শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > আলোচিত সেই চেয়ারম্যান মিরানের বিরুদ্ধে মামলা

আলোচিত সেই চেয়ারম্যান মিরানের বিরুদ্ধে মামলা

শেয়ার করুন

এম. মতিন, চট্টগ্রাম ॥
অবশেষে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান সেই মিরানুল ইসলাম (মিরান) সহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন নির্যাতনের শিকার পারভীন আক্তার।

গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫ টার দিকে বাদীনিসহ তার ২ মেয়ে থানায় হাজির হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আইনী সহায়তা দিচ্ছেন ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস্ কমিশন।

এর আগে এ ঘটনাটি নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত একটি তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী রেকর্ড করেছেন।

মামলার আসামীরা হলেন- হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম (মিরান) (৪৫), উত্তর হারবাং বৃন্দাবনখিলের জিয়াবুল হকের পুত্র নাছির উদ্দিন (২৮), মাহবুবুল হকের পুত্র নজরুল ইসলাম (১৯), এমরান হোসেনের পুত্র জসিম উদ্দিন (৩২) সহ ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদীনি পারভীন আক্তার (৪৫) মামলায় উল্লেখ করেছেন, তারা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা। তার স্বামীর নাম মৃত আবুল কালাম। তারা রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বর্তমানে সপরিবারে পটিয়া উপজেলার শান্তির হাট কুসুমপুরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ওই ভাড়া বাসা থেকে গত ২১ আগস্ট তার ছেলে এমরান, মেয়ে সেলিনা আক্তার (২৮) ও রোজিনা আক্তার (২৫) কে নিয়ে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের শান্তিরহাট থেকে মাইক্রোবাস যোগে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে আসেন। কেরানীহাট থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হায়দারনাশী গ্রামে তার ছোট মেয়ে বেবী আক্তারের শ্বশুর বাড়ীতে যাচ্ছিল। তারা চকরিয়ার উত্তর হারবাং বৃন্দাবনখিল লালব্রিজ এলাকায় পৌঁছলে ২টি মোটর সাইকেল যোগে ৬ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাদের ভাড়া করা সিএনজিকে ধাওয়া করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের বহনকারী সিএনজি চালক ভয় পেয়ে হারবাং স্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে চলতে শুরু করে। পরে তাদের বহনকারী সিএনজিটি দক্ষিণ পহরচাঁদা নির্মাণাধীন রেললাইনে পৌঁছলে মোটরসাইকেল আরোহী ছয়জনসহ আরো বেশ কিছু লোকজন অটোরিক্সাকে আটকে ফেলে।

এ সময় মোটর সাইকেল নিয়ে আসা ব্যক্তিরাসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা তাদেরকে গরু চোর অপবাদ দিয়ে আটকিয়ে ফেলে। তাদের কাছে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা, কানের দুল ও গলার চেইন এবং চারটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর আসামিরা গরু চুরির অপবাদ দিয়ে বাদীনিসহ ২ মেয়ে, ১ ছেলে ও সিএনজি চালককে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর শুরু করে।

এক পর্যায়ে আসামীরা তাদের কোমড়ে রশি দিয়ে বেঁধে সড়ক দিয়ে টেনে টেনে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম অকথ্যা ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে প্রথমে চেয়ার দিয়ে এবং পরে একটি লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। পরে (২১ আগস্ট শুক্রবার) বিকাল ৬ ঘটিকার সময় হারবাং পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দিলে পুলিশ এসে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকে থানায় নিয়ে যায়।

গত সোমবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে এক আদেশে মা ও দুই মেয়েকে জামিন দিয়েছে আদালত। জামিনে মুক্তি পেয়ে পারভিন আক্তার ও তার দুই মেয়ে আজ ২৫ আগস্ট বিকালে চকরিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় ২, ৩ ও ৪ নং আসামি উত্তর হারবাং বৃন্দাবনখিলের জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন (২৮), মাহবুবুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯), এমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২) পুলিশের হাতে আটক হয়ে বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে আটক রয়েছে। তবে প্রধান আসামি হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামকে গ্রেফতারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

মামলা বাদী পারভিন আক্তারের আইনজীবী এডভোকেট ইলিয়াছ আরিফ জানান, এ মামলাটি রুজু হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ চাইলে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘হারবাংয়ে মা-মেয়েসহ ৫ জনকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগী পারভীন আক্তার বাদি হয়ে আজ থানায় একটি এজাহার দেন। ওই এজাহারটি মামলা হিসেবে এন্ট্রি করা হয়েছে। এই মামলায় ইতোমধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে। এই মামলার অন্যতম আসামী চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামকে গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান শুরু হয়েছে।’

ভুক্তভোগীদের আইনী সহায়তা দেয়া ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের সহকারি ডাইরেক্টর মো.শাহ পরাণ বলেন, ‘এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এই ধরনের ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এজন্য আমাদের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এইজন্য আমরা একজন আইনজীবি নিয়োগ দিয়েছি। চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবি অ্যাডভোকেট শহিদুল্লাহ এই মামলাটি পরিচালনা করবেন।’

প্রসঙ্গত গত শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজারের সীমান্ত চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় বয়স্ক মা ও তরুণী মেয়েকে ‘গরুচোর’ আখ্যা দিয়ে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। পরে কোমরে রশি বেঁধে মা-মেয়েকে প্রকাশ্যে সড়কে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। সেখানে চেয়ারম্যান নিজেও তাদের আবার প্রহার করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ২২ আগস্ট শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার ছবি প্রকাশের পর বিষয়টি ভাইরাল হয়। আর এ ঘটনা নিয়ে বেশ ক’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদপত্রে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র উঠছে নিন্দার ঝড়।