শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আজ

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আজ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘরে-বাইরে নানা রূপে নারীর ওপর নির্যাতন চলছে। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের চেষ্টায় নির্যাতন আরো বাড়ছে; ভয়ংকর সহিংস রূপ নিচ্ছে তা। দিন পেরিয়ে সপ্তাহ, মাস; মাস পেরিয়ে বছর। সময় গড়াচ্ছে; কিন্তু দেশে নারী নির্যাতনের চিত্র রয়ে যাচ্ছে প্রায় আগের মতোই। যেটুকু বদল ঘটছে, তা নির্যাতনের কৌশলে। অসহনীয় পারিবারিক নির্যাতনে অসহায় নারী ‘আত্মহত্যা’ করছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে সেসব। হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ প্রভৃতি ঘটনার পরিসংখ্যান বাড়তির দিকেই।

অপরাধ বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীদের মতে, সমাজ পরিবর্তন ও আধুনিকতার সূত্রে নারী নির্যাতনের ঘটনা কমার কথা; কিন্তু কমছে না, বরং বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ ক্ষয়ে যাচ্ছে, দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরছে বিবিধ কারণে। এসবের সুবাদে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে নারীর সুরক্ষা বিধানের পথে।
গত দুই মাসের শতাধিক ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পারিবারিক সহিংসতা ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর এ সহিংসতার প্রধান শিকার নারী।
যৌতুক অথবা মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে স্বামী আগুন দিচ্ছে স্ত্রীর গায়ে; নৃশংসভাবে হত্যা করছে। পরকীয় সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতেও দাম্পত্য-বিরোধ দেখা দিচ্ছে, ঘটছে বীভৎস ঘটনা। নৃশংসতা মাত্রা ছাড়াচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনে শিথিলতা দেখা দেওয়ায় সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইনি প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, শিথিলতা প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ জোরালো করতে হবে। প্রতিষ্ঠিত করতে হবে পারিবারিক অনুশাসন। আর সার্বিক সচেতনতা সৃষ্টির যে প্রক্রিয়া, তা ঢেলে সাজাতে হবে। সরকারকে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ গাফিলতি আছে বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীরা।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নারী নির্যাতনের ধরন পাল্টেছে, তবে কমেনি। সমাজে সচেতনতা তৈরিতে যারা কাজ করছি, তারা লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। পুরুষের মাধ্যমে নির্যাতনের পাশাপাশি এখন নারীর মাধ্যমে নারী নির্যাতনের অভিযোগও অহরহ আসছে। পরকীয় সম্পর্ক ও লিভ টুগেদার বাড়ছে, যা নারী নির্যাতনের সহায়ক কারণ। অন্যদিকে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমেও নারী নির্যাতন ঘটছে। বর্তমানে নারীর প্রতি যে ধরনের সহিংস আচরণ দেখা যাচ্ছে, তা আগে এতটা তীব্র ছিল না। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।’
যৌতুকের টাকার জন্য বিয়ের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় স্বামীর দেওয়া আগুনে পুড়ে গত রবিবার মারা গেছেন নরসিংদীর গৃহবধূ সুবর্ণা আক্তার (১৮)। নরসিংদী সরকারি কলেজের এ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছিল ইলিয়াস হোসেন (২১) নামের এক বেকার যুবকের সঙ্গে। দাবীকৃত দুই লাখ টাকা না পেয়ে ইলিয়াস ক্ষিপ্ত হয়ে আগুন দেয় বলে মৃত্যুকালে দেওয়া জবানবন্দিতে সুবর্ণা জানিয়েছেন। গত ৮ অক্টোবর রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুরে চম্পা বেগম নামের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যা করা হয়। জমিসংক্রান্ত বিরোধে চাচাশ্বশুর এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ মাসেই নরসিংদীতে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে সালেহা আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূকে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গত ৬ অক্টোবর ঘটে এক পৈশাচিক ঘটনা। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একই পরিবারের চারজনকে ঘরে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে বখাটেরা। গৃহবধূ হাসনা বেগম (৩৫), তাঁর তিন মেয়ে মনিরা আক্তার (১৪), মীম আক্তার (১১) ও মলি আক্তার (৭) ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় এ নিষ্ঠুরতার শিকার হয়।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক ও পারিবারিক সহিংসতা বাড়ার অন্যতম কারণ মাদক ও পরকীয় সম্পর্ক। যৌতুক, সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্য, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, প্রযুক্তির অপব্যবহার, সমাজ পরিবর্তনের অসুস্থ ধারা, অস্বাভাবিক আর্থিক পরিবর্তন, সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্য প্রভৃতি কারণে অসহিষ্ণু পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এরই প্রকাশ ঘটছে সহিংস-রূপে। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতাকেও দায়ী করেছেন অনেকে। আর এ সহিংসতার প্রধান শিকার হচ্ছে নারী।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, ‘সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই মূলত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সমাজ পরিবর্তনের ধারা অস্বাভাবিক হওয়ায় পারিবারিক অনুশাসন ও মূল্যবোধ ক্ষয়ে গেছে। আর মাদকের প্রভাব ও আকাশ সংস্কৃতির কারণে নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে এবং তা গড়াচ্ছে নির্যাতনের দিকে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতা বাড়ছে। তাতে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার দায়ও রয়েছে। কখনো দীর্ঘমেয়াদি নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্রোধবশত অনেকে নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। শুধু আইনি প্রচেষ্টায় এ অবস্থার উন্নতি হবে না। পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি মূল্যবোধ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। নারীর অধিকার রক্ষা ও সচেতনতা বাড়াতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’
সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে শীর্ষে। ৪৭ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে এ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ হার ৩৪ শতাংশ।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এ বছর জানুয়ারি মাসে সারা দেশে এক হাজার ১২৭টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ২৫৬, মার্চে এক হাজার ৬৬৯, এপ্রিলে এক হাজার ৯৮৮, মে মাসে দুই হাজার ৬৯, জুনে এক হাজার ৯৮১, জুলাইয়ে এক হাজার ৮২৩, আগস্টে দুই হাজার ২১৩ জন, সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ৩১৭ ও অক্টোবরে দুই হাজার ৭৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশে শুধু ধর্ষণের শিকার হয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৬ জন নারী ও শিশু। ধর্ষণের পর হত্যা এবং আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৮৫০টি।
মহিলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছয় মাসে সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮২ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৫ জনকে। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে আরো ৫১ জন।
কর্মীরা বলছেন, এসব পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে কঠোর আইনও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এর মধ্যে একটি কারণ হলো, আইনের ফাঁক-ফোকরের কারণে শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। সে জন্যই ‘ভিকটিম অ্যান্ড উইটনেস প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ নামে নতুন আইনের দাবি জানানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। প্রয়োজন সুরক্ষা আইনও। এ আইনের মাধ্যমে নারী ও শিশুর সহিংসতা বা অন্য কোনো অপরাধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যার বা যাদের কারণে সহিংসতার অপরাধ ঘটবে, তার বা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তি দিতে হবে।
আইআইঢাকা : ঘরে-বাইরে নানা রূপে নারীর ওপর নির্যাতন চলছে। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের চেষ্টায় নির্যাতন আরো বাড়ছে; ভয়ংকর সহিংস রূপ নিচ্ছে তা। দিন পেরিয়ে সপ্তাহ, মাস; মাস পেরিয়ে বছর। সময় গড়াচ্ছে; কিন্তু দেশে নারী নির্যাতনের চিত্র রয়ে যাচ্ছে প্রায় আগের মতোই। যেটুকু বদল ঘটছে, তা নির্যাতনের কৌশলে। অসহনীয় পারিবারিক নির্যাতনে অসহায় নারী ‘আত্মহত্যা’ করছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে সেসব। হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ প্রভৃতি ঘটনার পরিসংখ্যান বাড়তির দিকেই।
অপরাধ বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীদের মতে, সমাজ পরিবর্তন ও আধুনিকতার সূত্রে নারী নির্যাতনের ঘটনা কমার কথা; কিন্তু কমছে না, বরং বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ ক্ষয়ে যাচ্ছে, দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরছে বিবিধ কারণে। এসবের সুবাদে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে নারীর সুরক্ষা বিধানের পথে।
গত দুই মাসের শতাধিক ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পারিবারিক সহিংসতা ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর এ সহিংসতার প্রধান শিকার নারী।
যৌতুক অথবা মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে স্বামী আগুন দিচ্ছে স্ত্রীর গায়ে; নৃশংসভাবে হত্যা করছে। পরকীয় সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতেও দাম্পত্য-বিরোধ দেখা দিচ্ছে, ঘটছে বীভৎস ঘটনা। নৃশংসতা মাত্রা ছাড়াচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনে শিথিলতা দেখা দেওয়ায় সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইনি প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, শিথিলতা প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ জোরালো করতে হবে। প্রতিষ্ঠিত করতে হবে পারিবারিক অনুশাসন। আর সার্বিক সচেতনতা সৃষ্টির যে প্রক্রিয়া, তা ঢেলে সাজাতে হবে। সরকারকে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ গাফিলতি আছে বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীরা।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নারী নির্যাতনের ধরন পাল্টেছে, তবে কমেনি। সমাজে সচেতনতা তৈরিতে যারা কাজ করছি, তারা লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। পুরুষের মাধ্যমে নির্যাতনের পাশাপাশি এখন নারীর মাধ্যমে নারী নির্যাতনের অভিযোগও অহরহ আসছে। পরকীয় সম্পর্ক ও লিভ টুগেদার বাড়ছে, যা নারী নির্যাতনের সহায়ক কারণ। অন্যদিকে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমেও নারী নির্যাতন ঘটছে। বর্তমানে নারীর প্রতি যে ধরনের সহিংস আচরণ দেখা যাচ্ছে, তা আগে এতটা তীব্র ছিল না। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।’
যৌতুকের টাকার জন্য বিয়ের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় স্বামীর দেওয়া আগুনে পুড়ে গত রবিবার মারা গেছেন নরসিংদীর গৃহবধূ সুবর্ণা আক্তার (১৮)। নরসিংদী সরকারি কলেজের এ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছিল ইলিয়াস হোসেন (২১) নামের এক বেকার যুবকের সঙ্গে। দাবীকৃত দুই লাখ টাকা না পেয়ে ইলিয়াস ক্ষিপ্ত হয়ে আগুন দেয় বলে মৃত্যুকালে দেওয়া জবানবন্দিতে সুবর্ণা জানিয়েছেন। গত ৮ অক্টোবর রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুরে চম্পা বেগম নামের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যা করা হয়। জমিসংক্রান্ত বিরোধে চাচাশ্বশুর এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ মাসেই নরসিংদীতে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে সালেহা আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূকে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গত ৬ অক্টোবর ঘটে এক পৈশাচিক ঘটনা। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একই পরিবারের চারজনকে ঘরে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে বখাটেরা। গৃহবধূ হাসনা বেগম (৩৫), তাঁর তিন মেয়ে মনিরা আক্তার (১৪), মীম আক্তার (১১) ও মলি আক্তার (৭) ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় এ নিষ্ঠুরতার শিকার হয়।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক ও পারিবারিক সহিংসতা বাড়ার অন্যতম কারণ মাদক ও পরকীয় সম্পর্ক। যৌতুক, সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্য, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, প্রযুক্তির অপব্যবহার, সমাজ পরিবর্তনের অসুস্থ ধারা, অস্বাভাবিক আর্থিক পরিবর্তন, সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্য প্রভৃতি কারণে অসহিষ্ণু পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এরই প্রকাশ ঘটছে সহিংস-রূপে। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতাকেও দায়ী করেছেন অনেকে। আর এ সহিংসতার প্রধান শিকার হচ্ছে নারী।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, ‘সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই মূলত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সমাজ পরিবর্তনের ধারা অস্বাভাবিক হওয়ায় পারিবারিক অনুশাসন ও মূল্যবোধ ক্ষয়ে গেছে। আর মাদকের প্রভাব ও আকাশ সংস্কৃতির কারণে নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে এবং তা গড়াচ্ছে নির্যাতনের দিকে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতা বাড়ছে। তাতে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার দায়ও রয়েছে। কখনো দীর্ঘমেয়াদি নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্রোধবশত অনেকে নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। শুধু আইনি প্রচেষ্টায় এ অবস্থার উন্নতি হবে না। পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি মূল্যবোধ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। নারীর অধিকার রক্ষা ও সচেতনতা বাড়াতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’
সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে শীর্ষে। ৪৭ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে এ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ হার ৩৪ শতাংশ।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এ বছর জানুয়ারি মাসে সারা দেশে এক হাজার ১২৭টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ২৫৬, মার্চে এক হাজার ৬৬৯, এপ্রিলে এক হাজার ৯৮৮, মে মাসে দুই হাজার ৬৯, জুনে এক হাজার ৯৮১, জুলাইয়ে এক হাজার ৮২৩, আগস্টে দুই হাজার ২১৩ জন, সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ৩১৭ ও অক্টোবরে দুই হাজার ৭৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশে শুধু ধর্ষণের শিকার হয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৬ জন নারী ও শিশু। ধর্ষণের পর হত্যা এবং আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৮৫০টি।
মহিলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছয় মাসে সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮২ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৫ জনকে। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে আরো ৫১ জন।
কর্মীরা বলছেন, এসব পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে কঠোর আইনও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এর মধ্যে একটি কারণ হলো, আইনের ফাঁক-ফোকরের কারণে শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। সে জন্যই ‘ভিকটিম অ্যান্ড উইটনেস প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ নামে নতুন আইনের দাবি জানানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। প্রয়োজন সুরক্ষা আইনও। এ আইনের মাধ্যমে নারী ও শিশুর সহিংসতা বা অন্য কোনো অপরাধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যার বা যাদের কারণে সহিংসতার অপরাধ ঘটবে, তার বা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তি দিতে হবে।