ও ‘প্রতারণা’ হিসেবে দেখছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা শফী। তাকে রাজনৈতিকভাবে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছেন এরশাদ। দোয়া নেয়ার কথা বলে বেয়াদবি করেছেন।

ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করেছেন বর্ষীয়ান এই আলেমকে। তবে মানীর মান আল্লাহ রাখেন। আল্লামা আহমদ শফীকে ধোঁকা দেয়া যায়নি। হেফাজতের কোন ক্ষতি হয়নি। এরশাদ নিজের রাজনৈতিক কবর নিজেই রচনা করেছেন। উন্মোচন করেছেন নিজের মুখোশ। ইসলামের বন্ধু সেজে শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। অপরাপর ইসলামী দলগুলোর প্রতিক্রিয়াও একই রকম। বিভিন্ন সময় ইসলামের ‘দরদি’ এরশাদের ভাঁওতাবাজিতে তারাও মনঃক্ষুণ্ন।

হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হাদিস সাক্ষ্য দেয় কোন মোমিন বান্দা শয়তানের ধোঁকায় পড়েন না। বরং যারা মোমিনদের ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করে তারাই ধোঁকার শিকার হয়। যেমনটি হয়েছেন এরশাদ। তার এই ডিগবাজি সাময়িক জয় বলে মনে করা হলেও আসলেই ১৬ কোটি মানুষের সামনে চরমভাবে পরাজিত হয়েছেন এরশাদ। দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিক্রিয়া তার প্রমাণ। মাওলানা ইসলামাবাদী বলেন, শেষ বয়সে এরশাদ নাস্তিক্যবাদী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানের ক্ষতি করলেন। ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হলেন। এখান থেকে তার আর উঠে আসার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে এরশাদ কেবল ইসলামপন্থিদের শত্রু হননি দেশের সাধারণ মানুষেরও দুশমন হয়েছেন।

এর প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের আমীরের প্রেস সেক্রেটারি মাওলানা মনির আহমদ বলেন, এরশাদ নাস্তিক্যবাদী শক্তির সহায়ক এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি এতদিন মুখোশ পরে ইসলামপন্থি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অভিনয় করে গেছেন। বিভিন্ন সময়ে ইসলামের জন্য মায়াকান্নাও কেঁদেছেন। সর্বশেষ তিনি আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজের উচ্চাভিলাষ পূরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু হুজুরের বিচক্ষণতায় ধরা পড়ে যান। হুজুর এরশাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বুঝে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এখান থেকে শূন্য হাতে ফিরে যাওয়ার পরদিনই রাজনৈতিক ডিগবাজি দেন এরশাদ। এ ঘটনা সংগঠনের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ করে। তারা ইসলামবিদ্বেষী শক্তির সহায়ক এরশাদকে সমুচিত জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ওদিকে খেলাফত যুব আন্দোলনের সভাপতি মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, এরশাদের কথা ও কাজে কোনদিন মিল পাওয়া যায়নি। তিনি কয়েক মাস আগে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করে নির্বাচনের আগের দিন মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে চলে গেলেন। দু’বছর ধরে তিনি আওয়ামী মহাজোট ছেড়ে দেবেন বলে হাঁক-ডাক ছাড়ছেন। কয়েকদিন আগেই বলে বসলেন, তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেহেশতে যেতে রাজি নন। তিনি দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে মহাজোটের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে প্রমাণ করলেন সর্বদলীয় সরকার নামক সাজানো নাটকের তিনি শ্রেষ্ঠ নায়ক। মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন- আওয়ামী মিথ্যাবাদীদের সঙ্গে আরেক মিথ্যাবাদীর সংযোগ হচ্ছেন এরশাদ।

এ জন্য দেশ ও ইসলামের চিরদুশমন হিসেবে জাতির কাছে তিনি চিরদিন চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। এদিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী মহাজোট সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কার্যত নাস্তিক্যবাদ ও ইসলামবিদ্বেষীদের পক্ষাবলম্বন করেছেন বলে মন্তব্য করেছে নাস্তিক-মুরতাদ নির্মূল কমিটি। গতকাল এক বিবৃতিতে কমিটির নেতারা বলেন, হেফাজতের আন্দোলন ও শাপলা চত্বর নিয়ে এতদিন এরশাদের মুখে ইসলামের পক্ষে বুলি আউড়াতে দেখা গেলেও দিল্লির টাকা পেয়ে এরশাদ রাতারাতি দিক পরিবর্তন করেছেন। ১৯৮১ সালে নির্বাচিত সরকারকে বন্দুকের নলের মুখে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করা এরশাদ নানা ভেল্কি দেখিয়ে আসছেন। তখন জিয়া হত্যার সঙ্গে এরশাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনেকেই জোরালো সন্দেহ করতেন।

চতুর এরশাদ জনগণের আবেগকে পুঁজি করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে জিয়া পরিবারের প্রতি দরদি হয়ে ওঠেন। তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি দিয়ে, জিয়ার নামে বিমানবন্দর করে জিয়া হত্যার সন্দেহ থেকে নিজেকে আড়াল করতে চেষ্টা করেন। এরপর তৎকালীন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা জনরোষ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এরশাদ ধর্মপ্রাণ জনসাধারণের ধর্মীয় আবেগ ব্যবহার করতে শুরু করেন। অবৈধ ক্ষমতা দখলসহ ইসলামবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে নিজে জড়িয়ে পড়েও এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, মসজিদে বিদ্যুৎ বিল মওকুফ, রবিবারের ছুটি শুক্রবার করে ধর্মপ্রাণ জনগণের আবেগকে ব্যবহার করে ধোঁকা দেন। এই ধোঁকা দেয়ার ধারাবাহিকতা এরশাদ এখনও ছাড়তে পারেননি। তারা বলেন, এরশাদ হেফাজতে ইসলামের চলমান নাস্তিক্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন ও সহযোগিতার কথা বলে সরলমনা তৌহিদী জনতার বিশ্বাস অর্জনের প্রয়াস চালান। অথচ ক্ষমতা ও অর্থলোভী এরশাদ তার এই মিথ্যা খোলস শেষ পর্যন্ত ঢেকে রাখতে পারলেন না। জনগণের সামনে এরশাদের আসল রূপ এখন পরিষ্কার।

দিল্লির বস্তাভরা টাকা নিয়ে এরশাদ এখন রাম ও বামের এজেন্টের ভূমিকায় নেমেছেন। নাস্তিক-মুরতাদ নির্মূল কমিটির নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জনগণের বিশ্বাসভঙ্গের দাঁতভাঙা জবাব এরশাদকে ভোগ করতেই হবে। এরশাদের নিজের স্বীকারোক্তি মতেই জীবনের সায়াহ্নে এসে তাকে জনগণের থুতু খেতে হবে। ধর্মীয় ভাবধারা ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কথা বলে জাতীয় পার্টির নেতারা এখন যেভাবে নাস্তিক্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে কাজ শুরু করেছেন, তাতে গণধিক্কারসহ স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকার জনগণ তাদেরকে বিতাড়িত করবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন নাস্তিক মুরতাদ নির্মূল কমিটির চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মহাসচিব মাওলানা মুনির আহমদ, কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট সাদেক উল্লাহ, মাওলানা তৌহিদুল আনোয়ার, এম. আহসান উল্লাহ, মাওলানা গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক রেজাউল করীম, এডভোকেট নেজাম উদ্দীন, ইবরাহীম শিকদার, জাবের হোসাইন হামদানী, মাওলানা আলমগীর, মাওলানা হাবীবুল আনোয়ার, মাওলানা আব্দুস সবুর, মাওলানা শাহাদাত হোসাইন, মাওলানা ওসমান সাঈদী, অধ্যাপক খোরশেদ আলম, মাওলানা বশির উদ্দীন, লায়ন নাঈমুল হক প্রমুখ।