শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > অসহায় এরশাদ

অসহায় এরশাদ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ডাকে সাড়া দিলেন না জাতীয় পার্টির এমপিরা। ৩৪ জনের মধ্যে মাত্র চার জন এমপি তার আহ্বানে যোগ দেন তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে। বিরোধী নেত্রী রওশন এরশাদও যোগ দেননি অনুষ্ঠানে। এতে ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন এরশাদ। তিনি বলেন, সবাইকে বলেছিলাম। কিন্তু ৩০ জন এমপি আসেননি। তারা কি জাতীয় পার্টির এমপি নন? এরশাদ তার বক্তব্যে অন্তত চার বার এমপিদের ফিরে আসার আকুতি জানান। তবে একইসঙ্গে সতর্ক বার্তাও উচ্চারণ করেন তিনি। বলেন, জাতীয় পার্টিকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা রুখতে হবে। শেষ বারের জন্য তাদের বলছি ফিরে এসো। তা না হলে রাজনীতিতে স্থান হবে না তোমাদের।

গুলশানের ইমানুয়েলস সেন্টারে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন জেলার নেতারা অংশ নেন। এরশাদ তৃণমূল নেতাদের কাছে জানতে চান এমপিরা না এলে কি দল চলবে না? জবাবে নেতারা উচ্চস্বরে জবাব দেন ওরা পচামাল। ওদের প্রয়োজন নেই। এসময় এরশাদ বলেন এটাই শুনতে চেয়েছিলাম। হতাশা কেটে যাচ্ছে। ভয় ও হতাশার কোন কারণ নেই। যারা আমার আদেশ-নির্দেশ উপেক্ষা করেছে, তাদের কথা মনে রাখতে হবে। আর যারা আমার আদেশ-নির্দেশ মেনে চলেছে তাদের ভাল-মন্দ দেখতে হবে আমাকেই। গত নির্বাচন যে বর্জন করেছিলেন তা গতকালও দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। যদিও কেন এরশাদ হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তা এখনও এক রহস্যই বটে। এদিন তিনি নিজেও এব্যাপারে খোলাসা করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, অনেক কথা বলার ছিল, বলতে পারছি না। কেন নির্বাচনে যেতে চাইনি, কেন যাইনি তা স্পষ্ট করে বলতে পারছি না। পরে একদিন বলবো।

এরশাদ বলেন, ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে সঙ্কট আমার পিছু ছাড়েনি। তবুও আঁতাত করে নির্বাচন করিনি। কারাগারে থেকে ৩৫টি আসন পেয়েছিলাম। সঙ্কটে পথ চলার অভ্যাস আমার আছে। কখনই জাতীয় পার্টির যাত্রা থেমে থাকেনি। তিনি বলেন, নির্বাচন হয়ে গেলো। নির্বাচন নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে, জাতীয় পার্টি সে নির্বাচন করবে। মামলার প্রসঙ্গ টেনে এরশাদ বলেন, ’৯০ সাল থেকে মামলায় ঝুলে রয়েছি। রায় দেয়ার দিনে বিচারক বদলানো হয়েছে।

এরশাদ তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, হতাশার কারণ নেই। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রয়োজন হবে। আমাদের দল সুদৃঢ় আছে। হতাশার মেঘ কেটে যাবে। আমরা আবারও রাজপথে নামবো। ভোট চাইবো। আমাদের পথ নিষ্কণ্টক। অন্যদের পথ নয়। কারা মাঠে আছে, কারা নেই তা তোমরা দেখতে পাচ্ছো। গ্রামে ফিরে যাও আমাদের কথা বলো। অনেক কথা বলার ছিলো, বলা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন এরশাদ। এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি আছে, থাকবে। আগামীতে নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাবো। আমার বুকের রক্ত দিয়ে লালন করেছি এই দল। সামান্য মোহের কারণে তোমরা বন্ধন ছিন্ন করো না। যারা বন্ধন ছিন্ন করেছে তাদের বলবো ফিরে আস। তা না হলে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৃণমূল নেতাদের বর্ধিত সভা থেকে এরশাদ জেলা কমিটিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ২০শে ফেব্রুয়ারির পরে তৃণমূলে যাবো। প্রতি জেলা ও উপজেলা কমিটির কাউন্সিল করে জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত করা হবে। এরশাদ বলেন, বহুদিন রাজনীতির বাইরে ছিলাম। বিশেষ কারণে তোমাদের সামনে আসতে পারিনি। তাই আজকে ডেকেছি। তোমরা আমার সঙ্গে আছো কিনা। এসেছো দেখে খুশি হলাম। খুব খুশি হলাম।

এর আগে উদ্বোধনী বক্তব্যে মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জাতীয় পার্টি টিকে থাকবে। জাতীয় পার্টিই আগামীতে ক্ষমতায় যাবে। যারা দলের সঙ্গে বেঈমানি করেছে স্যার তাদের ক্ষমা করে দিলেও আমরা তাদের ঘৃণা করবো। সভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, আবুল কাশেম, গোলাম হাবিব দুলাল, সালমা ইসলাম, সোহেল রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গত বছর ১২ই ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিএমএইচে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার ঠিক ৬০ দিন পর গতকাল এরশাদ নেতা-কর্মী ও গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন।

গত নির্বাচন থেকে এরশাদ হঠাৎ করে সরে গেলে ক্ষমতাসীন একটি মহল সামনে নিয়ে আসেন তারই স্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদকে। যদিও বরাবরই জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রত্যাশী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি, কিন্তু কার্ল মার্কস কথিত সেকেন্ড গড বহু কিছুই বদলে দিতে পারে। ক্রমশ ক্ষমতাসীনদের কাছে জাতীয় পার্টির প্রধান নেত্রী হিসেবে আবির্ভাব ঘটে রওশন এরশাদের। দলের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন তিনি। তার ভাই, সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদেরই একমাত্র তার প্রতি শতভাগ আনুগত্য বহাল রাখেন। বাকিরা যোগাযোগ রাখতে থাকেন বিভিন্ন জায়গায়। এরশাদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও তা প্রত্যাহার হয় না। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনও হয়ে যায়। না হতে চাইলেও সংসদ সদস্য হয়ে যান এরশাদ। নির্বাচনে পরাজয় জোটে জিএম কাদেরের কপালে। তবে ভোটের পর জাতীয় পার্টির প্রায় পুরো কর্তৃত্ব চলে যায় রওশনপন্থিদের হাতে। এরশাদকে অন্ধকারে রেখেই রওশন এরশাদ হয়ে যান বিরোধীদলীয় নেতা। তার গ্রুপের কারও কারও ভাগ্যে জোটে মন্ত্রিত্ব।

এরই মধ্যে চলে আসে মঞ্জুর হত্যা মামলার রায়ের বিষয়টি। রায়ের আগে বিবৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্যও প্রকাশ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। যদিও রায় শেষ পর্যন্ত ঘোষণা হয়নি। ১৯ বছরের পথপরিক্রমায় আবারও পরিবর্তন হয়েছে বিচারকের। ঘরে-বাইরে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নিজ দলেই তিনি এখন কোণঠাসা। কাজী জাফরের নেতৃত্বে তৈরি হয়ে গেছে আলাদা জাতীয় পার্টি। চতুর সেনানায়ক আর রাজনীতিবিদ এরশাদ অতীতে নানা সঙ্কটই উতরাতে পেরেছেন। এবার তার সর্বশেষ পরিণতি কি হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।

তাজুল জাপার দপ্তর থেকে আউট: এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদের পদ পরিবর্তন করে তাকে কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক হিসেবে গতকাল নিয়োগ দিয়েছেন। একইসঙ্গে দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে তাজুল ইসলাম চৌধুরী সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ নিযুক্ত হওয়ায় সুলতান মাহমুদকে এই দপ্তরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।(মানবজমিন)