স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পথে না গেলে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের বহু সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিতে পারে৷ ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, বর্হিবিশ্বের পাশাপাশি দেশের মধ্যেও সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই বিশ্লেষকের মতে, নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয়ই এই বিষয়গুলো অনুধাবন করবেন৷ জিএসপি সুবিধা থেকে শুরু করে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশে অংশগ্রহণ হুমকির মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তার৷
অধ্যাপক আহমেদের মতে, আগের সময়গুলোতে দেখা গেছে যে বিদেশী কূটনীতিকরা পেছনে থেকে কাজ করেছেন৷ কিন্তু এবার সরাসরি তারা বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন৷ তাই এবারের হস্তক্ষেপ আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে বলেই তার আশঙ্কা৷
তিনি বলেন, এর আগে কখনো চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা বলেনি, কিন্তু এবার তারাও সরাসরি কথা বলছে৷ আর ভারত-আমেরিকার মতো দেশগুলো তো আছেই৷ এমনকি ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রধানরাও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন৷ তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস এত সব আলোচনার মধ্যে আমাদের সরকার ভুল করবে না৷”
তারপরও যদি আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচনের দিকে যায়, তাহলে বুঝতে হবে তারা রাজনীতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে৷ যা শুভ পরিণতি বয়ে আনবে না৷”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আরেকজন অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন মনে করেন, সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাদের অবস্থানে অনড় থাকলে অগণতান্ত্রিক তৃতীয় শক্তির উত্থানের সম্ভাবনাই বেশি৷ তাই রাজনীতিবিদদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যহত থাকবে কিনা৷
তিনি বলেন, সব সময় দেখা গেছে বিরোধী দলে যারা থাকেন তারা কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন৷ এটা ঠিক নয়৷ তাই নিজেদের সমস্যা নিজেদের সমাধান করার ওপরও গুরুত্ব দেন এই বিশ্লেষক৷
প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এই দুই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এ সব মন্তব্য করেন৷
ওদিকে, বাংলাদেশের সব দল ও ব্যক্তিকে সহিষ্ণু আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা (এমইপি)৷ বিশেষ করে নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালে ও নির্বাচনোত্তর সময়ে সহিষ্ণু আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷ বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ে পাস হওয়া এক প্রস্তাবে এ কথা বলা হয়েছে৷ মূলত বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আস্থাশীল ও নিরপেক্ষ অন্তবর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এই প্রস্তাব ওঠে৷ পাস হওয়া প্রস্তাবে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের উচিত আগামী সাধারণ নির্বাচন স্বচ্ছভাবে আয়োজন ও দেখভাল করা৷ এছাড়া নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানান এমইপি-রা৷
এর আগে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার ও বিরোধী দলের অনড় অবস্থানের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপ-কমিটি৷ বুধবারও ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থার বিষয়টি প্রাধান্য পায়৷ প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইন টারময়েল: এ নেশন অন দ্য ব্রিঙ্ক?’ শীর্ষক এই শুনানিতে স্টিভ শ্যাবট তার অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ওই সফরের সময় বিরোধী দল বিএনপির ডাকে সহিংস হরতাল চলছিল৷ সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে বৈঠকে অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছেন৷ শ্যাবট বলেন, তাদের দু’জনকেই নিজেদের অবস্থানে অনড় মনে হয়েছে৷
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেয়ার পর বলেছেন, ইন্দো-প্যাসেফিক অর্থনৈতিক করিডর থেকে বাংলাদেশের ব্যাপক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ অতীতের বিরোধ ভুলে আগামী মাসগুলোতে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারলে এ সম্ভাবনাকে বাংলাদেশ কাজে লাগাতে সক্ষম হতে পারে৷ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওই অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও উপস্থিত ছিলেন৷ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে থেকেই এ তথ্য জানা গেছে৷