শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা নদী এখন মৃতপ্রায়

এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা নদী এখন মৃতপ্রায়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ তিস্তা যেন এখন আর কোনো নদী নয়, একটি মরা খাল। ভারতের গজলডোবার প্রবেশমুখে ও লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারাজ নির্মাণ করে এ নদীর দুর্বার গতি মানুষ রোধ করে দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার স্রোত ঘুরিয়ে দিয়ে তার বুক থেকে তুলে নেয়া হয়েছে পানি। ফলে মরে গেছে তিস্তা। এ নদীর পাড়ে দাঁড়ালে এখন শোনা যায় ীণকায় তিস্তার দীর্ঘশ্বাস। তিস্তার বুকজুড়ে শুধুই ধু-ধু বালুচর।

তিস্তার নাব্য এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে চলতি রবি মওসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সেচকার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই পানি কমছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র মতে, তিস্তার পানিপ্রবাহ এযাবৎকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে যেখানে প্রয়োজন চার হাজার কিউসেক পানি, সেখানে ভরা বর্ষায় ব্যারাজ এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র আড়াই হাজার কিউসেক। পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত পানির অভাবে তিস্তা ব্যারাজের সেচকার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। শুক্রবার তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানির পরিমাণ ছিল মাত্র ২০০ কিউসেক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যারাজে প্রকৃতপে পানির প্রয়োজন প্রায় ২০ হাজার কিউসেক। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কর্তব্যরত ডালিয়া পওর বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাইনউদ্দিন মণ্ডল জানান, তিস্তা ব্যারাজের পানি দিয়ে আসন্ন বোরো আবাদে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ৪৮ হাজার হেক্টরে সেচ দেয়ার ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের এক জরিপে জানা যায়, তিস্তায় সাকুল্যে পানি পাওয়া যায় ১ অক্টোবর চার হাজার ৮৮৪, ৪ অক্টোবর চার হাজার ৩০৫ এবং সর্বশেষ ১১ অক্টোবর ব্যারাজের মূল গেটের পানিপ্রবাহ ছিল মাত্র এক হাজার ৮০০ কিউসেক; যা দিয়ে তিস্তা ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের সেচকার্যক্রম চালানো কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া পওর বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাইনউদ্দিন মণ্ডল আরো জানান, পর্যাপ্ত পানির অভাবে তিস্তা ব্যারাজের সেচকার্যক্রম কোনোভাবেই চালু করা সম্ভব নয়।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভরা বর্ষায় ব্যারাজ এলাকায় যেখানে পানি থাকার কথা ৩০ হাজার কিউসেক, সেখানে অক্টোবরেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে ব্যারাজ এলাকা। গতকাল তিস্তার দোয়ানি পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল মাত্র ২০০ কিউসেকের মতো। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের সেচকার্যক্রম চালাতে তিস্তায় পানির প্রয়োজন হবে শুষ্ক মওসুুমে প্রায় ২০ হাজার কিউসেক। কারণ দ্বিতীয় পর্যায়ের সেচ ক্যানেল বগুড়া পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। এ জন্য তিনটি ইউনিটে ভাগ করে এর কাজ চলছে। প্রথম ইউনিটের কাজ চলছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হবে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ও বিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত। তৃতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হবে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ হয়ে বগুড়ার ধুনট পর্যন্ত। কৃষি বিভাগ সূত্র মতে, আসন্ন মওসুমে রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯১০ হেক্টরে বোরো ধান আবাদের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদে বিদ্যুৎ, ডিজেল ও পা-চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করা হবে তিন লাখ ৭০ হাজার ৭৬১টি। এর মধ্যে রয়েছে ডিজেলচালিত গভীর নলকূপ রয়েছে ১৪৯টি, অগভীর নলকূপ দুই লাখ ৮৫ হাজার ৭০৪টি, পাওয়ার পাম্প ৮৪৩টি ও বিদ্যুৎচালিত ৫৬ হাজার ৩৮২টি এবং ২৭ হাজার ৬৮৩টি পা-চালিত।