বিনোদন ডেস্ক ॥
নব্বই দশকের শুরুতে তার যাত্রা। এরপর প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তিনি মুগ্ধ করে রেখেছেন সৌন্দর্যে, আকর্ষণীয় ফিগারে, ভুবন ভুলানো হাসিতে ও চুম্বকের মতো ব্যক্তিত্বে।
এ দেশের মডেলিংয়ে কিংবদন্তি নোবেল। তাকে কেউ বলেন দেশের প্রথম সুপারস্টার মডেল, কেউ আবার মডেলিং জগতের রাজপুত্র বলে ডাকেন। শুধুমাত্র মডেলিং দিয়ে দেশের অন্যতম স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন এই তারকা।
আজ ২০ ডিসেম্বর, নোবেলের জন্মদিন। দেখতে দেখতে জীবনের ৫২ বছর পূর্ণ করে দিলেন তিনি। পা রাখলেন ৫৩ বছরে। এই বয়সেও তিনি তরুণ, চঞ্চল আর হার্টথ্রব।
নোবেলের পুরো নাম আদিল হোসেন নোবেল। ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে তার জন্ম। চট্টগ্রামেই পড়াশোনার পাঠ চুকিয়েছেন। তিনি ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এবং জেভিয়ার লেবার রিলেশনস ইনস্টিটিউট থেকে ‘কি অ্যাকাউন্টস ম্যানেজমেন্ট’-এর ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নোবেল।
সুপারস্টার মডেল
যাত্রাটা তার সাফল্যের ছিল না। এমবিএ শেষ করে ঢাকায় এসে এক বড় বোনের পরামর্শে ফ্যাশন জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন নোবেল। ১৯৯১ সালে বরেণ্য নির্মাতা ও অভিনেতা আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় কোমল পানীয় স্প্রাইটের বিজ্ঞাপনের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। কিন্তু সেটি প্রচার হয়নি। এ নিয়ে খুব মন খারাপ হয়েছিল। স্বপ্নভঙ্গ বলে কথা। তবে আফজাল হোসেন তাকে সাহস দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘সুযোগ আবার আসবে’।
সেই সুযোগ আফজাল হোসেনই দিয়েছিলেন নোবেলকে। আফজাল হোসেনের নির্দেশনাতেই আজাদ বলপেনের বিজ্ঞাপনে মডেল হন তিনি। সেই বিজ্ঞাপন দিয়েই তারকা বনে গেলেন সুদর্শন নোবেল। এরপর আর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
দিনে দিনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশের মডেলিং জগতের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে। নোবেল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এককভাবে। জুটি বেঁধেও সফল হয়েছেন তিনি। মডেলিং জগতেও যে জুটি গড়া যায় এবং প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায় সেটাও তিনি দেখিয়েছেন। জুটি বেঁধে সফল হয়েছেন মডেলিং জগতের সম্রাজ্ঞী মৌ’র সঙ্গে। এছাড়া তানিয়া, সুইটি থেকে তিশারাও নোবেলের বিপরীতে আলো ছড়িয়েছেন।
নোবেলের গুণ, সবার সঙ্গেই দারুণ মানিয়ে যেতেন তিনি। মৌ-নোবেল জুটিকে দেশের মডেলিং জগতের সবচেয়ে সুপারহিট জুটি ভাবা হয়। কেয়ার নানা রকম পণ্যের বিজ্ঞাপনে তারা তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন।
এছাড়া ‘তোমার জন্য মরতে পারি, ও সুন্দরী’ কিংবা ‘নিশিথে কল কইরো আমার ফোনে’, অথবা ‘রুপসীর রেশমীর চুলে’র মতো জিঙ্গেলভিত্তিক বিজ্ঞাপনগুলো নোবেলকে দারুণ জনপ্রিয়তা দিয়েছে।
অভিনেতা নোবেল
মডেল হিসেবে আকাশচুম্বী যখন চাহিদা তখন টিভি নাটকের অভিনয়ে আসেন নোবেল। সেখানেও পেয়েছেন খ্যাতি। আজকাল যে প্যাকেজ নাটকের জয়জয়কার সেই প্যাকেজ নাটকের প্রথম নায়ক নোবেল। ১৯৯৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বিটিভিতে প্রচার হয় আতিকুল হক চৌধুরী পরিচালিত ‘প্রাচীর পেরিয়ে’ নামের নাটক। কাজী আনোয়ার হোসেনের গল্প অবলম্বনে নির্মিত এই নাটকটিই দেশের প্রথম প্যাকেজ নাটক। এখানে মাসুদ রানা চরিত্রে অভিনয় করেন নোবেল। আর নায়িকা সোহানা চরিত্রে দেখা যায় বিপাশা হায়াতকে।
এরপর ক্যারিয়ারে বহু নাটকে অভিনয় করে সাফল্য পেয়েছেন নোবেল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কুসুম কাঁটা, ছোট ছোট ঢেউ, তাহারা, প্রিমা তোমাকে, শেষের কবিতার পরের কবিতা, বৃষ্টি পরে, নিঃসঙ্গ রাধাচূড়া, তুমি আমাকে বলোনি, হাউজ হাজব্যান্ড, সবুজ আলপথে ইত্যাদি।
বর্তমানে শোবিজে খুব একটা নিয়মিত নন নোবেল। ফাঁকে ফাঁকে বিশেষ দিবসে তিনি হাজির হন নাটক-টেলিছবিতে। সর্বশেষ ‘মেঘ বলেছে যাবো’ নামের একটি নাটকে কাজ করেছেন তিনি। শেখ সেলিমের পরিচালনায় চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার বিপরীতে এই নাটকটি প্রচার হবে আসছে ঈদুল ফিতরে।
সিনেমার নোবেল
এক জীবনে অসংখ্যবার সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন নোবেল। অনেকেরই হয়তো জানা নেই, যে ছবি দিয়ে ইমন থেকে সালমান শাহ’র জন্ম সেই ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার জন্য প্রস্তাব পেয়েছিলেন নোবেল। তিনি সেটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সিনেমায় অভিনয় করবেন না বলে। সত্যিই তিনি কখনোই সিনেমায় অভিনয় করেননি। তবে সালমান ছিলেন নোবেলের ভাল বন্ধু। দুজনের মধ্যে নিয়মিতই যোগাযোগ হতো।
খেলোয়াড় নোবেল
মডেলিং ও অভিনয়ের পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি ভীষণ আগ্রহ নোবেলের। বিশেষ করে ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা গভীর। চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই ক্রিকেটের সঙ্গে সখ্য তার। স্কুল ক্রিকেট লিগে খেলেছেন। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সেখানে একটি দল গঠন করেন। চট্টগ্রামের বাইরেও খেলতে যেতেন। এছাড়া আন্তঃকলেজ বিভিন্ন ম্যাচ খেলেছেন। একটা সময় ভাবতেনও ক্রিকেটার হবেন বলে।
গানের নোবেল
অনেক গুণের একজন সফল মানুষ নোবেল। তবে অনেকেরই হয়তো জানা নেই নোবেল ভালো গান করেন। তিনি গানও লিখেছেন। এ প্রসঙ্গে নোবেল নিজেই জানিয়েছেন, তার কথা ও সুরে একটি কোমলপানীয়ের বিজ্ঞাপনচিত্রের সংগীতায়োজন করেছিলেন প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চু। এছাড়া শাকিলা জাফরের সঙ্গে টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানেও গান করেছেন তিনি। মৌলিক গান করার ইচ্ছে আছে তার। হঠাৎ কোনো একদিন হয়তো পাওয়া যাবে মৌলিক গানের গায়ক নোবেলের খবরও।
চাকরিজীবী নোবেল
নব্বই দশক থেকেই একজন কর্পোরেট কর্মজীবী নোবেল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান রবিতে কর্মরত আছেন। একজন আপাদমস্তক চাকরিজীবী হয়েও শোবিজে এভাবে জনপ্রিয়তা নিয়ে কাজ করে যাওয়ার নজির বিরল এক দৃষ্টান্ত। এ দারুণ অনুপ্রেরণাও।
ব্যক্তি নোবেল
সংসার-সন্তান নিয়ে আনন্দ-উৎসবে দারুণ কেটে যাচ্ছে নোবেলের জন্মদিন। তার স্ত্রীর নাম শম্পা। বড় মেয়ে আর ছোট ছেলে। ব্যক্তিজীবনে নোবেল একজন শৃআজাদ বলপেনের বিজ্ঞাপনে মডেল হন নোবেল শৃঙ্খলাবদ্ধ মানুষ। রুটিন মেনে চলেন প্রতিটি মুহূর্তে। প্রতিদিন ব্যায়াম, সুইমিং, জিম করেন। প্রতিদিন সঠিক সময় খাওয়া, অফিস করেন। এটাই চিরতরুণ নোবেলের রহস্য।