শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > আবার সেই ছাত্রলীগ

আবার সেই ছাত্রলীগ

শেয়ার করুন

বাংলাভূসি২৪ ডেস্ক ॥ আগেরবার জনগণের বিপুল সমর্থনপুষ্ট হয়ে ‘দিনবদলের’ মন্ত্রিসভা নিয়ে যাত্রা শুরুর পর আওয়ামী লীগ সরকার শুরুতেই বিব্রত হয়েছিল ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি, খুনোখুনি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা, প্রতিপক্ষের ওপর বর্বর হামলা- সব ক্ষেত্রেই ছিল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার ২১ দিনের মাথায় সরকারের জন্য প্রথম বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি করল সেই ছাত্রলীগই। রবিবার তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্র হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। নৈশ কোর্স বাতিলের মতো অরাজনৈতিক দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্র হাতে হামলার এ দৃশ্য গণমাধ্যমেও ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আধিপত্য চলছে। নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর হল দখল বা আধিপত্যের জন্য ছাত্রদল বা শিবিরের সঙ্গে নতুন করে সহিংসতায় জড়াতে হচ্ছে না ছাত্রলীগকে। কিন্তু ওই ছাত্রসংগঠনটির নেতা-কর্মীরা নিজেরা নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে খবরের শিরোনাম হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘ছাত্রলীগের যেকোনো কর্মকাণ্ডে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেখানেই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটবে, সাংগঠনিকভাবে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। যারা জড়িত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ফেসবুকে অশ্লীলতা নিয়ে মারামারি : গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসানের এক ‘আপত্তিকর’ স্ট্যাটাসের জের ধরে সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় একজনকে।

গত ২৫ জানুয়ারি শনিবার কবি জসীমউদ্দীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গিয়ে প্যাকেটজাত দুধ হাতে একটি ছবি তুলে ফেসবুকে দেন। ছবিতে একজন মেয়ে বিক্রেতাকেও দেখা যাচ্ছিল পেছন দিকে। ফেসবুকে এ নিয়ে মন্তব্য করা হলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আফরিন নুসরাত প্রতিবাদ জানান। এরপর মেহেদীর অনুসারীরা নুসরাতকে নিয়ে নানা অশ্লীল মন্তব্য করে। ওই ঘটনার বিচার চেয়ে শামসুন নাহার হলের ছাত্রীরা রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করে। এদিকে ঘটনার পরদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক লিটন মাহমুদ আরেকটি স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে। এর জের ধরে তর্ক-বিতর্ক, ধাক্কাধাক্কি এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বারে বোতল ছোড়াছুড়ি : গত বুধবার রাজধানীর শাহবাগের একটি বারে বিল পরিশোধ করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও বার কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সভাপতি মেহেদী হাসান আহত হন। এ খবর শুনে হলের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল ইসলাম দিদার এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় স্কুলবিষয়ক সম্পাদক হাসানুল হক বান্নার নেতৃত্বে শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী ওই বারে হামলা চালায়। এ সময় ছাত্রলীগ ইটপাটকেল ও বার কর্মীরা মদের খালি বোতল নিয়ে মারামারি করে। এতে দুপক্ষের দশজন আহত হয়।

এ ঘটনায় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সভায় এসএম হলের সভাপতি মেহেদী হাসানকে সাময়িক বহিষ্কার, সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক দিদার ও জিয়া হল সভাপতি আবু সালমান প্রধান শাওনকে সতর্ক করা হয়।

শিক্ষককে মারধর : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৩ জানুয়ারি নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মঈনুদ্দীনকে সমাজবিজ্ঞান ভবনের নিচতলায় লাঞ্ছিত করেন ছাত্রলীগ নেতা মামুন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রকাশনা সম্পাদক মামুন পরীক্ষায় ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকায় মাস্টার্সের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এ কারণে ওই শিক্ষককে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় মামুনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

চড় মারা নিয়ে : গত শুক্রবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও উপপরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাভিদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে পাল্টাপাল্টি চপেটাঘাতের ঘটনা ঘটে। সভাপতির অনুসারীরা এ সময় নাভিদকে বেধড়ক মারধর করলে তাঁকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এ ঘটনায় নাভিদসহ চার কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় পাঁচজনকে আটকও করেছে পুলিশ।

২০০৯ সালে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মাথায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিজেদের মধ্যে মারামারিতে নিহত হন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব। প্রায় শেষ দিকে এসে ছাত্রলীগকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত ১৮ ডিসেম্বর দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আট কর্মীর ফাঁসি ও ১৩ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক হত্যা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যার বিচার হয়নি এখনো। নিজেদের মধ্যে অসংখ্য মারামারির ঘটনা, প্রতিপক্ষের ওপর হামলার সময় অস্ত্র প্রদর্শন, টেন্ডারবাজি, শিক্ষকদের ওপর হামলার অসংখ্য ঘটনার বিচার কেউ চাইছেই না। কালের কণ্ঠ