শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > আজ থেকে সরকার অবৈধ – খালেদা জিয়া : অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা নাগরিক দায়িত্ব

আজ থেকে সরকার অবৈধ – খালেদা জিয়া : অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা নাগরিক দায়িত্ব

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ২৫ অক্টোবর থেকে এই সরকার অবৈধ। অবৈধ এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এখন সবচেয়ে প্রয়োজন হলো অত্যাচারী, দুর্নীতিবাজ এই সরকারকে সরিয়ে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য শিক্ষক-কর্মচারীসহ পেশাজীবীদের আন্দোলনে নামারও আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিরোধীদলীয় নেতা এসব কথা বলেন। সমাবেশে শিক্ষক নেতারা তাদের বক্তৃতায় দলীয় সরকারের অধীনে বর্তমান সরকার একতরফা নির্বাচন করতে চাইলে সে নির্বাচনে শিক্ষকরা কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না বলে ঘোষণা দেন।
বেলা ২টায় শিক্ষকদের এ সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে এসে উপস্থিত হন। এ সময় শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। সেখান থেকে তিনি শিক্ষকদের সমাবেশস্থলে এসে উপস্থিত হন। এ সময় শিক্ষক-কর্মচারী ও পেশাজীবী নেতাকর্মীরা করতালি, স্লোগান ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকে বরণ করে নেন। চাকরি জাতীয়করণ, নন-এমপিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা, খসড়া শিক্ষা আইন বাতিল, চাকরিচ্যুত শিক্ষক-কর্মচারীদের পুনর্বহাল, একতরফা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন না করা এবং পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধির দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট।
সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত শিক্ষক নেতারা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরে বক্তৃতা করেন।
শিক্ষকদের এ সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ২৫ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। অনেক প্রতীক্ষার পর গতকাল শর্তসাপেক্ষে প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে শিক্ষকদের এ সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা প্রেস ক্লাবের আশপাশে অবস্থান নেয়। তবে গতকাল সমাবেশস্থল থেকে কাউকে আটক করার খবর পাওয়া যায়নি।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিরোধীদলীয় নেতা সরকারের উদ্দেশে বলেন, আজকের পর থেকে আপনার সরকার বৈধ নয়। আপনারা অবৈধ সরকার। তিনি বলেন, এতদিন সরকার বলেছে, নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলা দেন, ফর্মুলা দেন, এখন আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, সরকার এখন তা নিয়ে টালবাহানা করছে। সাংবিধানিক পন্থায়ও আমাদের এই প্রস্তাব বিবেচনা করা সম্ভব উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, প্রস্তাবিত এ নির্দলীয় সরকারের উপদেষ্টদের নির্বাচিত করে নিয়ে এলে কোনো সমস্যা থাকবে না। দেশে এখনও প্রচুর শিক্ষিত, যোগ্য ও নিরপেক্ষ মানুষ আছেন, যারা অন্তর্র্বতী সরকারে কাজ করতে পারেন। তাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন।
বল এখন সরকারের কোর্টে—এমন মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ক্ষমতায় গেলে আপনারদের বাদ দেব না। আপনাদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করব। আসুন, আমরা দেশ রক্ষায়, গণতন্ত্র রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করি।

সরকার চিরতরে ক্ষমতায় থাকতে চায়
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সংবিধান সংশোধনের কোনো দরকার ছিল না। কারণ তত্ত্বাবধায়কের দাবি ছিল জনগণের। এর জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছে, গান পাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। আমরা জনগণের দাবির মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিলাম। বিগত দিনে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু সরকার চিরতরে ক্ষমতায় থাকার জন্য এটি বাতিল করেছে। এর আগে তারা বাকশাল কায়েম করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। তিনি বলেন, যেখানে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয় না, নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয় না, সেখানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে আবার ক্ষমতায় আসার চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে দিন। আপনাদের এ স্বপ্ন পূরণ হবে না। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সরকারকে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। কারণ দলীয় নির্বাচনে কোনো বাহাদুরি নেই।

আজকের সমাবেশে বাধা দিলে দায় সরকারের
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার জন্য সরকার কথায় কথায় ১৪৪ ধারা জারি করছে। সরকারকে ধানাইপানাই না করে অবিলম্বে মিটিং করার পারমিশন দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আইন মানি। আমরা নয়া পল্টনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। আমরা অশান্তি-বিশৃঙ্খলা চাই না। এই সমাবেশে বাধা দেবেন না। বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করলে এর দায়দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। এ সময় তিনি শিক্ষকসহ পেশাজীবীদের আজকের সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজকে দীর্ঘ বক্তৃতা নয়, আগামীকালকের সমাবেশে বক্তৃতা হবে। তবে খালেদা জিয়া যখন এ বক্তব্য রাখছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপিকে কাল শুক্রবার বেলা দুইটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ শতভাগ এগোবে
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার নয়, এ সরকার আওয়ামী লীগের সরকার। তারা দলের জন্য কাজ করছে। তারা বলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ পিছিয়ে যাবে। আসলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ পিছিয়ে নয়, দেশ শতভাগ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, দেশে বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানি নেই। এ সরকারের আমলে কেউ কাজকর্ম ও চাকরি পায় না, চাকরি তো পায় আওয়ামী লীগের লোকজন। আওয়ামী লীগ নেতারাই সব টেন্ডার বাগিয়ে নেন। তাই প্রয়োজন জনগণের ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা, যারা সবার জন্য কাজ করবে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার সভা-সমাবেশ করার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। টকশো করতে দিচ্ছে না। টেলিভিশনে মত প্রকাশ করতে দেয়া হচ্ছে না—এটা কি গণতন্ত্র? তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, রিমান্ডে নিয়ে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। প্রতি পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এই সরকার।

সরকার ডাকাতি করেছে
খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় এসে ডাকাতি করেছে। সরকারের লুটপাট ও ডাকাতির কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেছে। শেয়ারবাজার, ডেসটিনি, হলমার্ক ও ব্যাংকের টাকা লুট করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক লুট করা হয়েছে। যার কারণে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। এই সরকারের কাছ থেকে জনগণ এখন মুক্তি চায়। এজন্য প্রয়োজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া।

শিক্ষকদের সুনাগরিক তৈরি করতে হবে
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত শিক্ষক নেতারা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরে বক্তৃতা করেন। শিক্ষকদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আজকের সমাবেশে শিক্ষকদের আশ্বাস নয়, সহযোগিতা চাই। ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে সবাইকে নিয়ে ঐক্যের রাজনীতি করব। সেখানে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হবে শিক্ষা। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, চাকরি জাতীয়করণসহ আপনাদের দাবি মানা হবে।
এজন্য শিক্ষকদের শুধু বেতন-ভাতা নিলেই হবে না। ছেলেমেয়েদের সুশিক্ষা দিয়ে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। দেশে সুনাগরিক তৈরি করতে হবে।
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লা বুলু, ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন এমপি, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতা প্রিন্সিপাল রেজাউল করিম, মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের মাওলানা দেলোওয়ার হোসেন, আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আশরাফুল হক, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব প্রকৌশলী হারুন-অর রশিদ, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ। এছাড়া শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলা কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তৃতা করেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করেছে। তাদের দিন শেষ। নৈতিকতা থাকলে তাদের আজকের মধ্যে পদত্যাগ করা উচিত ছিল। সরকার তা করেনি। কারণ তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। এ সময় তিনি বলেন, আজ নয়াপল্টনে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ হবেই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সামনে শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষকদের জন্য কিছুই করেনি, যা করেছে বিএনপি জোট সরকার। এজন্য বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আনতে আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান শিক্ষকবিরোধী সরকারকে হটানোর আহ্বান জানান তিনি।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, বর্তমান সরকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারারুদ্ধ এবং আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করেছে। তারা সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য সরকার পতনের মাধ্যমেই বন্ধ মিডিয়া চালু ও সাংবাদিকদের দাবি পূরণ করা হবে।
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, সরকার বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিচ্ছে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিরোধী দল একটি প্রস্তাব দিলেও তা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছে।