শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > আদিম যুগেই বিমা খাত!

আদিম যুগেই বিমা খাত!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: প্রযুক্তির ছোঁয়ায় প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির জয় জয়কার। সরকার দেখছে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। এ পরিস্থিতিতেও এক প্রকার অন্ধকারেই দেশের বিমা খাত।

এ খাতে এখনো দেখা মেলেনি প্রযুক্তির তেমন কোন ছোঁয়া। অধিকাংশ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চেয়ারম্যান জানেন না কিভাবে ইন্টারনেট চালাতে হয়। আর কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হাই স্কুল লেভেলেই। ফলে কম্পিউটার চালানো ও ইন্টারনেট ব্যবহার তাদের কাছে আকাশ কুসুম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিমা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো পর্যায়ে নেই মানসম্মত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমনকি তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রেও নেই কোনো বাধ্যবাধকতা। শুধু অক্ষর জ্ঞান(কোনো রকমে লিখতে পড়তে জানে) আছে এমন ব্যক্তি অনায়াসে হতে পারেন এজেন্ট থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আর বিমা কোম্পানির সর্বোচ্চ পদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথাব ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) পদে নিয়োগ পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার একটি আইন করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এমনকি বছরের অধিক সময় ধরে আইনটি নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও তা সংশোধনেরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এছাড়া ভূয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দেখিয়ে এমডি পদে দায়িত্ব পালনেরও নজির রয়েছে বিমা খাতে।

সরকার বিমা খাতের উন্নয়নে বিমা আইন সংস্কার ও নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করেছে। সরকারের এ পদক্ষপের পর এরইমধ্যে তিন বছর পেরিয়ে গেছে। তবে বিমা খাতের আধুনিকায়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইইডিআরএ) দৃশ্যত তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে অন্ধকারেই থেকে গেছে বিমা খাতের আধুনিকায়ন।

প্রযুক্তির স্পর্শে বর্তমানে দেশের প্রতিটি বেসরকারি বাণিজ্যক ব্যাংক চলছে অনলাইন পদ্ধতিতে। ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। অপরদিকে অনলাইন সেবা তো দূরের কথা, এখনো নিজেদের ওয়েবসাইট আপডেট করতে পারেনি অসংখ্য বিমা কোম্পানি।

শিক্ষিত লোকের অভাবই এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বিমা সংশ্লিষ্টরা। তদের মতে, গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে আইডিআরএ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সাধারণ বিমা কোম্পানির বাকি ব্যবসা বন্ধ, কমিশন হার নির্ধারণ, বিমা কোম্পানির পরিচালকদের মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠানের বিমা নিজ বিমা কোম্পানিতে করার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়াসহ বেশ কিচু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু বিমা খাতে শিক্ষিত লোকবল গড়ে তুলতে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

ফলে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত বিমা খাত এখনো একই চিত্রে আবদ্ধ। অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন কর্মকর্তারা একদিকে বিমা পলিসি বিক্রি করতে নিচ্ছে নানা প্রতারণার আশ্রয়। অন্যদিকে গ্রাহককে তারা দিতে পারছেন না সঠিক তথ্য। এতে পদে পদে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রহকরা।

তবে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের দাবি, বিমা খাতের আধুনিকায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সকল বিমা কোম্পানির জন্য সম্মিলিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে নিয়ন্ত্রণ, তথ্য সংরক্ষণ ও আদান প্রদানের ব্যবস্থা করার করা হচ্ছে।

এছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমিকে যুগোপযোগী করা এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিমা বিষয়ে আলাদা বিভাগ করে দক্ষ জনশক্তি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন অনুযায়ী বিমা কোম্পানির এজেন্ট লাইসেন্সের জন্য ৮ম শ্রেণি পাস এবং নতুন আইন অনুযায়ী এমডি পদের জন্য কম পক্ষে ৩ বছর মেয়াদী স্নাতক ও ১ বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর বা ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রির অধিকারী হতে হবে। দেশের সিংহভাগ বিমা কোম্পানির এমডির এ শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। ফলে এমডি নিয়োগের এ আইনটি কার্যকর করতে পারছে না আইডিআরএ। অপরদিকে আইনটি সংশোধনও করা হয়নি।

ডেল্টা লাইফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) উত্তম কুমার সাধু বলেন, বিমা খাতে অনলাইন সেবা চালু করতে পারলে গ্রাহক হয়রানি কমে আসবে। কমবে দুর্নীতির পরিমাণও।

তিনি বলেন, ঘরে বসে অনলাইনে বিমা পলিসির টাকা জমা দিতে পারলে গ্রাহকের টাকা মার যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। অপরদিকে গ্রাহক বিমা দাবির টাকা সহজে পাবেন।

তার মতে, শিক্ষিত লোকবলের কারণেই বিমা খাতে অনলাইন সেবা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এজেন্টদের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র ৮ম শ্রেণি পাস রাখায় বিমা কোম্পানিতে শিক্ষিতরা আসছে না। শিক্ষিতরা বিমা পেশায় না আসলে বিমা খাতের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সরকারের পদক্ষেপ খুব একটা সফল হবে না। বিমা খাতে শিক্ষিত লোকবল গড়ে তুলতে এমডিদের মতো এএমডি, ডিএমডি, প্রজেক্ট ডিরেক্টরদেরও একটি শিক্ষাগত যোগ্যতার মান নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অষ্টম শ্রেণী পাশা করে অনেকে উন্নয়ন কর্মকর্তা পদে চাকরি করছেন। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডিএমডি পদের মতো উচ্চ পদে চাকরি করছেন এমন কর্মকর্তার সংখ্যাও কম নয়। আবার অনেক কর্মকর্তার বিমা বিষয়ে একাডেমিক কোনো প্রশিক্ষণও নেই।

এসব কর্মকর্তার অধিকাংশের বিরুদ্ধে প্রিমিয়াম আয়ে বিমা আইন লঙ্ঘনসহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও এমডি পদে নিয়োগ পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণে বেশ কিছু কোম্পানির এমডির বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।

বিমা বিশেষজ্ঞ দাস দেব প্রসাদ বলেন, বিমা কোম্পানিতে এজেন্ট ও উন্নয়ন কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। বিবেচনায় নেওয়া হয় প্রিমিয়াম আয়। এতে অনেক কর্মকর্তাই অতিরিক্ত প্রিমিয়াম আয় দেখাতে প্রতারণার আশ্রয় নেয়।

তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী ৮ম শ্রেণি পাস হলেই একজন এজেন্ট হতে পারেন। পদোন্নতি পেয়ে সে এক সময় অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে যান। এতে আইনগত কোনো বাধা নেই। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত। বিমা খাতে শিক্ষিত ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম