রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > আবারও সরকার উৎখাতের ছক!

আবারও সরকার উৎখাতের ছক!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
সিঙ্গাপুরে কতিপয় অভিবাসী বাংলাদেশির বিরুদ্ধে উগ্রবাদী পরিকল্পনার অভিযোগের রেশ কাটতে না কাটতেই আবার একই অভিযোগ উঠেছে। সিঙ্গাপুর সরকার দাবি করেছে, বাংলাদেশে সরকার উৎখাত ও খিলাফত প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার অভিযোগে আট প্রবাসী বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। ওই আটজন সিঙ্গাপুরে ‘ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ’ (আইএসবি) নামে একটি গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে। তাদের লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশে সশস্ত্র জিহাদ করা। আর এর জন্য অস্ত্র কিনতে অর্থ সংগ্রহ করছিল তারা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র ব্যবহার ও বোমা তৈরি বিষয়ক বই এবং বাংলাদেশে তাদের হামলার লক্ষ্যগুলো (হিটলিস্ট) প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।-কালেরকণ্ঠ।

এদিকে সিঙ্গাপুরে ওই আট বাংলাদেশি আটক হওয়ার তথ্য অবগত থাকার কথা স্বীকার করে ঢাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই একই পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিন্তু জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য নয় সিঙ্গাপুরফেরত এমন পাঁচজনকে গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের আদালতে তোলা হতে পারে।

সিঙ্গাপুর সরকারের পক্ষ থেকে এমন একসময় আট বাংলাদেশিকে আটক করার তথ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে জানানো হয়, যখন বাংলাদেশ একের পর এক গুপ্ত হত্যা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে বৈশ্বিক চাপের মুখে আছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস, সংক্ষেপে আইএস) ওই গুপ্ত হত্যাগুলোর বেশ কয়েকটির দায় স্বীকার করেছে বলে পশ্চিমা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হলেও বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলছে, এ দেশে কোনো আইএস নেই। এসব হামলার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে।

বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে বসে বাংলাদেশে সরকার উৎখাত ও খিলাফত প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার অভিযোগ এটিই প্রথম নয়। এর আগে গত ২০ জানুয়ারি সিঙ্গাপুর সরকার এ ধরনের পরিকল্পনার অভিযোগে ২৭ বাংলাদেশিকে আটক করে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছিল। সে সময় বন্ধুপ্রতিম সিঙ্গাপুরের এ অভিযোগকে বাংলাদেশ সরকারও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল। ওই ২৭ বাংলাদেশির মধ্যে অন্তত ১৪ জন বর্তমানে কারাগারে আছে।

জীবিকার তাগিদে বিদেশে পাড়ি জমানো এ ব্যক্তিরা এ দেশে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিল না। বিভিন্ন সময় বিদেশে জঙ্গিবাদের অভিযোগে বিপাকে পড়েছে এমন ব্যক্তিরাও দেশে ফিরে দাবি করেছে যে তারা মোটেও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। তারা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলত। তবে কেউ কেউ এমন বই-পুস্তক বা লিফলেটসহ ধরা পড়েছে যেগুলো ওই দেশগুলোতে উগ্রবাদী উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। সিঙ্গাপুরে এবার আটক এক বাংলাদেশির কাছে বোমা তৈরি ও অস্ত্র চালানো সম্পর্কিত বই পাওয়া গেছে। তারা কেন জঙ্গিবাদের পরিকল্পনা করছে বা সেখান থেকে দেশে ফিরে কেন সশস্ত্র জিহাদের স্বপ্ন দেখছে, সে বিষয়েও পুলিশ অনুসন্ধান করছে। বিশেষ করে শ্রমবাজার ধ্বংস ও দেশে আইএসের উপস্থিতি প্রমাণ করতে বিভিন্ন মহলের নানামুখী অপচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা কিছু বাংলাদেশি শ্রমিককে পরিকল্পিতভাবে ভিন্নপথে ধাবিত করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাকিস্তানি আইএসআইয়ের সম্পৃক্ততারও অভিযোগ রয়েছে। এগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম মাহবুব উজ জামান বলেছেন, সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কয়েকজন ব্যক্তি নজরদারিতে আছে। সাধারণ বাংলাদেশি অভিবাসীদের এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

এদিকে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে আটক করা আট বাংলাদেশিকে ‘উগ্রবাদী’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ওই আট বাংলাদেশি হলো মিজানুর রহমান (৩১), লিয়াকত আলী মামুন (২৯), ইব্রাহিম সোহাগ (২৭), রুবেল মিয়া (২৬), দৌলত জামান (৩৪), শরিফুল ইসলাম (২৭), মো. জাভেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) এবং সোহেল হাওলাদার ওরফে ইসমাইল হাওলাদার (২৯)।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আটক আট বাংলাদেশির মধ্যে মিজানুর রহমান ‘এস-পাস’ধারী (মাঝারি দক্ষ কর্মী এবং মাসে অন্তত ২২ শ সিঙ্গাপুরি ডলার বেতন পায়)। অন্য সাতজন ওয়ার্ক পারমিটধারী। তারা সবাই সিঙ্গাপুরে নির্মাণ ও মেরিন শিল্পে কর্মরত ছিল।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানায়, আটক বাংলাদেশিরা গত মার্চ সাসে সিঙ্গাপুরে ‘ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ’ (আইএসবি) নামে একটি গোপন চক্র গড়ে তোলে। আইএসবি সদস্যদের তথ্য অনুযায়ী, তাদের চক্রের অন্তত দুজন সদস্য বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। আইএসবি সদস্যদের বিদেশি যোদ্ধা হিসেবে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দেওয়ার অভিপ্রায় ছিল। তবে সিরিয়ায় যাওয়া তাদের কাছে কঠিন মনে হওয়ায় তারা বাংলাদেশে ফিরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে শক্তি প্রয়োগ করে সেখানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং আইসিসের স্বঘোষিত খিলাফতের আওতায় আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছিল।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আইএসবি বাংলাদেশে হামলার জন্য কিছু লক্ষ্যও ঠিক করেছে। মিজানুর রহমানের কাছে একটি হিটলিস্ট পাওয়া গেছে। সেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, চেয়ারম্যান, সরকারি কর্মকর্তা, বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমের কর্মী এবং ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নয় এমন ব্যক্তিদের হত্যার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।

মিজানুর রহমানের কাছে অস্ত্র ও বোমাবিষয়ক কাগজপত্রের পাশাপাশি আল-কায়েদা ও আইসিসের কট্টর প্রকাশনা পাওয়া গেছে। গত জানুয়ারি মাস থেকে সে এগুলো ব্যবহার করে লোকজনকে আইএসবিতে ভেড়ানোর চেষ্টা করছিল।

সিঙ্গাপুর সরকারের তথ্য অনুযায়ী, আইএসবি সদস্যরা সিঙ্গাপুরে কর্মরত অন্য বাংলাদেশিদের দলে ভিড়িয়ে তাদের চক্রকে আরো বড় করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার জন্যও তারা অর্থ সংগ্রহ করছিল। তাদের সেই অর্থ বাজেয়াপ্ত করেছে সিঙ্গাপুর সরকার।

সিঙ্গাপুর সরকার মনে করে, আইএসবি সিঙ্গাপুরের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কারণ এ চক্র আইএসকে সমর্থন করে এবং বিদেশি ভূখণ্ডে সহিংসতা ঘটাতেও তারা প্রস্তুত। আটক আইএসবি সদস্যরা সিঙ্গাপুরে কী করেছে সে বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে। মিজানুর রহমান বলেছে, আইএস বললে সে যেকোনো স্থানে হামলা চালাবে। তবে সিঙ্গাপুরও তাদের হামলার লক্ষ্য কি না, সে ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত মেলেনি। আটক বাংলাদেশিদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের জন্য বিচার হতে পারে।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তদন্তের অংশ হিসেবে সিঙ্গাপুরে আরো পাঁচ বাংলাদেশিকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনের আওতায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, তারা আইএসবির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও ধর্মীয় কারণে সশস্ত্র জিহাদকে সমর্থন করে এবং তাদের কাছে জিহাদি সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। তাদের সবাইকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ও ডিবির যৌথ টিম সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসা পাঁচজনকে গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে। ওই পাঁচজন কয়েক দিন আগে দেশে ফিরেছে। গোয়েন্দা সূত্র দাবি করেছে, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উগ্রবাদসংবলিত কিছু পুস্তক ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া এই পাঁচজন ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরে যায়। সেখানে গিয়ে তারা জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ডে নেওয়ার পর পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরত পাঠানো পাঁচজন হলো মিজানুর রহমান খালিব ওরফে হাসান চৌধুরি, রানা আহামিয়া পাইলট, আলমগির হোসেন, তানজিমুল ইসলাম ও মাসুদ রানা ওরফে ছন্টু খাঁ। তবে সিঙ্গাপুরে যেসব অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় সেগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ও রকম সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তারা বাংলাদেশে বা সিঙ্গাপুরে নাশকতার পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি নিচ্ছিল, নাকি জঙ্গি দাওয়াতি কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, সেটাও এখন পর্যন্ত স্পষ্ট হওয়া যায়নি।

মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘ওই পাঁচজন জঙ্গি সংগঠনে যোগদানের বিষয়ে তৎপর ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি তারা সিঙ্গাপুরে কী ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল, সেটা আমাদের দেশের আইনের সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা তদন্তের পর বলা সম্ভব হবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন। আজ বুধবার আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।’

তিনি বলেন, “বর্তমানে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। সন্ত্রাসী যেই হোক, সে দেশে থাকুক বা দেশের বাইরে থাকুক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চলছে। এর ধারাবাহিকতায় সিঙ্গাপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফেরত পাঠিয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের আইন সিঙ্গাপুরের আইন থেকে আলাদা। সিঙ্গাপুর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে তারা জঙ্গিবাদের বিষয়ে ‘দাওয়াত’ অর্থাৎ বিভিন্ন জনকে জঙ্গিবাদের পক্ষে যোগদান ও অন্যান্য সহযোগিতা করত এবং আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করত। এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরপরই প্রথমে তাদের সন্দেহ করা হতো। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সময়ে আটক করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। আমরাও একই অবস্থানে আছি। অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকলে সেটা আইনত অপরাধ। সেটি দেশের মাটিতে হোক অথবা বিদেশেই হোক।”