বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে প্রতারকচক্র সক্রিয় রয়েছে। মাঝেমধ্যে কয়েকজন ধরা পড়লেও বাকিরা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। প্রকাশ্যে পুলিশের সরঞ্জাম বিক্রি হওয়ায় এসব প্রতারক তা ব্যবহার করে প্রতারণা করছে। সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে লুটে নিচ্ছে সর্বস্ব। কখনো কখনো গুমের ঘটনাও ঘটাচ্ছে এরাই। মুক্তিপণ দাবি করেও হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
জানা গেছে, রাজধানীর পলওয়েল মার্কেট ও রজনীগন্ধা সুপার মার্কেটে অবাধে বিক্রি হয় র্যাব-পুলিশের পোশাক হাতকড়াসহ সব ধরনের সরঞ্জাম। পোশাক ও সরঞ্জাম বিক্রির ব্যাপারে নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। তারা পুলিশ বা র্যাবের পোশাক পরে ছিনতাই, ডাকাতি, খুন ও অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছেন পুলিশ ও র্যাবের প্রকৃত সদস্যরা।
মার্কেটে পুলিশ-র্যাবের কটি, হাতকড়া, লাইটিং ডিটেক্টর, ব্যাচ, বাঁশি, ক্যাপ, বেল্ট, জুতা, পিস্তল কাভারসহ সব সরঞ্জামই বাইরের লোকের কাছে বিক্রি করা হয়। অথচ পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, পরিচয়পত্র ছাড়া কারো কাছে কোনো সরঞ্জাম বিক্রি করা যাবে না। সূত্র জানায়, চাকরিচ্যুত বা অবসরে যাওয়া কিছু পুলিশ সদস্য তাদের ব্যবহৃত পোশাক জমা না দিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের পোশাক ও সরঞ্জাম ব্যবহারে কড়াকড়ি না থাকায় অপরাধীরা অপরাধ ঘটানোর সুযোগ পাচ্ছে। একসময় তালিকাভুক্ত দোকান ছাড়া অন্য কোথাও পুলিশি সরঞ্জাম বেচাকেনা করা যেত না। যে কেউ ইচ্ছা করলেই দোকান থেকে পুলিশি সরঞ্জাম কিনতে পারত না। পুলিশ সদস্যদেরও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে পোশাক ও সরঞ্জাম কিনতে হতো। এখন যে কোনো ব্যবসায়ী পুলিশি সরঞ্জাম কেনাবেচা করতে পারেন, যে কেউ কিনতে পারেন।
২০১২ সালে এক কার্যনির্বাহী আদেশে পুলিশের পোশাক ব্যবহার সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। এর পরও বিভিন্ন সিকিউরিটি কোম্পানি, পাড়া-মহল্লার দারোয়ান ও নাইটগার্ডরা অহরহ র্যাব-পুলিশের মতো পোশাক ব্যবহার করছে। তারা পুলিশের মতো হাতকড়া, র্যাংক ব্যাজও ব্যবহার করছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
পলওয়েল মার্কেটের বেশকিছু দোকানে গিয়ে পুলিশের বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে চাইলে ব্যবসায়ীরা অনায়াসে বিক্রি করতে রাজি হন। সাংবাদিক পরিচয় জানার পর ভোল পাল্টে ফেলেন তারা। বলেন, পুলিশের পরিচয়পত্র না দেখে বিক্রি করা যাবে না।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, পলওয়েল মার্কেটে কিছু দোকান নির্দিষ্ট করা আছে। ওই সব দোকান থেকে পুলিশ সদস্যরা পোশাক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে পারেন। তবে খোলাবাজারে সহজলভ্য হওয়ায় এসবের অপব্যবহার হচ্ছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর মতো সাপ্লাই কোরের মাধ্যমে পুলিশের সরঞ্জাম বেচাকেনার ব্যবস্থা করলে প্রতারকরা সুযোগ পেত না। যারা প্রতারকদের কাছে সরঞ্জাম বিক্রি করছে তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পুলিশের সরঞ্জামসহ ধরা পড়া ১১ প্রতারক পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে পুলিশের পোশাক ব্যবহার করে প্রতারণার কথা স্বীকার করেন। তারা জানান, পলওয়েল মার্কেট ও রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট থেকে সহজেই সরঞ্জাম কেনা যায়। তবে এক হাজার টাকার জিনিসের জন্য অন্তত চার হাজার টাকা দিতে হয়। দোকানিরা পরিচয়পত্র দেখে না।