শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > আটক হয়নি সেই অস্ত্রধারীরা

আটক হয়নি সেই অস্ত্রধারীরা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় বছরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একাধিকবার প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র হাতে দেখা গেলেও তাদের কাউকে গ্রেফতার হতে দেখা যায়নি। রবিবারও বর্ধিত ফি ও সান্ধ্য কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়ার সময় অস্ত্র হাতে দেখা গেছে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের গুলি ছুড়তে দেখা গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় সব সময়ই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে না পারার দোহাই দেওয়া হচ্ছে। এদিকে, রবিবারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ ও ছাত্রলীগ মোট ছয়টি মামলা করে যাতে আসামি করা হয় মোট ৪৭৫ জনকে। এর ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা গেছে, রবিবারের ঘটনার পর এ পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। তবে রাজশাহী নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেছেন, আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীরা অস্ত্রধারীদের পাশে পুলিশের থাকার দাবি করলেও তা অস্বীকার করেন পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান। তিনি সোমবার বলেন, হামলাকারীদের আশপাশে পুলিশ ছিল না। ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণত হামলায় জড়ায় না। যদি কেউ আঘাত করতে আসে সেখানে আমাদের ছেলেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে মাত্র। রবিবারের ঘটনাকে ‘অনাকাক্সিক্ষত’ দাবি করে তিনি বলেন, জড়িত নেতা-কর্মীদের বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আমরা সুপারিশ করেছি।

এদিকে, বর্ধিত ফি ও সান্ধ্য কোর্স প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও দৃশ্যত এর বিপক্ষে শিক্ষকদের অবস্থান। রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও এক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত এবং সরকারপন্থি শিক্ষকরা একাট্টা। শুধু তাই নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায়ও প্রতিবাদ আসেনি তাদের কাছ থেকে। তাদের দাবি, আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসে যারা ‘নৈরাজ্য’ সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সোমবার সিনেট ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে ‘শিক্ষক লাঞ্ছনা, ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য ও তাণ্ডবের প্রতিবাদে’ মানববন্ধনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। সমিতির সভাপতি প্রফেসর মু. আজহার আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মু. সাইফুল ইসলাম, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক আনন্দ কুমার সাহা, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের অধ্যাপক আশরাফউজ্জামান খান সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। অধ্যাপক সুলতান বলেন, সান্ধ্য কোর্স বন্ধ ও বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলন করে আসছিল।

একপর্যায়ে রবিবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারা শিক্ষকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে, এমনকি শিক্ষকদের বাসভবন ও অফিসে হামলা চালায়। যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করব। শিক্ষক সমিতির সভাপতি আজহার আলী বলেন, আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেনি। শিক্ষার্থীদের সান্ধ্য কোর্স বাতিলের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক মনে হয়নি। তাই যারা শিক্ষার্থী রূপে শিক্ষকদের বাসায় ভাঙচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছি। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক শামসুল আলম সরকার বলেন, আমরা এক হয়েছি কথাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। তিনি বলেন, শিক্ষক সমিতির সদস্য হিসেবে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলাম।

আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আয়তুল্লাহ খোমেনী বলেন, নীতি আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া লজ্জাকর। যাদের এতদিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখেছি অথচ তারাই নিজেদের স্বার্থে একাকার হয়ে গেলেন। ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরাফাত রেজা আশিক বলেন, যেখানে সব শিক্ষার্থী আন্দোলন করছে সেখানে শিক্ষকদের পক্ষপাতিত্ব নেওয়া শিক্ষার্থীদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিন বলেন, যারা সহিংসতা ও নৈরাজ্যকর পরিবেশ তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থা মূলত তাদের জন্য। আমরা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান কখনো নেইনি, ভবিষ্যতেও নেব না। এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্র হাতে চড়াও হওয়ার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ছাত্রলীগ সংগঠনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নেতাকে বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহম্মেদ সেতু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমন। রবিবারের ওই ঘটনার পর সোমবার রাতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দুজনকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।(বিডি-প্রতিদিন)