শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > রাজনীতি > আসনে আসনে দ্বন্দ্বে বিএনপির হাইকমান্ড উদ্বিগ্ন

আসনে আসনে দ্বন্দ্বে বিএনপির হাইকমান্ড উদ্বিগ্ন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম এবং দলের জেলা কমিটির সহসভাপতি রকিবুল করিম পাপ্পু। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। দুই নেতার দাবি, জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন। আলীম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে কাজ করছি। আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি, ছাত্রদলের শীর্ষ পদে ছিলাম। তাই এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। পাপ্পুর কণ্ঠেও অভিন্ন সুর। তিনি বলেন, এলাকার নেতাকর্মীরা তাকে চায়। দলের কার্যক্রমে সবার আগে ছুটে যান, নেতাকর্মীরা তাকে কাছে পান সবসময়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল পটিয়ার সাবেক এমপি। সেখানে এবার নির্বাচন করতে চান অনেকটা নবীন জেলা বিএনপির সহসভাপতি এনামুল হক। এ নিয়ে দুই নেতার সমর্থকদের সংঘর্ষের পর বহিষ্কার হন জুয়েল।

গাজী শাহজাহান জুয়েল আমাদের সময়কে বলেন, যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারে। কিন্তু জনগণের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে। কার অবদান কতটুকু? সে বিষয়টি বিবেচনা করে দল মনোনয়ন দেবে বলে আশা করি। তবে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

এনামুল হক বলেন, পটিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত শাহজাহান জুয়েল। নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। এখন আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে সরিয়ে দিয়ে নিজের পথ পরিষ্কার রাখতে হামলা চালিয়েছিলেন।

এ চিত্র অনেক সংসদীয় আসনে। প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ কারণে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে জোর তদবির-লবিংয়ে নেমেছেন তারা। নির্বাচনী এলাকার আধিপত্য নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও আছে অনেক।
নির্বাচনের দেড় বছর আগে মনোনয়ন নিয়ে সংঘাতের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে দলটির হাইকমান্ডকে। এর কারণ হিসেবে শীর্ষ নেতারা বলছেন, আগে মনোনয়ন নিয়ে এ ধরনের ‘অশুভ’ প্রতিযোগিতা দেখা যায়নি। যে ব্যক্তি কয়েক বছর আগে দলে যোগ দিয়েছেন কিংবা ছাত্রদলের একটি সাধারণ পদে আছেন অথবা ছাত্রত্ব শেষ করেছেন এমন অনেকেই তো আছেন। এমনকি থানা পর্যায়ের অনেক নেতাও মনোনয়ন চান। যাদের মনোনয়ন চাওয়ার যোগ্যতা নেই তারাও এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ ব্যাপারে আমাদের সময়কে বলেন, ‘দলের সব নেতার মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু মনোনয়ন কারা পাবেন তা চূড়ান্ত করবেন দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। তাই মনোনয়ন চাওয়া মানেই মনোনয়ন পাওয়া নয়।’

বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিংবা যে কোনো নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব পার্লামেন্টারি বোর্ড পালন করবে এবং এ ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

অবশ্য, মনোনয়ন চেয়ে এলাকায় কাজ করার চেয়ে ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন দিবসে এলাকায় পোস্টার সাঁটানোয় ব্যস্ত নেতারা। অনেকে আছেন যারা এলাকায় এমপি নির্বাচন করার ইচ্ছে পোষণ করে ফেসবুকে প্রচার চালাচ্ছেন, কিন্তু এলাকায় যান না দীর্ঘদিন।

কুমিল্লায়-৯ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কর্নেল (অব) আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে আবুল কালাম ওরফে চৈতী কালামের মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে। সম্প্রতি সেখানকার কয়েকটি কমিটি আজিমের সঙ্গে আলোচনা না করে গঠন করা হয়েছে অভিযোগ করে পদত্যাগ করেন তিনি।

আবুল কালাম বলেন, আমি দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পদ-পদবির লোভ নেই। দলের আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম। তিনি বলেন, আনোয়ারুল আজিম সংস্কারপন্থি ছিলেন। তবুও দল তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করেছে। কিন্তু দল তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তিনি সুবিধাবাদী। সুবিধার জন্য দল করেন।

এ ব্যাপারে জানতে আনোয়ারুল আজিমের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়া গেছে।

পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপি থেকে বিগত ৪টি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন শাহজাহান খান। বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া বাকি তিন নির্বাচনে পরাজিত হন। ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি হাসান মামুনকে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে মাঠ দখলের লড়াই তো আছে-ই।

হাসান মামুন বলেন, প্রতিটি আন্দোলনে আমার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ছাত্রদলের রাজনীতি করেছি। এলাকার জনগণ সবসময় আমাকে কাছে পায়।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী সদর আসনে জয়নুল আবেদীন ভিপি নির্বাচন করেন। এবার সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী রেহানা আক্তার রানু মনোনয়ন পাবেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিগত দুই নির্বাচনে জয়নুল আবেদীন মাঠে অনুপস্থিত ছিলেন। রানুর নেতৃত্বে সেখানে আন্দোলন হয়। এলাকার আধিপত্য নিয়ে দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে।
নোয়াখালীর সেনবাগে জয়নুল আবদিন ফারুক কয়েকবারের সংসদ সদস্য। নির্বাচনের সময় মনোনয়ন নিয়ে তার সঙ্গে লড়াইয়ে নামেন আরেক নেতা কাজী মফিজ। দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে অনেক।

ময়মনসিংহ-১ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এবং বিএনপি চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা আফজাল এইচ খান মনোনয়ন চান। এ আসনে নতুন মুখ হিসেবে বিজন কান্তি সরকারের নামও আলোচিত হচ্ছে।
নওগাঁ-৩ আসনে সাবেক স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর সঙ্গে বদলগাছী উপজেলা সভাপতি ফজলে হুদা বাবু, নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির কৃষি সম্পাদক শামসুজ্জোহার সঙ্গে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুর রামগতি ও কমলনগরে স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সঙ্গে সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজামের দ্বন্দ্ব চরমে। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপি নেতা হারুনুর রশীদ হারুন এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী পৃথকভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। তিন নেতাই মাঠ দখলের লড়াইয়ে নেমেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ অবশ্য এটিকে দ্বন্দ্ব বলতে রাজি নন। তার দাবি, বড় দলে মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকাটা স্বাভাবিক।

সূত্র : আমাদেরসময়