স্টাফ রিপোর্টার ॥
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। ৬১ হিজরি সনের মহররমের ১০ তারিখে ফোরাত নদীতীরের কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র এবং হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতেমার (রা.) পুত্র ইমাম হুসাইন (রা.)। আরবিতে আশুরা অর্থ ১০। শোকের এ দিনটি তাই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে ‘আশুরা’ নামে পরিচিত।
শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা বিশেষভাবে পালন করলেও সব মুসলমানের কাছেই এ দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস শরিফ ও প্রাচীন ধর্ম ইতিহাসমতে, মহররমের ১০ তারিখ বা আশুরাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐশী ঘটনা ঘটেছে। দিনটি তাই মুসলমানদের পাশাপাশি ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছেও তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলমানদের বিশ্বাস, এ দিনে কেয়ামত হবে। পবিত্র আশুরাকে তাই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। আশুরা উপলক্ষে আজ রয়েছে সরকারি ছুটি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রে প্রকাশ পাচ্ছে বিশেষ নিবন্ধ।
হজরত আলীর (রা.) মৃত্যুর পর খলিফা হন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)। জীবদ্দশাতেই তিনি তার পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। রাসূল (সা.)-এর প্রবর্তিত ব্যবস্থায় বংশানুক্রমিক শাসন বা রাজতন্ত্র নিষিদ্ধ। তাই ইয়াজিদের কাছে বাইয়্যাত নিতে অস্বীকৃতি জানান ইমাম হুসাইন (রা.)। প্রতিবাদে তিনি মদিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। মক্কা থেকে তিনি কুফার উদ্দেশে হিজরত করেন। পথে কারবালায় তার কাফেলা থামে। ইমাম হুসেইন (রা.) ও তার সঙ্গীদের আটক করে মদিনায় ফিরিয়ে নিতে উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে।
আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শিবির অবরোধ করে ইয়াজিদ বাহিনী। তারা পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। শিবিরের নারী-শিশুসহ সবাই তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েন। কিন্তু ইমাম হুসাইন (রা.) আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানান। ১০ মহররম ইয়াজিদের বাহিনীর অবরোধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইমাম হুসাইন (রা.)। অসম এ যুদ্ধে ইমাম হুসাইন (রা.) ও তার ৭২ সঙ্গী শাহাদাতবরণ করেন। সিমার ইবনে জিলজুশান মহানবীর (সা.) প্রিয় দৌহিত্রের কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে হত্যা করে।
১০ মহররমেই বেহেশত থেকে পৃথিবীতে নির্বাসিত হওয়ার পর হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়ার (আ.) তওবা আল্লাহ কবুল করেন। নমরুদের আগুন থেকে নবী ইব্রাহিম (আ.) মুক্তি পান, হজরত মুসার (আ.) শত্রু ফেরাউন বা ফারাও নীল নদে ডুবে যায়। হজরত নূহের (আ.) নৌকা প্রলয়ঙ্করী ঝড় থেকে রক্ষা পায়। হজরত দাউদের (আ.) তওবা কবুল হয়। হজরত আইয়ুব (আ.) রোগমুক্ত হন। মহানবী (সা.) আশুরার দিন রোজা রাখতেন।
এসব কারণে আশুরার দিন সুন্নি মুসলমানরা রোজা রাখেন। শিয়া মুসলমানরা মার্সিয়া ও মাতমের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করেন। আশুরা উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও পুরান ঢাকার হোসেনী দালান এলাকা থেকে তাজিয়া মিছিল করা হবে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকেও বের হবে জশনে জুলুশ। গত বছর আশুরার আগের রাতে হোসেনী দালানে সন্ত্রাসী হামলা হয়। তাই এ বছর তাজিয়া মিছিলে কড়া নিরাপত্তা থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ছুরি, চাকু বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার থেকেই মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকায় শুরু হয়েছে তাজিয়ার প্রস্তুতি।