রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > আসছে অঞ্চলভিত্তিক ঘাত সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল ধান

আসছে অঞ্চলভিত্তিক ঘাত সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল ধান

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে খরা, বন্যা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতার মতো নানা ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। দেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান এসব ঘাত মোকাবেলা করতে পারে সেই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।

অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন ঘাত সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল এবং অতি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনের লক্ষেই এই উদ্যোগ। যাতে করে দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

অঞ্চলভিত্তিক ঘাত সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) একগুচ্ছ কাযর্ক্রম পরিচালনা করবে ১২টি জেলার ১২টি উপজেলায়। যাতে করে প্রকল্প শেষ হওয়ার পরে অন্তত ১০টি আধুনিক ও উন্নত জাতের ঘাত সহিষ্ণু ধানের জাত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা যায়।

ব্রি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ১২টি উপজেলায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। গবেষণার কাজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে স্বল্প পরিসরে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ। পাঁচ বছর মেয়াদী এ উদ্যোগে ১২টি জেলায় সরকারের খরচ করবে ৩০৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

ব্রি সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকা হিসেবে গাজীপুর, রাজশাহী, রংপুর,বরিশাল ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। এছাড়া, গোপালগঞ্জ সদর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সাতক্ষীরা সদর, কুষ্টিয়া সদর, হবিগঞ্জ সদর ও ফেনীর সোনাগাজীও প্রকল্প এলাকায় থাকছে। জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০২০ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

ব্রি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা(ফলিত গবেষণা বিভাগ) ড. মো. আতিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত শীত, জলাবদ্ধতা, খরা ও লবণাক্ততা ধানের জন্য একেকটি ঘাত। এসব অঞ্চলের সঙ্গে খাপ খেতে পারে এমন ধরনের উন্নত ধান জাতের উদ্ভাবন করা হবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় এই মহাউদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ব্রি’র আওতায়।’

ব্রি সূত্র জানায়, ঘাত সহিষ্ণু ফলনশীল ধান জাত উদ্ভাবনের লক্ষে প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান এবং নতুন আঞ্চলিক কার্যালয়সহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গবেষণা সুবিধাদি আধুনিকীকরণ করা হবে। কার্যকর গবেষণা ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের লক্ষে ব্রি’র জনবল দক্ষতা উন্নয়ন করা হবে। সম্প্রসারণ কর্মী ও কৃষকরা প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ এবং প্রদর্শনী নেওয়ার মাধ্যমে ব্রি উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ দ্রুততম সময়ে কৃষক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

একগুচ্ছ কার্যক্রম অঞ্চলভিত্তিক ঘাত সহিষ্ণু ধান জাত উদ্ভাবনেঃ ধান গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির লক্ষে ব্রি উদ্ভাবিত জাতসমূহ মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো হবে। গোপালগঞ্জ এবং সিরাজগঞ্জের দুটি নতুন আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।

নতুন আঞ্চলিক কার্যালয় কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের জন্য আলাদাভাবে ১০ একর করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ধান গবেষণায় ল্যাবরেটরি ও মাঠ পর্যায়ে সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি থাকছে ২৫ জন বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তার জন্য স্বল্প মেয়াদে বিদেশ সফরের ব্যবস্থা।

দেশে উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে ২০ জন দক্ষ বিজ্ঞানী গড়ে তোলাসহ দেশের বাইরে থেকে ১৫ জন বিজ্ঞানী নিয়ে আসা হবে। যাতে করে ঘাত সহিষ্ণু ধান জাত উদ্ভাবনে নানা পদ্ধতি বের করা যায়।

এছাড়া ১ হাজার ১২৫ জন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এবং ৪ হাজার ৩২০ জন মডেল কৃষককে নতুন নতুন প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৫০ জন কর্মকর্তাকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ ধান গবেষণায় নানা সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা হবে।

নানা ধরনের অবকাঠামোগত কাজও করা হবে। এর মধ্যে অন্যতম দুই হাজার বর্গমিটার কেন্দ্রীয় গবেষণাগার নির্মাণ এবং ধান গবেষণার জন্য ৯৬ হাজার ঘন মিটার গবেষণা মাঠ উন্নয়ন।

অফিস, গবেষণা এবং আবাসিক ভবনের উন্নয়নের পাশাপাশি ১৬টি জিপ, ১৩টি পিকআপ, দু্টি মাইক্রোবাস, দুটি মিনিবাস, দুটি বড় বাস এবং ৫৮টি মোটরসাইকেল কেনা হবে।

নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নিতে যাচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ধান বাংলাদেশের জনগণের প্রধান খাদ্য শস্য। প্রায় ৭৫ ভাগ জমিতে ধান চাষ হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত তিন দশকে ধানের উৎপাদন তিনগুণ বেড়ে ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে ৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর প্রায় ১ শতাংশ হারে চাষযোগ্য জমিতে আবাসন হচ্ছে।

অন্যদিকে ২০২০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা ১৫৩ থেকে ১৮৫ মিলিয়নে উন্নীত হবে এবং ২০৫০ সালে ২২২ মিলিয়ন হবে। ক্রমবর্ধান জনগোষ্ঠির খাদ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলয়া অঞ্চলভিত্তিক ঘাত সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল ধান জাতের উদ্ভাবনের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষেই ঘাত সহিষ্ণু ধান উদ্ভাবনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশে বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা ও অধিক বৃষ্টিপাত অঞ্চলে জলবদ্ধতা অন্যতম সমস্যা।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন অঞ্চল ভিত্তিক এলাকা বেড়েই চলেছে। তাই এসব অঞ্চলের কথা মাথাই রেখে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছি। আমাদের টিকে থাকতে হলে বেঁচে থাকতে হলে এই ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। জলবায়ুগত কারণে নানা ধরনের ঘাত আমাদের সামনে আবির্ভাব হচ্ছে। এসব ঘাতের সঙ্গে সহিষ্ণু ধান জাত উদ্ভাবনেই আমাদের ৩০৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক ঘাত সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল ধান জাতের উদ্ভাবন ঘটবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম