আমি স্বামীর অনুমতিতেই পরকীয়া করি, আর মানুষের কাছে….

অনলাইন ডেস্ক ॥
আমি স্বামীর অনুমতিতেই- আমিনুল ইসলাম তপু ওরফে ইমন ও শারমিন নুসরাত প্রভা ওরফে ওয়ালী চৌধুরী। দু’জন স্বামী-স্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বেশ পরিচিতি। সুখী পরিবার হিসেবেই জানেন পরিচিতজনরা। কিন্তু তপুর সঙ্গে একাধিক সুন্দরীর সম্পর্ক। প্রভা শুধু বিষয়টি জানেন, তা নয়। সহযোগিতাও করেন স্বামীর পরকীয়া প্রেমে।

একইভাবে স্ত্রী প্রভাকে সহযোগিতা করেন তপু। এক সময় দু’জনে মিলে ফাঁদ পাতেন এবং ফাঁদে পা দেয়াদের হেনস্তা করেন। আদায় করেন অর্থ। এভাবেই তপু স্ত্রী প্রভার সহযোগিতায় একের পর এক মেয়ের জীবন বিপন্ন করেছেন। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি। এক তরুণীর অভিযোগে তপু এখন কারাগারে। এক্ষেত্রেও তপুকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তার স্ত্রী প্রভা। সুন্দরী প্রভার সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে অনেক প্রভাবশালীর। তাদের মাধ্যমে তদবির করিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে।

তপুকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের আদেশে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এছাড়াও তার মোবাইলফোন ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন তপু। এমনকি গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে বিভিন্ন নারীর নগ্ন ছবি, তাদের সঙ্গে কাটানো অন্তরঙ্গ সময়ের ভিডিও ক্লিপ জব্দ করা হয়েছে। বেরিয়ে এসেছে তপু ও প্রভার প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য। তপুর প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক মেয়ে যেমন সর্বস্ব হারিয়েছেন, তেমনি কেউ কেউ জীবন থেকে পালাতেও চেষ্টা করেছেন। প্রায় ১৪ বছর আগে প্রভার সঙ্গে বিয়ে হয় তপুর। তপু ও প্রভার সংসারে দুটি সন্তানও রয়েছে। তপু এক সময় থাকতেন ফার্মগেটের গ্রীন রোড এলাকায়।

২০১০ সালের দিকে ওই এলাকার একটি মেডিকেল কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন এক তরুণী। তপুর নজর পড়ে ওই সুন্দরী তরুণীর দিকে। ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে সংগ্রহ করেন তার ফোন নম্বর। তাকে আয়ত্তে নিতে স্ত্রী প্রভার সহযোগিতা নেন। প্রভা কল দেন তরুণীর ফোনে। রং নম্বর- বুঝিয়ে কয়েক বাক্যের মধ্যেই কথা শেষ করেন তখন। তারপর আবার কল। নিজেকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্রী পরিচয় দিয়ে প্রভা বারবার কথা বলেন। একটা বন্ধুতার সম্পর্ক গড়ে তোলেন তরুণীর সঙ্গে। এভাবেই নিজ স্বামীর প্রেমিকা জুটিয়ে দেয়ার মিশনে নামেন প্রভা। এ পর্যায়ে প্রভা ওই তরুণীকে জানান, তার এক কাজিন আছে। নাম তপু। একটি টেলিকম কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তপুর কাছে তার ব্যাপারে অনেক গল্প করেছেন। তপু তার সঙ্গে কথা বলতে চায়। যদি সে আগ্রহী হয়। ভদ্রতার খাতিরে ওই তরুণী রাজি হন। ফোনে তরুণীর সঙ্গে কথা হয় তপুর। এরপর থেকে কারণে-অকারণে তরুণীকে ফোন দিতে থাকে।

এক পর্যায়ে তারা কাছাকাছি চলে আসে। দেখা হয় দু’জনের। এভাবেই তপুর সঙ্গে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। দেখা হয় বিভিন্ন স্থানে। পার্কে, বাসায়। ঢাকার বাইরেও ঘুরতে যান তারা। অন্তরঙ্গ সময় কাটান। ছবি ধারণ করেন। এমনকি গোপনে অন্তরঙ্গ সময়ের ভিডিও ধারণ করে তপু। তরুণীকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে গোপনে বিয়েও করেন। কিন্তু কখনো নিজের বাসায় নিয়ে যেতেন না তাকে। এমনকি বাসার ঠিকানা তরুণীকে জানতে দিতেন না তপু। তাছাড়া সময়ে-অসময়ে যখন তখন তরুণীর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন তপু, যা একজন চাকরিজীবীর পক্ষে সাধারণত দুষ্কর। এরকম বিভিন্ন কারণে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় নির্যাতিতা তরুণী অভিযোগ করেছেন, ‘২০১৫ সালের শেষের দিকে আমি বুঝতে পারি ভুয়া নাম ঠিকানা দিয়ে, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে থাকা সত্ত্বেও আমার সঙ্গে প্রতারণামূলক সম্পর্ক করেছে তপু। তাই আমি পড়ালেখা শেষ করে জীবন গঠনের একটি ভালো পরিকল্পনা করি।

তপুর সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করার চিন্তা ভাবনা করি। কিন্তু তপু তখন মরিয়া হয়ে উঠে। আমার জীবনের সব অতীত ইন্টারনেটে প্রকাশ করে দিবে বলে ক্রমাগত ভয় দেখায়। অনলাইনে ড্রপবক্সে সকল পর্ণ ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রেখেছে বলে জানায়। বিভিন্ন ফেক ফেসবুক আইডি থেকে নমুনা ছবি পাঠিয়ে ভয় দেখায়। আমি যদি তার ইচ্ছামতো আমার নুড ছবি না পাঠাই তাহলে সে আমার সব অতীত খারাপ স্মৃতি প্রকাশ করে আমার কারিয়ার নষ্টসহ জীবননাশের হুমকি দেয়।’

প্রতারক তপুকে তখন আর সহ্য করতে পারেন না। তবু বাধ্য হয়েই তার সঙ্গে কথা বলতে হয়। তার আবদার অনসুারে নগ্ন ছবি তোলে হোয়াটস অ্যাপ, ইমু, আই মেসেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাঠাতে হয়। কথা না শুনলে হুমকি একটাই, ভাইরাল করে দেবে। এর মধ্য দিয়েই ভুক্তভোগী তরুণী একটি সরকারি মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাস করেন। একদিকে সম্ভাবনাময় জীবন, অন্যদিকে হুমকি। ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছিল তার বেঁচে থাকা। বাবা ও ভাইয়ের কাছে ফোনে ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে হুমকি দিচ্ছিল তপু। ভাইরালের হুমকি। এক পর্যায়ে তরুণীর ঘনিষ্ঠ ক’জন তার পাশে দাঁড়ান। প্রথমে সাধারণ ডায়েরি, পরে মামলা করা হয় শেরে বাংলানগর থানায়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। গত ১৩ই জুলাই বিকালে মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তপুকে। জব্দ করা হয় নগ্ন ছবি ও ভিডিও। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তপু জানিয়েছে, তার স্ত্রী প্রভার মাধ্যমেই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সূত্রপাত। তারা খুব ভালো বন্ধু। স্বামী-স্ত্রী হলেও পরকীয়া প্রেমের ক্ষেত্রে একে-অন্যকে সহযোগিতা করে তারা।

সূত্র মতে, তপু ও প্রভাবর চ্যাটে প্রায়ই আলোচনা হতো বিভিন্ন তরুণীকে নিয়ে। এমনকি প্রায়ই বিভিন্ন মেয়ের ছবি স্ত্রী প্রভার ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে তাকে ‘ম্যানেজ’ করে দিতে বলতো তপু। আবার কখনো কখনো প্রভা জানাতো, ‘আমি বুইড়াদের সঙ্গে আছি। তুমিতো আমাকে দিয়ে টাকা ইনকাম করাতে চাও শুধু।’ এরকম নানা কথা হয় তাদের মধ্যে।

এ বিষয়ে শারমিন নুসরাত প্রভার কাছে জানতে চাইলে, নিজের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। বলেন, তপু যা করেছে তা আমরা কেউ সমর্থন করি না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু ছবি ও ভিডিও জব্দ করা হয়েছে। আসামি তপুর কাছে আরো ভিডিও ও ছবি রয়েছে বলে নির্যাতিতা জানিয়েছেন। এতে তার স্ত্রী প্রভার সহযোগিতা রয়েছে। গ্রেপ্তার আমিনুল ইসলাম তপু (৩৮) মিরপুরের পল্লবীর বি ব্লকের ১২ নম্বর সেক্টরের সি-১, ট্রাস্ট গার্ডেনের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসলামের ছেলে। সূত্র: জানা অজানা নিউজ

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫