রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > আজ শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী একুশে বইমেলা

আজ শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী একুশে বইমেলা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: অপেক্ষার পালা শেষে আজ ভাষার মাসের প্রথম দিন ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬। মাসব্যাপী এ গ্রন্থমেলার আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

মেলার দুই প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ স্টলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে কয়েকটি স্টলে রোববারও ঘুরে রংয়ের কাজ করতে দেখা গেছে। শেষপর্যায়ে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের কাজও। এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, এবারে বইমেলায় প্রয়োজনে ব্যক্তিকে বিশেষ নিরাপত্তা দেয়া হবে।

মহান ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদের স্মরণে বাংলা একাডেমি গত ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে আয়োজন করে আসছে বিশ্বের দীর্ঘসময়ব্যাপী বইমেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলার।

আজ ১ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টায় মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬-এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি গ্রন্থমেলা পরিদর্শন করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিদেশী অতিথি থাকবেন ব্রিটিশ কবি ও জীবনানন্দ অনুবাদক জো উইন্টার, চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক-গবেষক রিবেক মার্টিন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সমিতির (আইপিএ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রিচার্ড ডেনিস পল শার্কিন এবং জোসেফ ফেলিক্স বুরঘিনো প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করবেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পৌত্রী অনিন্দিতা কাজী। স্বাগত বক্তৃতা করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৫ প্রদান করা হবে। উদ্বোধন মঞ্চে সৈয়দ শামসুল হক রচিত এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা’ বইয়ের ব্রেইল ও অডিও সংস্করণ প্রকাশিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আধুনিক বাংলা অভিধান’ তুলে দেয়া হবে।

২০১৫-এর ৩ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি পূর্ণ করেছে তার ঐতিহ্য ও গৌরবের হীরকজয়ন্তী। এবারের গ্রন্থমেলার মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী’। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ৩ ফেব্রুয়ারি ২টি অধিবেশনে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন এবং মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব। এতে বাংলা ও বিশ্বকবিতা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্লোভাকিয়া, মরক্কো, সুইডেন, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, ভারত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজন্মের কবিরা কবিতা পাঠ করবেন।

গতবারের মতো এবারও গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। ৪ লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুট আয়তনের বিশাল মেলায় একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২টি প্রতিষ্ঠানকে ১১১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪০টি ইউনিট, অর্থাৎ মোট ৪০২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৫১টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৯২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১৫টি গুচ্ছে সজ্জিত করা হয়েছে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।

এবার শিশুকর্নার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। একাডেমির নজরুল মঞ্চে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকছে।

গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের আটটি পথ থাকবে।

মেলা প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চানখাঁরপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে।

২ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাংকন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

এদিকে, ডিএমপি কমিশনার বলেন, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন কোনো নাগরিক, লেখক, প্রকাশক বা ব্লগার যদি মনে করেন যে নিরাপত্তা প্রয়োজন তাহলে তাৎক্ষণিক পুলিশ কন্ট্রোল রুমে জানাবেন। সেখান থেকে তাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।

এজন্য পুলিশ সব সময় প্রস্তুত থাকবে। রোববার মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে অমর একুশে বইমেলার নিরাপত্তাসংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের বইমেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বইমেলা প্রাঙ্গণে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে সূর্যাস্তের আগেই বইমেলা বেস্টনির বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেউ অবস্থান করতে পারবেন না। বইমেলা চত্বরে ২ শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা মনিটরিং করা হবে। ডিএমপি কমিশনার জানান, মেলায় আগতদের সুবিধার্থে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ থাকবে।

১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর ৩২টি বই সাজিয়ে গ্রন্থমেলার গোড়াপত্তন করেন।