শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > অস্বাভাবিক নিচু দিয়ে উড়ছিল নিখোঁজ বিমান!

অস্বাভাবিক নিচু দিয়ে উড়ছিল নিখোঁজ বিমান!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ১০ দিন ধরে নিখোঁজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী বিমানটি নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর অন্তত আট ঘণ্টা আকাশে অবস্থান করছিল। দীর্ঘ এই সময়ে বাণিজ্যিক রাডারগুলোকে ফাঁকি দিতে অস্বাভাবিক নিচু দিয়ে উড়ছিল এটি। প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ গতকাল সোমবার এ খবর জানিয়েছে।

এদিকে নিখোঁজ বিমানটি থেকে সর্বশেষ পাওয়া বার্তা ‘অল রাইট, গুড নাইট’ অর্থাৎ সব ঠিক আছে, শুভরাত্রি—এটি কার কথা, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেক ধূম্রজাল। বিমানের ক্যাপ্টেন, তাঁর প্রথম সহকারী, নাকি ককপিটে (বিমানচালকের স্থান) তাঁদের সঙ্গে থাকা অন্য কেউ এ কথাগুলো বলেছিলেন, তা স্পষ্ট নয়।

বিবিসি জানায়, মালয়েশীয় কর্মকর্তারা আগে বলেছিলেন, শেষ কথাটি কার, তা তাঁরা জানেন না। কিন্তু এখন তাঁরা বলছেন, তাঁদের ধারণা, এটি সহ-পাইলট ফারিক আবদুল হামিদের।

মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী আহমাদ জাওহারি ইয়াহিয়া বলেন, শেষ কথাটি বিমানের দুটি যোগাযোগব্যবস্থার একটি বন্ধের আগে না পরে এসেছে, তাও স্পষ্ট নয়।

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ ও বার্তা সংস্থা এপি জানায়, বিমানের যোগাযোগব্যবস্থাগুলোর একটি বন্ধ হওয়ার পর ফ্লাইটের ককপিট থেকে কেউ শান্তভাবে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে ওই শেষ কথা বলেন। এ অবস্থায় পাইলটদের একজন বা উভয়েই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, নিখোঁজ বিমানটি পাঁচ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ছিল এবং রাডার যোগাযোগ এড়াতে সেটি ‘ট্রেইন মাস্কিং’ (পৃথিবীর প্রাকৃতিক বক্রতা বা প্রতিবন্ধকতা ব্যবস্থা) কাজে লাগায়।

মালয়েশিয়ার নিউ স্ট্রেইটস টাইমস পত্রিকাকে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি জানায়, বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর রাডার ফাঁকি দিতে স্বাভাবিক উচ্চতা থেকে অনেক নিচে নেমে আসে। এদিকে একটি সূত্র বলছে, উড়োজাহাজটি রাডারকে ফাঁকি দিয়ে তালেবাননিয়ন্ত্রিত এলাকা আফগান সীমান্তের দিকে উড়ে থাকতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমানটি স্বাভাবিক ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে হঠাৎ এত নিচ দিয়ে ওড়ার সময় মারাত্মক কিছু না ঘটলেও যাত্রীদের বিষয়টি নজরে আসার কথা ছিল। এ ব্যাপারে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর একজন সাবেক অ্যাটাশে (রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি) বলেন, ‘এত নিচু দিয়ে ওড়ার বিষয়টি যাত্রীদের কাছে নিশ্চিতভাবেই ধরা পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওপর থেকে জরুরি ভিত্তিতে নিচে নেমে আসা খুবই লক্ষণীয় বিষয়, তবে সাংঘাতিক বা প্রাণঘাতী কিছু নয়। নিচু দিয়ে উড়লে জ্বালানি আরও বেশি ক্ষয় হবে এবং আপনি ভূপৃষ্ঠের দৃশ্য দেখতে পাবেন।’

পত্রিকাটির মতে, নতুন যে তথ্য জানা গেছে তা হলো, বিমানের যোগাযোগব্যবস্থাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দেওয়ার পর ককপিট থেকে সর্বশেষ কথা শোনা যাওয়ায় এটি নিশ্চিত, নিখোঁজের ঘটনাটি অন্তর্ঘাতমূলক। ফলে ক্রু ও যাত্রীদের নিয়ে তদন্তকাজের দিকে পুলিশের মনোযোগ বেড়েছে।

মালয়েশীয় পুলিশ নিশ্চিত করেছে, চালক দুজন ছাড়াও বিমানটিতে থাকা ২৯ বছর বয়সী বিমান প্রকৌশলী মোহাম্মদ খায়রুল আমরি সেলামতের ব্যাপারে খুঁটিনাটি জানতে তদন্ত করা হচ্ছে।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘অন্য যাত্রী ও ক্রু সদস্যদের পাশাপাশি মোহাম্মদ খায়রুলের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। বোয়িংটিতে থাকা বিমান চালনায দক্ষতাসম্পন্ন এমন যে কারও দিকেই বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।’

মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিমানটিকে খুঁজে বের করার চিরুনি অভিযানে সর্বশেষ ২৬টি দেশ অংশ নিচ্ছে। স্থল, নৌ ও আকাশপথে চালানো হচ্ছে এ অভিযান। এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটটি ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে ৭ মার্চ রাতে নিখোঁজ হয়। কুয়ালালামপুর থেকে যাত্রার এক ঘণ্টা পর এটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স, দ্য টেলিগ্রাফ, প্রথমআলো।