শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন > আ’লীগের টার্গেট ক্ষমতা বিএনপির ভোটব্যাংক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন > আ’লীগের টার্গেট ক্ষমতা বিএনপির ভোটব্যাংক

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

ক্ষমতাসীনদের টার্গেট ফের ক্ষমতা। বিএনপিকে নানা কৌশলে কোণঠাসা করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কথা ভাবছে দলটি। ফের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে সব ধরনের চেষ্টা চালাবে তারা। ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন নেতাকর্মীরা।

দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। আগামী নির্বাচনে শক্ত লড়াই হবে- নেতাদের কাছে এমন বার্তাও দেয়া হয়েছে। দল গোছানোর পাশাপাশি বিএনপির সমালোচনাসহ সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের আগে তা আরও জোরদার করা হবে।

অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলে, তা যার অধীনেই হোক, এতে অংশ নিতে চায় বিএনপি। তাই সরকারকে বিভিন্নভাবে চাপে রেখে কীভাবে ন্যূনতম একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়, সেদিকেই নজর দলটির।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের জয় সুনিশ্চিত। কারণ, তাদের মূল ভরসার জায়গা দলটির নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক। নানাভাবে দল বিপর্যস্ত হলেও সারা দেশে ধানের শীষের সমর্থক কমেনি। এর সঙ্গে যারা আওয়ামী লীগ ও সরকারের কর্মকাণ্ড পছন্দ করেন না- এ ধরনের ‘নেগেটিভ’ ভোটও তাদের পক্ষেই যাবে। তাই ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন, এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে চান তারা।

সে লক্ষ্যেই সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিসহ নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা। বিএনপির জনসমর্থনের বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যেও ফুটে উঠেছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে কাজ করছি। এ লক্ষ্যে পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে। পুরো শক্তি নিয়েই আগামীতে নির্বাচনী মাঠে নামব। সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে দল গোছানো হচ্ছে। মান-অভিমান দূর করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন এলাকায় সফরে যাচ্ছেন। তৃণমূলে যেসব সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নানা বাধা উপেক্ষা করে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। দেশে কোনো বিদ্যুতের সংকট নেই। সফলতার সঙ্গে জঙ্গিবাদ সমস্যা মোকাবেলা করা হয়েছে। দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মান বেড়েছে। এসবের ওপর ভিত্তি করেই আমরা পরবর্তী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের ওপর জনগণ ফের আস্থা রাখবে বলে আশা করি।

এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সরকারের নানা ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে বিএনপি যেসব অভিযোগ করছে তা জনগণ বিশ্বাস করে না। জনগণ বিএনপিকে কেন ভোট দেবে? যারা দেশে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করেছে, মানুষ মেরে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করেছে তাদের জনগণ আগামী নির্বাচনেও প্রত্যাখ্যান করবে। আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা ব্যক্ত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সারা দেশে বিএনপির বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে। সরকারের নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, গুম-খুন ও স্বৈরাচারী আচরণের কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তা অতীতের চেয়ে আরও বেড়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের চরম ভরাডুবি হবে। ৫০-৬০টি আসন পাবে কিনা সন্দেহ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন হতে হবে, যাতে আমরা অংশ নিতে পারি। সেরকম একটা নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুলভাবে বিজয়ী হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার এমনিতেই নানা চাপে আছে। ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে, সেই ভয়ে ক্ষমতাসীনরা চাপে আছে। তাদের আচরণেও তাই মনে হয়। তাই জনগণের রায়কে তোয়াক্কা না করে যেনতেনভাবে তারা আবারও ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে। সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, সবার অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। আশা করি, ক্ষমতাসীনরা এটা ভালো করে উপলব্ধি করবেন।

হ্যাটট্রিক করতে চায় আওয়ামী লীগ : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে হ্যাটট্রিক করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে- এমনটা ধরে নিয়েই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা একাধিক বৈঠকে নেতাদের মাঠপর্যায়ে গিয়ে নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন। ভোটারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে সংসদ সদস্যদের নিয়মিত এলাকায় যেতে বলেন। পাশাপাশি নানা কারণে বিতর্কিত সংসদ সদস্যদের ঢাকায় ডেকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে।

প্রতিটি আসনে শক্ত লড়াই হবে, তা ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেই ফুটে ওঠছে। বিএনপির জনসমর্থন আছে এবং ভোটের রাজনীতিতে তাদের অবহেলা করা যাবে না- নেতাকর্মীদের এমন বার্তাও দিচ্ছেন তিনি। তাই প্রতিটি আসনেই জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার লক্ষ্যে নানা সংস্থা দিয়ে মাঠে জরিপ চালানো হচ্ছে। নিজ দলের পাশাপাশি অন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সবদিক বিবেচনা করেই দেয়া হবে প্রার্থী। জেতার লক্ষ্য নিয়ে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের সম্ভাব্য তালিকা করা হচ্ছে।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন্দল নিরসনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এরই মধ্যে সফর করেছেন ওবায়দুল কাদের। বিরোধপূর্ণ এলাকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছেন। কোন্দল নিরসনে কিছুটা সফলও হয়েছেন। দলকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে দ্রুতই তৃণমূলে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে তারা জেলা সফরে বের হচ্ছেন। কোন্দল নিরসনের পাশাপাশি সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরছেন নেতারা। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন- এ ব্যাপারে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকে আস্থায় আনারও পরিকল্পনা করা হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় ও উপনির্বাচনের দিকে নজর দেবে দলটি। এসব নির্বাচনে দলীয় দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা হবে। নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, সেদিকে নজর দেয়া হবে। বর্তমান ইসির অধীনে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হলে সেটি সরকারের ওপরই পড়বে। তাই নির্বাচন কমিশনকে যতদূর সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা করে এসব নির্বাচনে জয় চান তারা। এতে কমিশন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক এড়ানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি দলের জনপ্রিয়তার বিষয়টিও যাচাই হবে।

দলটির নেতারা মনে করেন, জ্বালাও-পোড়াওসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আওয়ামী লীগ সরকার ভালোভাবেই দেশ চালাচ্ছে।

জঙ্গিবাদের মতো ভয়াবহ সংকট সমাধানে সফল হয়েছে তারা। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের পরও স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবে রূপ নেয়ার পথে। উন্নয়নের দিক বিবেচনা করে জনগণ পুনরায় আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে বলে বিশ্বাস তাদের।

তারা বলেন, সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতার বিষয়টি ভোটারদের কাছে তুলে ধরা হবে। আবার ক্ষমতায় এলে ব্যর্থতার ক্ষেত্রগুলো অগ্রাধিকার দেয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতিও থাকবে। যাতে ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা অব্যাহত রাখেন।

ভোটব্যাংক ও নেগেটিভ ভোটই মূল ভরসা বিএনপির : বর্তমান বাস্তবতায় আগামী নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া বিএনপির কোনো বিকল্প নেই। পরবর্তী নির্বাচন বর্জন করলে দল হিসেবে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। তাই এমন ঝুঁিক না নিয়ে নির্বাচনের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে দলটি। সরকারকে নানা কৌশলে চাপে রেখে ন্যূনতম অবাধ, সুষ্ঠু এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনই দলটির মূল লক্ষ্য। বিএনপি নেতারা মনে করেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে শেষ মুহূর্তে একটি সমাধানে আসা সম্ভব হবে। সমঝোতার ভিত্তিতে যার অধীনেই নির্বাচন হোক, তাতে যেন সূক্ষ্ম কোনো কারচুপির সুযোগ না থাকে। ‘বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট’-সরকার যাতে এমন একটা নির্বাচন করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারকে চাপে রাখার পাশাপাশি প্রভাবশালী দেশের কূটনৈতিক এবং দেশের সুশীল সমাজকে আস্থায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে তারাও পরোক্ষভাবে সরকারকে চাপ দেন। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কূটনীতিকদের সঙ্গে পরবর্তী নির্বাচন ইস্যুতে এখন থেকেই আলোচনা শুরু করা হয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ইতিবাচক- এমন একটা বার্তা কূটনীতিকদের দিতে চান তারা। এর অংশ হিসেবে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে যতটা অবাধ করা যায়, সেদিকেই দৃষ্টি বিএনপির। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করাই তাদের লক্ষ্য। দুই বছর ধরেই ইতিবাচক রাজনীতি শুরু করেছে দলটি। সংঘাত-সহিংসতা এড়িয়ে সমঝোতাকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সভা-সমাবেশ এমনকি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সরকার বাধা দিলেও পাল্টা কর্মসূচি দেয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) যাতে ন্যূনতম নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে, সেই উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। দলটির নেতারা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইসির ভূমিকার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে। ইসি সরকারের পক্ষে সরাসরি কাজ করবে না-এমন একটা বার্তা ভোটারদের মাঝে পৌঁছে দিতে পারলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। তাই ইসিকে চাপে রেখে কীভাবে তাদের দিয়ে এমন বার্তা দেয়া যায় সেই চেষ্টাই চালানো হবে। এমন কৌশলের অংশ হিসেবেই নতুন ইসিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেনি তারা। ইসিকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে তাদের চাপে রেখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করার পরিকল্পনা তাদের। এরই অংশ হিসেবে বর্তমান ইসির অধীনে আগামীতে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে দলটির। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রশাসন আওয়ামী লীগের পক্ষে যতটা কম কাজ করে, সেদিকেও লক্ষ্য রেখে নেয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। যুগান্তর