শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ইউনাইটেড এয়ার বন্ধ : ৪২ কোটি শেয়ার মালিকের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে

ইউনাইটেড এয়ার বন্ধ : ৪২ কোটি শেয়ার মালিকের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সব ধরনের ফাইট স্থগিতের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ৪২ কোটি ২৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৫০ শেয়ার মালিকের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে মাত্র ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার পরিচালনা পর্ষদের হাতে। বাকি ৭৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ারই সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের শেয়ার সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাঁধে চাপিয়ে কোম্পানির সব ফাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে। এভাবে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকলে স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশন অনুযায়ী কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে চলে যাবে। আর নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ হলে মূল মার্কেট থেকে ছিটকে পড়বে ইউনাইটেড এয়ার। ২০১০ সালে আইপিওতে আসার পর উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কাছে কোম্পানির ৫০ শতাংশ ও অন্যান্যের কাছে বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ার ছিল। কিন্তু কোম্পানির শোচনীয় সময় আসার আগেই উদ্যোক্তারা ৪১ দশমিক ৫৬ শতাংশ শেয়ার বেচে দেন। এখন তাদের হাতে আছে মাত্র ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৯১ দশমিক ৫৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

১০০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে ইউনাইটেড এয়ার ২০১০ সালে আরও ১০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে। এছাড়া ২০১১ সালে রাইট শেয়ার; ২০১০ সালে ৫ শতাংশ, ২০১১ সালে ১০ শতাংশ, ২০১২ সালে ১৫ শতাংশ ও ২০১৩ সালে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানিটি মূলধন বাড়ায়।

ব্যবসা ভালো না হলেও কাগুজে অবস্থা ভালো দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে কোম্পানিটি। নীতিমালা লঙ্ঘন ও ভুল পদ্ধতিতে আয় বাড়িয়ে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়িয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপ। আর দরবৃদ্ধির সুযোগে লাভবান হতে ইনসাইডার ট্রেডিং করেছে কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক ও অন্য উদ্যোক্তারা।

একই সময়ে শেয়ারবাজারের পরিচিত কারসাজিকারীরাও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বড় ধরনের অনিয়ম পেয়েও ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন। কোম্পানিটি দফায় দফায় কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য বাড়িয়েছে।

২০১২ সালেও কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটে। অতি অল্প সময়ে অস্বাভাবিক দ্রুততায় কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়। আলোচ্য বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর মাত্র তিন মাসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৪ টাকা থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ ৩২ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়। পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে তালিকাভুক্তির প্রতিষ্ঠানটি নগদ লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোম্পানির আর্থিক ভিত অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় এমনটি ঘটেছে।

২০১২ সালে বিলম্বিত কর হিসেবে না নিয়ে আয় বাড়িয়ে দেখানোর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে কোম্পানি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিত গত বছরের ১৯ নভেম্বর অনুসন্ধানে নামে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন করে আয় বাড়ানোর মাধ্যমে ইউনাটেড এয়ারওয়েজের শেয়ারের যে দরবৃদ্ধি করা হয়, তার সুযোগ নিয়েছেন কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ১৭-এর (ই) ধারা লঙ্ঘন করে কোম্পানির চেয়ারম্যান তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী পরিচালক খন্দকার তাসলিমা চৌধুরী প্রত্য ও পরোভাবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিপুল পরিমাণ শেয়ার নিজেদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে কেনাবেচা করেন। একই ধারার লঙ্ঘন করে শেয়ারবাজারে পরিচিত কারসাজিকারক সৈয়দ সিরাজ উদ দৌলা, আবু সাদাত মো. সায়েম ও ইয়াকুব আলী খন্দকারও একই সময়ে বিপুল পরিমাণের শেয়ার কেনাবেচা করেন। কিন্তু এর কোনো উল্লেখযোগ্য শাস্তি হয়নি। ফলে বারবার এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।