শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > আন্দোলনের টাকা হাওয়া বিএনপিতে!

আন্দোলনের টাকা হাওয়া বিএনপিতে!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ৫ জানুয়ারির কথিত ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবসের সমাবেশ করতে না দেয়ার অজুহাতে বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়েছে অনেক আগেই। কিন্তু ব্যর্থ ওই আন্দোলনের জের টানতে হচ্ছে দলটির তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।

এ পরিস্থিতিতে ফাঁস হচ্ছে খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত বিএনপির কতিপয় শীর্ষ নেতা ও গুলশান অফিসের কর্মকর্তার অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি।

সাম্প্রতিক আন্দোলন কর্মসূচিতে দলের তরফে গঠন করা তহবিলের অর্থ আত্মসাতের মত গুরুতর অভিযোগও পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। আন্দোলন সংগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সহায়তার জন্য গঠন করা হয়েছিলো এই তহবিল।

বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঘাড়ে এখন অবরোধে সংঘটিত নাশকতার মামলার বোঝা। আন্দোলনের শুরু থেকেই বাড়িতে থাকতে পারছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। অনেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। পলাতক ও গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের পরিবারগুলোতেও নেমে এসেছে অর্থনৈতিক সঙ্কট।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপির কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের জামিন, তাদের মামলার খরচ, হতাহত নেতাকর্মীদের পরিবারের ভরণপোষণ ইত্যাদি খাতে খরচের জন্য খালেদা জিয়ার নির্দেশে গঠন করা হয় বিশেষ তহবিল।

খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপিপন্থি ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী, প্রবাসী বিএনপির নেতারাসহ জামায়াতপন্থি ব্যবসায়ীরা এই তহবিলে অর্থের যোগান দিয়েছিলো।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরকারবিরোধী দ্বিতীয় দফার আন্দোলনের শুরুতেই আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে দলের সচ্ছল নেতাদের প্রতি নির্দেশ দেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

খালেদার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশে সামর্থ্যবান নেতাদের পাশাপাশি প্রবাসে অবস্থানরত বিএনপি সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের বিএনপি নেতারাও উদার হস্তে দান করেছেন। অনেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।

আন্দোলনের সময় এই তহবিলের অর্থ তৃণমূলের মধ্যে বণ্টনের জন্য গুলশান অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা এবং বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

কিন্তু এসব অর্থ আর তৃণমূলে পৌঁছায়নি। মাঝপথে লোপাট হয়েছে বেশিরভাগ অর্থ। অনেক নেতাই হাতে পাওয়া অর্থের অল্প কিছু তৃণমূলে নিজেদের পছন্দের নেতাদের কাছে পৌঁছিয়ে বাকি টাকা আত্মসাত করেছেন। আবার কেউ কেউ পকেটস্থ করেছেন পুরো টাকাই।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খরচ চালানোর অর্থ নিয়ে বিএনপির মূল কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষনেতারা আন্দোলনের শুরুতেই চলে যান আত্মগোপনে। আবার কেউ কেউ সরকারের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে গ্রেফতারের নাটক করে মেরে দিয়েছেন বেশিরভাগই টাকাই।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কতিপয় শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা এবং কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলে।

নয়াপল্টনের পার্টি অফিস কিংবা গুলশান অফিসের সামনে নেতাকর্মীদের জটলায় এখন উঠে আসছে বিএনপির কতিপয় ‘প্রভাবশালী নেতা’র বিতর্কিত ও অন্তর্ঘাতমূলক এ সব কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি।

সম্প্রতি নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনের পরপরই এ বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও সুবিধাবাদিতার অভিযোগ আনেন। অনেকে ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরদ্ধে সরাসরি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন। এ নিয়ে নয়াপল্টনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাক বিতণ্ডাও হয়েছে বেশ কয়েক দফা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রদলের ওয়ার্ড পর্যায়ের এক নেতা জানান, আন্দোলনের সময় শীর্ষ নেতাদের ফোন ছিলো বন্ধ। এছাড়া তাদের সঙ্গে যোগাযোগেরও কোনো উপায় ছিলো না। বিএনপির তরফেও তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে এবং স্থানীয় কোনো কোনো বিএনপি নেতার সহযোগিতায় মাঠে ছিলেন তারা।

জানা গেছে, শুধু ছাত্রদলই নয় একই চিত্র যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলেরও। যুবদলের শীর্ষ এক নেতার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত ও সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে আন্দোলনের সময় দল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিলেও নেতাকর্মীদের না বিতরণ করে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে কারাগারে যান তিনি। সম্প্রতি বেরিয়েও এসেছেন জেল থেকে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের আরেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে আন্দোলনের অর্থ নিয়ে আত্মগোপনে থাকার।

তবে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান অফিসের কতিপয় শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিশ্বাস করে তাদেরকে সারা দেশে বিএনপির সাংগঠনিক কমিটিগুলোকে আন্দোলনের খরচ যোগানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এসব অর্থের বেশিরভাগই আর তৃণমূলে পৌঁছায়নি। খালেদা জিয়াও এ সব ব্যাপারে তদন্ত করে দেখার সুযোগ পাননি।

এমনিতেই খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পাওয়া তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জন্য অত্যন্ত দুরূহ, তার ওপর মামলা হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এ পরিস্থিতিতে তহবিলের অর্থ খরচেরও হিসাবও তলব করতে পারছেন না খালেদা।

এ ব্যাপারে বিএনপির বিভিন্ন জেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা ‘গুলশান’ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলেন। প্রায় সবাই অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের যোগাযোগের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে দলের মধ্যে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে বিএনপি।

জেলা পর্যায়ের একজন নেতা জানান, তারা শুনেছেন এবারের আন্দোলনের তহবিলে শতাধিক কোটি টাকা যোগাড় হয়েছিলো। কিন্তু ঢাকা থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি তারা।

এ পরিস্থিতিতে তহবিলের টাকা কোথায় গেল সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন তিনি। পাশাপাশি এ ব্যাপারে হিসাব নেয়ার জন্য খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপি রাজধানী ঢাকায় কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি উল্লেখ করে তারা বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা সরকারের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন। এমনকি বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ।

আন্দোলন কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ায় এমনিতেই তোপের মুখে বিএনপির কেন্দ্র। তার ওপর আন্দোলনের তহবিল মেরে দেয়ার অভিযোগ ওঠায় বিএনপির গুলশান অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং বিএনপির কিছু কিছু নেতার বিশ্বাসযোগ্যতা এখন শুন্যের কোঠায়। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম