শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > একই দিনে পরীক্ষা ॥ সমন্বয়হীনতার ‘বলি’ লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী

একই দিনে পরীক্ষা ॥ সমন্বয়হীনতার ‘বলি’ লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: সরকারি কর্মকমিশনসহ (পিএসসি) সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষার সূচি নির্ধারণে সমন্বয়হীনতার কারণে বিড়ম্বনায় পড়ছেন লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থী।

একই দিন ও সময়ে পরীক্ষা পড়ায় ভোগান্তির শিকার চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা বারবার অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না।

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, একই দিন ও সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে অর্থ খরচ করে আবেদন করেও একটির বেশি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না তারা। এতে করে পছন্দের চাকরিটাও ভাগ্যে জুটছে না।

পরীক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজেদের দায়িত্বশীল হয়ে সূচি নির্ধারণ করতে হবে।

তবে চাকরির পরীক্ষাগুলো পৃথক সময়ে অনুষ্ঠানে সমন্বয়ের জন্য সরকার এসব কর্তৃপক্ষের ওপর চাপও প্রয়োগ করছে না।

সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা গেছে, বিসিএস ছাড়াও এনটিআরসিএ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক এবং সরকারের কিছু অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার সূচি পড়েছে একই দিন।

একই দিনেই পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ও বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধন পরীক্ষা, সমবায় অধিদপ্তরের সহকারী পরিদর্শক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা।

আগামী ২৮ আগস্ট ১৭ জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবে এক লাখ ৫০ হাজার ৭৬৫ জন প্রার্থী। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অধীনে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ২৮ আগস্ট (স্কুল) ও ২৯ আগস্ট (কলেজ)।

২৮ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় স্কুল ও স্কুল-২ পর্যায়ে ৪১ হাজার ২০৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। এ পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হবে না অনেক প্রার্থীর।

গত ৪ আগস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল নিবন্ধন পরীক্ষার সূচি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। দুই পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন পরীক্ষার্থীরা।

২৯ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কলেজ পর্যায়ের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতে অংশ নেবে ৩৪ হাজার ৭৮৬ জন পরীক্ষার্থী। এ দিন ২০১২ সালের মাস্টার্স পরীক্ষাও রয়েছে। একই দিন পরীক্ষা হওয়ায় চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হবে না বেশির ভাগ প্রার্থীর।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণ করে পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। প্রথম দফায় গত ২৭ জুন ৫ জেলায় এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

আগামী ২১ আগস্ট সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার পদে ১৩ হাজার, অগ্রণী ব্যাংকের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অফিসার (ক্যাশ) এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের একটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবে আরও প্রায় ৬০ হাজার প্রার্থী।

একই দিন ও সময়ে বিসিএস’র লিখিত পরীক্ষা এবং মাস্টার্সের পরীক্ষার সূচি নিয়ে সমালোচনার মুখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ৩ সেপ্টেম্বরের ৩০টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর নিয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৫তম বিসিএসের পরীক্ষা শুরু হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বদরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য মাস্টার্সের এক দিনের পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

তবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ও বিকেলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের অফিসার ও অফিসার (ক্যাশ) পদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই এ পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন, যারা কৃষি ব্যাংকের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

খুলনার এক প্রার্থী তরিকুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি ব্যাংকের পরীক্ষার একমাত্র কেন্দ্র ঢাকায়। তাই ঢাকার বাইরের পরীক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। এমনিতেই চাকরির বাজার খারাপ, তার ওপর প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার জন্য সরকারের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন তরিকুলের মতো অনেক চাকরিপ্রার্থীই।

বিসিএসে ২০ হাজার ৩৯১ জন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে এক লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী রয়েছে।

আগামী ২১ ও ২৮ আগস্ট এবং ৪ সেপেটম্বর পর্যন্ত তিন দিনে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় সব মিলে প্রায় পাঁচ লাখ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা এবং চাকরির পরীক্ষা নিয়ে বিড়ম্বনা পোহাতে হবে।

সরকারি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষক নিবন্ধন, সমবায় অধিদপ্তর ও কৃষি ব্যাংকে আবেদনকারী একাধিক প্রার্থী বাংলানিউজকে বলেন, পরীক্ষাগুলো পর্যায়ক্রমে নেওয়ার ব্যবস্থা না করলে একই সময়ে একাধিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সম্ভব না। এতে করে আমাদের যে কোনো একটা সুযোগ নষ্ট হবে, যা মানসিক চাপও সৃষ্টি করছে।

এনটিআরসিএ’র সদস্য ফাতেমা বেগম বাংলানিউজকে জানান, ২৮ আগস্টের পরীক্ষা পেছানোর বিষয়টি নিয়ে তারা আলোচনা করবেন।

সাবির্ক বিষয়ে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষাজীবনের পরীক্ষা এবং নিয়োগ পরীক্ষা প্রার্থীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা গ্রহণে নিয়োগ কর্তৃপক্ষসহ সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

পরীক্ষার্থীদের বিষয়গুলো মাথায় রেখে নিয়োগ পরীক্ষার সূচি নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম