বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > আবারো অনিশ্চয়তায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

আবারো অনিশ্চয়তায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কাটছে না। সঙ্গে যোগ হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) নির্বাচনও। সময়মতো চট্টগ্রামের নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েও নানা আইনি জটিলতা দেখা দিচ্ছে। সীমানা জটিলতার কারণে ডিসিসির ভাগ্যই বরণ করতে হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটিকে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এ সিটির নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগরীর বর্তমান আয়তন ৬০ বর্গমাইলকে দ্বিগুণ করে ১২০ বর্গমাইল করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটের আগমুহূর্তে সীমানাসংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মতো নির্বাচন আটকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।এদিকে কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে ডিসিসি সীমানা জটিলতা নিরসনে বার বার তাগাদা দিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের বিগত মেয়াদে ডিসিসি নির্বাচন করতে না পারায়, এ মেয়াদেও নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন খোদ নির্বাচন কমিশনাররা। ডিসিসি দক্ষিণের একটি ওয়ার্ডের ‘সামান্য’ সীমানা পুনর্র্নিধারণ নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কোনো সাড়া না পাওয়ায় এ শঙ্কা আরও বাড়ছে। আইনি জটিলতায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে আটকে থাকা ডিসিসি নির্বাচন কবে নাগাদ হবে তা বলতে পারছে না কমিশন। এর আগেও কয়েক দফা প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়েছে এ সংস্থাটি। তবে কিছু দিন আগে সরকারের উচ্চ মহলে ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানে তোড়জোড় দেখা গেলেও তা আবার থেমে গেছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, সীমানা পুনর্র্নিধারণে কয়েকবার তাগিদ দিয়েও সরকারের কোনো সাড়া পায়নি। এমনকি চলতি অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের বাজেটেও ডিসিসি নির্বাচনের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় ন্যূনতম সেবা পেতেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। এ ছাড়া ওয়ার্ডের ছোট ছোট রাস্তাগুলো বেহাল। রাস্তার পিচ উঠে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। এমনকি অনেককে সেবা নিতে গিয়ে কর্মকর্তার দেখা না পেয়ে দালালের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে। আবার অনেক অসাধু ব্যক্তি জাল সনদও বিক্রি করছেন। নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় ডিসিসির সেবা কার্যক্রম একপ্রকার ভেঙে পড়েছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আগেও এ বছরে ভোট করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে সরকারের এ মেয়াদে আর হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’ সম্প্রতি কমিশনের সভার আলোচ্য সূচিতে ‘ডিসিসি নির্বাচন’ ইস্যুটি থাকলেও তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত আলোচনাই হয়নি। অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ইতিমধ্যে বলছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত থাকলেও সীমানা জটিলতা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেই স্থানীয় সরকার বিভাগের। মেয়াদোত্তীর্ণ ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে কোনো ‘আশাব্যঞ্জক’ বক্তব্যও নেই নির্বাচন আয়োজনকারী এই সাংবিধানিক সংস্থাটির। ২০০২ সালের এপ্রিলে ভোটের পর ২০০৭ সালের মে মাসে অবিভক্ত ডিসিসির নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময় দুবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আইনি জটিলতায় তা ভেস্তে যায়। ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বরে ৫৬টি ওয়ার্ড নিয়ে দক্ষিণ ও ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে উত্তর নামে দুই ভাগ হয় ডিসিসি। দুই ভাগ করার পর এ পর্যন্ত পঞ্চম দফা অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে চলছে ডিসিসি, যদিও স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে বিভিন্ন মহল। ইসি জানিয়েছে, গত বছরের ১৩ মে ডিসিসির দুই ভাগে নির্বাচন নিয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করে ভোট আয়োজনের ওপর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ তুলে নেন। কিন্তু পরে তেজগাঁও সার্কেলভুক্ত সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের ১৩টি পাড়া-মহল্লা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করায় সীমানা পুনর্র্নিধারণের প্রয়োজন পড়ে। ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের ইসি তফসিল ঘোষণা করলেও আইনি জটিলতায় তা স্থগিত হয়ে যায়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২০১২ সালের ২৪ মে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। ২০১৩ সালের মে মাসে নির্বাচনের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ উঠে গেলে নতুন করে তফসিল ঘোষণার উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একটি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় সীমানা জটিলতায় নির্বাচন আবারও ঝুলে যায়।সিসিসি নির্বাচনও অনিশ্চয়তায় : চট্টগ্রাম মহানগরীর আয়তন দ্বিগুণ করার ‘তৎপরতার’ পক্ষে-বিপক্ষে ইসির ‘মত’ না থাকলেও এখন সীমানা বাড়লে আইনি জটিলতাও তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার। চট্টগ্রাম মহানগরীর আয়তন দ্বিগুণ করলে জটিলতা তৈরি করতে পারে আসন্ন নির্বাচনে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মে মাসের শেষার্ধ থেকে জুনের প্রথমার্ধকে ভোটের উপযুক্ত সময় বিবেচনা করা হচ্ছে। সিসিসির একজন কর্মকর্তা জানান, ৪১টি ওয়ার্ড নিয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর আয়তন ৬০ বর্গমাইল। সংলগ্ন কিছু ইউনিয়ন নিয়ে এ সীমানা দ্বিগুণ করে ১২০ বর্গমাইল করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। সম্প্রসারিত এ সীমানায় ওয়ার্ড বাড়বে আরও ২০টি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে চলমান ভোটার তালিকার হালনাগাদ শেষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমানায় ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে, যাতে যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করা যায় সে প্রস্তুতিও রয়েছে ইসির। মে মাসকে ভোটের উপযুক্ত সময় ধরে প্রস্তুতি কাজ এগোচ্ছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সিটির এক কর্মকর্তা জানান, সীমানা বাড়লেই সংক্ষুব্ধ অনেকেই আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ পাবেন। এতেই শঙ্কা বাড়বে যথাসময়ে ভোট নিয়ে। তবে সরকার চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে সবকিছু গেজেট করে নিষ্পন্ন করাও সম্ভব। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক বলেন, এখন নতুন করে সীমানা বাড়লে তো আইনি জটিলতা হবেই। এ ক্ষেত্রে সীমানা বাড়ানো বা না বাড়ানোর পক্ষে কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। এটা স্থানীয় সরকারের বিষয়। প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৭ জুন ভোটের পর প্রথম সাধারণ সভা হয় ২৬ জুলাই।