স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। সরকারের সব পদক্ষেপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এর দাম শতকের ঘর ছুঁয়েছে।
নানা অজুহাতে বেশ কিছুদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের বাজার। ১৫ দিন আগে প্রতি কেজির দাম ছিল ৫০-৫৫ টাকা। আর এক সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৬৫-৭৫ টাকা। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে তা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়।
বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজের দাম ৯০-৯২ টাকা।
সরকারি হিসাবেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। টিসিবির তালিকায় দেখা যায়, পরপর তিনদিন দাম বেড়ে বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি। মঙ্গলবার দাম ছিল ৭৫-৮০ টাকা। বুধবার ৮০-৮৫ টাকা। সংস্থার হিসাবে বৃহস্পতিবার দেশভেদে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা।
রায়সাহেব বাজারে বাজার করতে আসা গৃহিণী আসমা জানান, পরশু প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ৮৫ টাকা করে। দাম চড়া বলে মাত্র আধাকেজি কিনেছেন। কিন্তু এখন কিনতে এসে দেখেন একশ টাকা কেজি। এভাবে দাম বাড়লে তো পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়েই দিতে হবে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে দাম বাড়ায় তারাও বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। এতে তাদের কোনো হাত নেই। বরং তাদের ক্ষতি হয়েছে। আগে যারা কয়েক কেজি পেঁয়াজ কিনতেন, এখন দাম বাড়ায় তারা এক পোয়া, আধাকেজি কিনছেন। এতে বিক্রি কম হওয়ায় লাভও কম হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের আড়তে গিয়েও দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকায় ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। বাজারগুলোতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮২-৮৫ টাকায়। চীন থেকে আসা পেঁয়াজ ৬০-৬২ টাকা, পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা এবং মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮২ টাকা।
শ্যামবাজারের আড়ত মেসার্স বায়েজিদ ট্রেডিংয়ের প্রবীর রায় বলেন, মূলত বাজারে মজুদ কম থাকায় যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তাতেই দাম বাড়ছে। কারণ চাহিদার তুলনায় তেমন আমদানি হচ্ছে না। তাছাড়া সামনে কোরবানির ঈদের কারণে চাহিদা অনেক বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় আড়তে পেঁয়াজ আসছে না। এতে অনেক সময় দেখা যায় ট্রাক থেকে নামানোর আগেই পেঁয়াজ কিনে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আড়তে দেশি পেঁয়াজ ৯২-৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে হয়তো একশ’ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করেছে। কিন্তু চাহিদা বেশি থাকায় বিভিন্ন জেলার পাইকারি হাটগুলোতে মণ ৩৮০০ টাকায় পৌঁছেছে। পুরো মৌসুম শুরু হলে দাম কমে আসবে।
এ বিষয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের পরিচালক মো. রমজান আলী বলেন, টিসিবি সাধ্যমতো বাজার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। প্রতিদিন ৩০ ট্রাক পেঁয়াজ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন। বাজারে যেখানে ১০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, টিসিবি সেখানে প্রতি কেজি বিক্রি করছে ৫৫ টাকায়।
তবে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, টিসিবির মজুদ সীমিত থাকায় ডিলারদের মাঝে কম দামে পেঁয়াজ দেয়া যাচ্ছে না। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তবে দাম কমাতে নতুন নতুন এলসি খোলা হচ্ছে। ঈদের পর ২০ অক্টোবর পেঁয়াজ আমদানির জন্য নতুন টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে। আশা করেন এতে কিছুটা সফলতা আসবে।
জানা গেছে, দেশে বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ১৩ লাখ টন। বাকি ৭ লাখ টন আমদানি করে মেটানো হয়। যা বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে। আর এ সুযোগে প্রায়ই বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করে ফায়দা লুফে নেন ব্যবসায়ীরা।
এরপর এ বছর ভারতে দাম বাড়ায় দু-তিন মাস থেকে অস্থির রয়েছে পেঁয়াজের বাজার। বিকল্প হিসেবে সরকার মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ও আমদানির মাধ্যমে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে ভর্তুকি দিয়ে তা কম দামে টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে বিক্রির উদ্যোগ নেয়।