বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৪২৮ জনের তথ্য প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামার ভিত্তিতে তারা এ তথ্য পেয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর পেশা ব্যবসায়ী, ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে আর অতীতে মামলা ছিল ৩৪ দশমিক ৫৭ শতাংশের বিরুদ্ধে। তবে এবার প্রার্থীদের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সংখ্যা বেশি।
সোমবার সকালে রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে সুজন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সুজনের নির্বাহী সদস্য কাজী এবাদুল হক, সহসম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হক, ঢাকা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত ও সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।
একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রার্থীদের হলফনামা যতদ্রুত সম্ভব ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং ভোটারদের মাঝে প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুজনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দিলীপ কুমার সরকার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গত ১৯ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে ১০২টি উপজেলার জন্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন। এ পর্যন্ত চার দফায় সর্বমোট ৩৩৫টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১০২টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১৭টি, তৃতীয় পর্যায়ে ৮৩টি এবং চতুর্থ পর্যায়ে ৯২টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও সীমানা জটিলতার কারণে রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পীরগঞ্জের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি।’
তিনি জানান, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সর্বমোট ১ হাজার ৭২৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন; যার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৫৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৮০ জন। চূড়ান্তভাবে ৯৮টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪৩২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫১৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩২৯ জন অর্থাৎ তিনটি পদে সর্বমোট ১ হাজার ২৭৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১৯ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ৯৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুধু চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ করে সুজন। গত ২৫ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল এবং ৩ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ঘোষিত হলেও নির্বাচন কমিশনে অনুরোধ করেও সব প্রার্থীর তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করে সুজন। তথ্যগুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য লিখিত অনুরোধ করে ফল হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়।
এছাড়া, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলের দিকে ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করা হলেও ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের ৩১টি উপজেলার তথ্য সুজন পায়নি। গতকাল রোববার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি সিলেটের জৈন্তাপুর ও হাটহাজারী উপজেলার তথ্য।
উল্লেখ্য, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ও সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নার পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনের সচিবকে পৃথক পৃথকভাবে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য প্রকাশ ও প্রচার না করার জন্য কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, সে মর্মে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ৯৬টি উপজেলার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ৪২৮ জন প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে বিশ্লেষণে দেখা যায়- ৪২৮ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশই (২২০ জন বা ৫১.৪০%) স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। ৪২৮ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের পেশা (৫১.৬৪% বা ২২১ জন) ব্যবসা। কৃষির সঙ্গে জড়িত ২১.০৩% (৯০ জন)।
মামলাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- ১২২ জনের (২৮.৫০%) বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে, অতীতে মামলা ছিল ১৪৮ জনের (৩৪.৫৭%) বিরুদ্ধে, অতীত ও বর্তমানে উভয় সময়ে মামলা ছিল বা রয়েছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৫৭ জন (১৩.৩১%)। ৪২৮ জন প্রার্থীর মধ্যে বাৎসরিক ২ লাখ টাকা বা তার চেয়ে কম আয় করেন ১৩২ জন (৩০.৮৪%) প্রার্থী। বাৎসরিক ১ কোটি টাকার বেশি আয় করেন ৬ জন (১.৪০%) প্রার্থী। ৬৫ জনের সম্পদ ৫ লাখ টাকার কম।
অনেক প্রার্থীই সম্পদের মূল্য উল্লেখ না করায় আর্থিক মূল্যে সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। অপর দিকে বর্তমান বাজারমূল্য উল্লেখ না করার কারণেও সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি। ৪২৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬২ জন (১৪.৪৮%) ঋণগ্রহীতা। বাংলামেইল২৪ডটকম