শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > আইনি কাঠামো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলে তা নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা: সুজন

আইনি কাঠামো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলে তা নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা: সুজন

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সরকার মানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার মানেই প্রশাসন। এগুলোর যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য একটি আইনি কাঠামো দরকার। আইনি কাঠামো দিয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করা দরকার। আইনি কাঠামো কারও বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলে সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়।

রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশন কোন সময় আমাদের কথাগুলো আমলে নেয় নাই, তবে আমি আশা করি আমাদের সংসদ এগুলো আমলে নিয়ে কিছু জনস্বার্থে , সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা কিছু পরিবর্তন আনবে।

নির্বাচন কমিশন যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে তার কর্মকর্তারা কার্যকর হবে না এমন দাবি করে সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এখানে একটা বিহসয় এসেছে যে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা নিয়োগে পৃথক ক্যাডার পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এর সঙ্গে আমি ভিন্ন মত পোষণ করি না কিন্তু নির্বাচন কমিশন যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে তার কর্মকর্তারা কার্যকর হবে না।

সর্বশেষ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে আমরা অনেকেই ফিল্ড ট্রায়াল হিসেবে ধরেছিলাম উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সেখানে আমরা শুধুমাত্র যদি আচরণবিধির কথা বলি, এই আচরনবিধি এতো নগ্নভাবে লংঘন করা হয়েছে। এক সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র অন্য সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনে গিয়ে মিটিং মিছিল করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। এইটা কি কারও দরখাস্তের জন্য নির্বাচন কমিশনকে বসে থাকতে হয়? একটা টেলিফোন যদি জেলা প্রশাসকের কাছে যায় দুই ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে বের করে দাও, তাহলে কি সম্ভব হতো না? সম্ভব হতো! এই কঠোর বার্তা কিন্তু দেওয়া হয়নি। বার্তা গেছে ভিন্ন বার্তা। আগামী নির্বাচন নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে আশাবাদি মানুষ। যখন কোনও রাস্তা থাকেনা, বাঙালি কিন্তু বেরিয়ে আসে। যেমনটা ঘটেছে ৯০তে, ৯৬ এর ফেব্রুয়ারিতে, যেমনটা হয়েছে ২০০৬ এর শেষ দিকে।বাঙালি বেরিয়ে এসেছিল, তারা বেরিয়ে আসবে।

গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বর্তমানে একটি অনির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করছে। তাদের অনুমতি ছাড়া একটি গাছের পাতাও নড়েনা। সুতরাং এই আইন সংশোধন করেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না। তারা বিরোধী মতকে দমন করছে, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতেও যেতে দেয় না। সুতরাং এই নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের কাছে এই আদেশ সংশোধন করেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব মানে জনগণের ক্ষমতায়ন। ১৯৭২ সালের গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। যেখানে সংবিধান বলছে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, সেখানে এই ক্ষমতার চর্চা আসলে কিভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া হচ্ছে এটার আইনই হচ্ছে এই গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ।

তিনি বলেন, সংবিধান তো শুধু বলে দিচ্ছে প্রিন্সিপ্যালটা। মূল কথাটা হচ্ছে এদেশের মালিক জনগণ কিন্তু চর্চাটা কিভাবে হবে? জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় নেমে আসলো তখন আমরা বুঝেছি জনগণ যখন ক্ষমতা চর্চা করে সেটার চেহারা কী রকম হয়। অনেকেই সেসময় বলার চেষ্টা করেছেন শিক্ষার্থীরা আইন হাটে তুলে নিচ্ছে। এই গদবাধা কতগুলো কনসেপ্ট, যে জনগণ ক্ষমতা হাটে তুলে নিচ্ছে। জনগণের ক্ষমতা জনগণ হাটে তুলে নিলে অসুবিধা কী? ক্ষমতা তো জনগণেরই , আপনি তো প্রতিনিধিত্ব করেন জনগণের। তাই বলে জনগণ ক্ষমতা হাতে তুলে নিচ্ছে বলে তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেওয়ার আহ্বান করেছেন অনেকেই। কোনটা সরকার, কোনটা সরকার না এটাই আমরা অনেকে এখনও বুঝিনা। শিক্ষার্থীরা কি রাষ্ট্র ধারণার বাইরে? এই যে হাজার হাজার মানুষ তাদেরকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তারা কি রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে? ওই এক সপ্তাহ ধরে যেই ক্ষমতা চর্চা হয়েছে সেটাই মূলত জনগণের ক্ষমতা চর্চা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমন এক জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে এতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দল্কে শক্তি প্রদর্শনের দিকে যেতে হচ্ছে। ফলে দেশ এক গভীর সংকটের মুখে পড়েছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা আছে তাদের কোনও জবাবদিহিতা নাই। আমি মনে করি এই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করতে হবে এবং সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার, বেলা’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান প্রমুখ।