স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুর: গোপালগঞ্জের পর আওয়ামী লীগের ‘দ্বিতীয় দুর্গ’ হিসেবে খ্যাত গাজীপুর জেলায় পাঁচ পাঁচজন দলীয় সংসদ সদস্য ও একজন প্রতিমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয়ের কারণ দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
জেলার মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী হতে না পারায় প্রতিহিংসার বলি হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান। ক্রমান্বয়ে ওই কোন্দল স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুর জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি রয়েছেন। মহাজোট সরকারের ক্ষমতার শুরুতে গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের এমপি তানজিম আহমদ সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় জেলার এমপিদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয়।
পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে সোহেল তাজের পদত্যাগের পর অন্য চারজন এমপি মন্ত্রী হওয়ার জন্য লবিং শুরু করেন। কিন্তু কেউ মন্ত্রী হতে পারেননি। শেষ সময়ে বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থেকে স্পিকার নির্বাচিত হওয়ায় ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হতে গাজীপুরের দুই নারী সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ও মেহের আফরোজ চুমকি তদবির শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন জেলার অন্য এমপিরা।
অবশেষে ২ জুন গাজীপুর-৫ আসনের এমপি মেহের আফরোজ চুমকি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর গাজীপুর-১, ২, ৩ ও ৪ আসনের এমপিরা মেহের আফরোজ চুমকির প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠেন। এমনকি চুমকি প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগ কোনো সংবর্ধনা পর্যন্ত দেয়নি।
এছাড়া আজমত উল্লা খান জিসিসির মেয়র হলে প্রতিমন্ত্রীর সমমর্যাদা পাবেন। মূলত এসব কারণেই জিসিসি নির্বাচনে দল ও দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি ক্ষোভ থেকেই সব এমপি একযোগে কাজ করেননি বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, জিসিসি নির্বাচনে গাজীপুর-১ আসনের এমপি আ ক ম মোজাম্মেল হক ও গাজীপুর-২ আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেল কাজ করলেও তাদের সঙ্গে সার্বিকভাবে যোগ দেননি গাজীপুর-৩ আসনের এমপি অ্যাড. রহমত আলী ও গাজীপুর-৪ আসনের এমপি সিমিন হোসেন রিমি। তবে মিডিয়ায় সব এমপি কাজ করছেন না মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হলে সিমিন হোসেন রিমি একদিন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আসেন। রহমত আলী বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণা চালালেও জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে আসেননি।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রহমত আলী এমপিকে জেলা আওয়ামী লীগ গত সাড়ে চার বছরে একবারের জন্যেও ডাকেনি।
এদিকে, বুধবার প্রতিমন্ত্রী হওয়ার ৩৭ দিন পর মেহের আফরোজ চুমকি প্রথমবারের মতো গাজীপুর জেলা শহরে এলেও তার সঙ্গে ছিলেন না কোনো এমপি বা সিনিয়র কোনো নেতা।
এমনকি চুমকি গাজীপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেও তাতে যোগ দেননি কোনো এমপি বা নেতা। অংশ নেননি সাংবাদিকদের বড় একটি অংশও।
গাজীপুর জেলা বা কোনো উপজেলা আওয়ামী লীগ কেন আপনাকে কোনো সংবর্ধনা দেয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে চুমকি বলেন, আমি কোনো সংবর্ধনার অনুমতি দেইনি। তবে ১৩ জুলাই কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। আমি ওই সংবর্ধনায় সম্মতি দিয়েছি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জিসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে কেন ভরাডুবি হয়েছে তার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে আসল রহস্য। গাজীপুর জেলায় মন্ত্রী হতে ব্যর্থ হওয়া থেকে সৃষ্ট ক্ষোভের বলি হয়েছেন আজমত উল্লা খান।