শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > ইসির বড় ধরনের অনিয়মের তথ্য বিএনপির হাতে

ইসির বড় ধরনের অনিয়মের তথ্য বিএনপির হাতে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ নির্বাচন কমিশনের বড় ধরনের অনিয়মের তথ্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপির হাতে। আসন্ন নির্বাচনে যে সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছে তার মধ্যে প্রায় এক কোটি ভোটর ভুয়া রয়েছে। আর রাজনৈতিক বিচেনায় তালিকায় যুক্ত হতে পারেননি প্রায় বিপুলসংখ্যক ভোটার। তালিকায় মহিলা ভোটার সংখ্যা ১৪ লাখ থেকে ৪ লাখ কমেছে। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ নামের একটি এনজিও-র দাবি ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ডের শতকরা ১৫ ভাগ নম্বর ভুল রয়েছে। এতে করে নিরপে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলেও অভিমত নির্বাচন বিশ্লেষকদের।

বিএনপি দলীয় সূত্রমতে, দলটির একটি বিশেষ টিমটি হালনাগাদ ভোটার তালিকা পরীা-নিরীা করে এ অনিয়ম চিহ্নিত করেছে। টিমের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসব অনিয়মের তথ্য-উপাত্য খুব শিগগিরই তুলে ধরা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি অনুষ্ঠানে ভুয়া ভোটারের এই সংখ্যাটি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চলতি ভোটার তালিকায় নির্বাচন হবে না বলেও তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভোটার তালিকায় যথেষ্ট ঘাপলা রয়েছে। দলের চেয়ারপার্সন নিজেও তা উল্লেখ করেছেন। তবে তার আগে আমরা নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গুরুত্ব দিচ্ছি।

সূত্রমতে, ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে যে কারণে তৎকালীন বিরোধী দল (আওয়ামী লীগ) আজকের শতাসীরা নির্বাচন কমিশনের সংস্কার চেয়েছিলো সেই ধনের দাবি নিয়ে নির্দলীয় সরকারের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করবে বিএনপি।

নির্বাচন কমিশনের গত বৃহস্পতিবারে দেয়া তথ্যে জানা যায়, আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ভোটার সংখ্যা নিরূপন করায় সর্বশেষ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখ পযর্ন্ত সারা দেশের ভোটার সংখ্যা ৯ কোটি ১৯ ল ৪৮ হাজার ০২১ জন। কমিশনের দাবি তারা ২০০৭ সাল থেকে নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে আসছে। কমিশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা এস এম আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান। এদিকে ভোটার প্রকল্পের প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ ও ২০০৯ সালের হালনাগাদ তালিকাতে ৮ কোটি প্রায় ১০ লাখ ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মধ্যে দ্বৈত ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৯৮ হাজার ২২০ জন এবং মহিলা ৭৫ হাজার ৪৫০ জন। নতুন যুক্ত হয় প্রায় ৭০ লাখ।

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও গণতন্ত্রের স্বার্থে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। কিন্তু এবার নির্বাচনের মাঠ সমতল না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। দলের হাইকমান্ডের এখন পর্যন্ত এমনই সিদ্ধান্ত রয়েছে। তাই বিএনপি নিরপে ও নির্দলীয় সরকারের বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার পরপরই নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ বা সংস্কার নিয়ে দাবি তুলবে। তার আগে ভোটার তালিকার নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরবে।

সূত্র জানায়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে, সেখানে বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী ভোটার তালিকা থেকে রাজনৈতিক কারণে বাদ পড়েছেন। বাদ পড়া এসব ভোটারেরও তালিকা প্রস্তুত করছে বিএনপি। সে সংখ্যা অর্ধকোটির কাছাকাছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে, তার একটি তালিকা লিপিবদ্ধ করছে বিএনপি। কারণ এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কেন সম্ভব নয় তা প্রমাণসহ যথাসময়ই জাতির সামনে তুলে ধরবে বিএনপি। গত মঙ্গলবার রাতে দলের রংপুর বিভাগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জানান ভোটার তালিকায় ব্যাপক গ-গোল ও অনিয়ম আছে। ২০০৮ সালে যে ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানেও ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে। সেটা নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, ২০০৮ সালের নির্বাচনে কমিশন থেকে দুই ধরনের ভোটার তালিকা সরবরাহ করা হয়েছিল। সেই ভোটার তালিকায় স্বামীর নাম ঠিক থাকলে বাপের নাম ঠিক নেই; আবার বাপের নাম ঠিক থাকলে স্বামীর নামের ঠিক নেই। সব অভিযোগই সময়মতো তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি। এই ভোটার তালিকা দিয়ে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রিজভী আহম্মেদ জানান, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতকৃত ভোটার তালিকায় বিপুল সংখ্যক ভুয়া ভোটার রয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের বরাত দিয়ে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা এই নেতা বলেন, নির্বাচন পর্যালোচনা করে ওই এনজিওটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন ভোটারদের যে আইডি কার্ড দেয়া হয়েছে তার শতকরা ১৫ শতাংশই গরমিল বা ঠিক নেই। তিনি বলেন, ভোটার তালিকায় নারী ভোটার সংখ্যা ১৪ লাখ থেকে ৪ লাখ কমেছে। দেশে এমনকি বিপর্যঘ ঘটলো যে ৪ লাখ নারী হারিয়ে গেলো।

যাচাই-বাছাই টিমের এক সদস্য জানান, তারা জেলা বা থানা পর্যায় থেকে ভোটার তালিকা সংগ্রহ করেছেন। তাতে বিএনপির কোটি ভোটার কোনো না কোনোভাবে ঝামেলা যুক্ত। আওয়ামী লীগ পরিবারের ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে বয়স তারা ভোটার হয়েছেন। উল্টো ১৮ বছর হয়েছে বিএনপি ফ্যামেলির সদস্য তাদের ভোটার করা হয়নি।

সূত্রমতে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি হলেই কমিশনের অনিয়মের চিত্র সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরবেন বিরোধী দল।