আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
ভারত ও কাশ্মীরের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সরব থাকলেও দুটি কারণে চীনের উইঘুর মুসলমানদের নিয়ে তার দেশ নীরব রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, প্রথমত, ভারতে যা ঘটছে, তার সঙ্গে চীনে উইঘুরদের সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তার তুলনা করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, চীন পাকিস্তানের খুবই ভালো বন্ধু।
পাকিস্তানের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে চীন সহায়তা করেছে জানিয়ে সাবেক এই ক্রিকেট তারকা আরও বলেন, ফলে এই বিষয়গুলো চীনের সঙ্গে গোপনে আলোচনা করা হয়, প্রকাশ্যে নয়। কারণ বিষয়গুলো স্পর্শকাতর।
ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস ফোলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, প্রতিবেশী ভারতে এখন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) হিন্দুত্ববাদী ভাবাদর্শের জয়জয়কার।
তিনি বলেন, হংকংয়ে বিক্ষোভের চেয়ে কাশ্মীর ট্র্যাজেডি অনেক বড় ঘটনা হলেও বিশ্ব গণমাধ্যমে তা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেনা।
পশ্চিমাদের কাছে বাণিজ্যিক স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই এমনটা হচ্ছে জানিয়ে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভারত একটি বড় বাজার। তাই কাশ্মীরের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ ও ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি কী ঘটছে, তা নিয়ে পশ্চিমাদের বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হতে দেখা যায় না।
তিনি বলেন, ভারতে সম্প্রতি পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সে দেশের সংখ্যালঘু, বিশেষ করে ২০ কোটি মুসলমানের পুরোপুরি বিপক্ষে হলেও শুধু বাণিজ্যিক কারণে বিশ্ববাসী চুপ রয়েছে।
ক্রিকেটে সাবেক এ বিশ্বকাপজয়ী তারকা বলেন, আরএসএস জার্মানির নাৎসিদের দ্বারা অনুপ্রাণিত। আর নাৎসিদের জন্ম হয়েছিল সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণা থেকে। তেমনিভাবে আরএসএস মতাদর্শও মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুর প্রতি ঘৃণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
গত বছর আগস্টে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে।
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সামরিক সংঘাত পাকিস্তানের জন্য বিপর্যয়কর হবে বলে মন্তব্য করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, কেবল এ কারণেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে তার সরকার।
জার্মানির সম্প্রচার মাধ্যম ডয়চে ভেলে বৃহস্পতিবার তার এই সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। ইমরান খান বলেন, এটি সত্যি যে আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তানের অন্যতম বন্ধুরাষ্ট্র হচ্ছে সৌদি আরব। তারা সবসময়ই সেই অবস্থানে রয়েছে। এর পর ধরেন ইরান। দেশটির সঙ্গে আমরা সবসময় ভালো সম্পর্ক রেখে চলছি।
এসব কারণেই দেশ দুটির মধ্যে কোনো সামরিক সংঘাত হলে তা পাকিস্তানের জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এ ক্রিকেট কিংবদন্তি।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও যাতে অবনতি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ ছাড়া আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী এ দেশটি গত ৪০ বছর ধরে অনেক ভুক্তভোগী হয়েছে। আমরা প্রার্থনা করি যেন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান একটি শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে পারে।
এমন একসময় তিনি এ মন্তব্য করলেন, যখন বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রোন হামলায় ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর ওয়াশিংটন-তেহরান যুদ্ধে কিনারে গিয়ে ঠেকেছিল।