কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
খুলনার কয়রায় ক্যান্সার ও স্ট্রোকজনিত কারণে মৃত্যুর একযুগ পর একজন জামায়াত কর্মীর “হত্যা”র অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং জামায়াত ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এ মামলা করা হয়েছে। জামায়াত ইসলাম জানিয়েছে, এটি দলীয় সিদ্ধান্ত নয়; সংগঠনের বাইরে একটি বিশেষ গোষ্ঠী বাদীকে প্রভাবিত করে এ মামলা করিয়েছে। মামলায় নিরীহ ব্যক্তিদের আসামি করায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। কয়রা প্রেসক্লাব এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের সাবেক নেতারাও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
বাদী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ আসামিকে বাদী চেনেন না। এমনকি মামলার আগে তিনি জানতেনও না কারা আসামি হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ এক নেতা পূর্ব শত্রুতার জেরে মামলার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন। এতে নিরীহ মানুষের ওপর হয়রানি নেমে এসেছে এবং জামায়াতের প্রতি সাধারণ মানুষের ইতিবাচক ধারণা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কয়রায় জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়। সে সময় আওয়ামী লীগ কর্মীদের গুলিতে ২৯ জন আহত হন, এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জামায়াত কর্মী জাহিদুল ইসলাম।
একযুগ পর ২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল, নিহত জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ছবিরন নেছা কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। এতে সাবেক দুই এমপি, সাত আইনজীবী, ছয় সাংবাদিক, চার শিক্ষকসহ ১১৩ জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্ত ছাড়াই নথিভুক্ত করতে কয়রা থানাকে নির্দেশ দেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু রেজিস্টারে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই জাহিদুল ইসলামের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ক্যান্সার ও স্ট্রোক উল্লেখ রয়েছে।
ছবিরন নেছা বলেন, “আমি কারা আসামি জানি না, শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। মামলার কাগজপত্রও আমাকে পড়তে দেওয়া হয়নি। সংবাদ সম্মেলন, মামলার আবেদন সবই অন্যরা করেছে। আমি চাই দোষীরা শাস্তি পাক, তবে নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।”জাহিদুলের আত্মীয় শিক্ষক মো. বাবুল আক্তার বলেন, “ছবিরন আমার বোন হয়। মামলার ব্যাপারে তাকে দলীয়ভাবে নেয়া হয়েছিল। আমরা চাই কেউ যেন অন্যায়ভাবে মামলায় জড়ানো না হয়।”
খুলনা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা এমরান হুসাইন জানান, মামলাটি তাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয় এবং তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কেউ দলীয়ভাবে জড়িত কিনা।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “আদালত মামলাটি গ্রহণ করলেও বাদী আসামিদের চেনেন না। সাংবাদিক, আইনজীবী ও শিক্ষকসহ নিরীহ মানুষদের হয়রানির শিকার করা হয়েছে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রা উপজেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে খুলনা জেলা আহ্বায়ক তাসনিম আহমেদ বলেন, “কয়রার কমিটি নিয়ে আমরা বহু অভিযোগ পেয়েছি। কমিটি বাতিল করে নতুনভাবে গঠন করা হবে।”