জন্মগ্রহন ও পারিবারিক জীবন
মাওলানা আব্দুল করিম ইবনে মছব্বির ১৯৬৭ সালে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কালিজুরী গ্রামে এক ধর্মভীরু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মছব্বির এবং মাতার নাম মোছা. কমলা বেগম। তাঁর দাদার নাম আলহাজ্ব আব্দুর রশীদ। পারিবারিক তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি মেঝো। ধর্মভীরু নারী নাছিমা বেগমের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। তাঁর পাঁচ সন্তান,আরাফাত করিম, আবিদা করিম, শাহরিয়ার করিম,আদিল করিম, সাজিদা করিম।
ছোটবেলার মাওলানা এম এ করিম
বই ও ফুল বাগানের রাজা ছিলেন মাওলানা এম এ করিম।তিনি ছোট বেলা থেকেই তাঁর অভ্যাস ছিল বই এবং বাড়ীর বাগানে ফুল ও গাছ রোপন করতেন ।তাঁর পকেটে টাকা থাকলে না খেয়ে বই ক্রয় করত এবং বই কিনতে কখনও কৃপনতা করতেন না। বইয়ের রাজা ছিলেন মাওলানা করিম তার বই এবং পার্সোনাল লাইব্রেরী এর বিশাল সাম্রাজ্য ছিল ।
শিক্ষা ও কর্মজীবন
তাঁর পিতা প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মুছব্বিরের সাহেবের হাত ধরে জামিয়া ইসলামিয়া বুধবারী বাজার ক্বওমী মাদরাসাতে দ্বীনি শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। মক্তব পাঞ্জমে আজাদদ্বীনি এদ্বারায়ে তা’লিম বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেন। প্রখর মেধার অধিকারী মছব্বির পরবর্তীতে জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দেউলগ্রাম এবং ১৯৮৯ সালে তিনি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীট ঢাকা উত্তর রানাপিং আরাবিয়া হুসাইনিয়া মাদরাসা থেকে প্রথম বিভাগে দওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন। কওমী মাদরাসায় পড়াশোনাকালীন সময়ে তিনি ফুলবাড়ী আজিরিয়া আলিয়া সিনিয়র মাদরাসা থেকে দাখিল, আলিম, এবং সিলেট সরকারী আলীয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেন, এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করেন।
মাওলানা এম এ করিম, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ মসজিদের ইমাম ও খতীব হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে র্কমজীবন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি একটি ক্বওমী মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন। তিনি তখন থেকে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর লেখায় মুগ্ধ হয়ে বাংলার কিংবদন্তী লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর লেখা বই “শ্রাবণ মেঘের দিন” এ তাঁকে নিয়ে কিছু লেখেন। এছাড়া বিখ্যাত ঔপন্যাসিক কাশেম বিন আবু বকর ১৯৯৬ সালে “ধনির দুলালী” নামে লেখা বইটি তার নামে উৎসর্গ করেন । তিনি ২০০১ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন।পরবর্তীতে দীর্ঘদিন এম এ করিম হযরত শাহরাণ মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিশ্ব ইজতেমা মাঠে বিদেশী আলেমদের জন্য ইংলিশ , উর্দু ও আরবী বয়ানের বাংলা অনুবাদক ছিলেন ।
বিদেশ গমন ও নির্যাতনের শিকার
মাওলানা এম এ করিম ২০১৪ সালে ৫ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি জীবনের সবচেয়ে বিভীষিকাময় দিনগুলোর মুখোমুখী হয়েছেন। সেখানকার এক নারী ধারাণপ্রসূত জঙ্গি আখ্যা দিয়ে তাঁর উপর এবং তাঁর পরিবারের উপর চালানো হয় নির্যাতনের স্ট্রিমরোলার। ২০১৬ সালে ফরাসী ক্রুসেডার বাহিনী তাঁর পরিবারের ৬ সদস্যকেও নির্মমভাবে নির্যাতন করে। বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করে অনেকটা হত্যার পরিকল্পনা করে। তার শরীরে হাই টেকনোলজির অস্ত্র দিয়ে মাংসপেশীতে অনু ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয়। ইলেক্ট্রিক হেলমেট দিয়ে তাকে ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। ফ্রান্সের ফরাসী ক্রুসেডার বাহিনীর হাত থেকে অলৌকিক ভাবে আল্লাহর মেহেরবানীতে শেষ রক্ষা পান। উল্লেখ্য যে, মাওলানা করিমকে সিজদারত অবস্থায় যে ক্রুসেডার লাত্থি মেরেছিলো সে একটি সুড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। তাঁর অভিশাপে ফ্রান্সের বহুপূরোনা গির্জা আগুনে পূড়ে যায় । সর্বশেষে ফ্রান্সের স্বরাষ্টমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী সব কিছুর নির্যাতন ও অলৌকিক ভাবে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা শুনে তারা তাঁর ভক্ত হোন এবং ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর খরচে বিদেশে তাঁর চিকিৎসার দায়বহন করে ।
আধ্যাত্মিক নিয়ে গবেষনা
মাওলানা এম এ করিম ফ্রান্সে আধ্যাত্মিক জগতের বিষয়ে গবেষনা ও ধ্যান ধারনা করেন । সবসময় সাদা কাফনের কাপড় পরিহিত থাকেন ,কখনও গাছের নিচে নির্জন জায়গা ,কখনও পাহাড়ের জঙ্গলে যায় । অনেকেই তাকে পীর বলেন ,কিন্তু ওনি কখনো নিজেকে পীর মনে করেন না ।
দূঘটনা ও অলৌকিক বেঁচে যাওয়া
মাওলানা এম এ করিম ১৯৯৭ সালে ঢাকা -সিলেট বিমান দুর্ঘটনায় আল্লাহপাকের রহমতে বেঁচে যান। ২০০১ সালে ইন্ডিয়ার বিএসএফরা ধরে নিয়ে যায়, চেষ্টা করে গুলি করে মারতে কিন্তু তখনও সেই সাহসী মানুষটির বুকে গুলি চালাতে ব্যর্থ হয় তারা। ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড এর পাতায়া সিটিতে হেলিকাপ্টার দুর্ঘটনায়ও আল্লাহর অশেষ করুনায় বেঁচে যান।২০১০ সালে ঢাকা-সিলেট বাস দুর্ঘটনায় আল্লাহর কুদরতে বেঁচে যান। সকলের প্রিয় মানুষটি জীবনে নিঃস্বার্থ ভাবে অনেকের উপকার করেছেন। এমনকি অন্য ধর্মাবলম্বীদের রক্ত দিয়ে সাহায্য করেন। এখন তিনি সপরিবারে ফ্রান্সে বসবাস করছেন । তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
-সংকলনে
ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন
তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান (গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি), জাতীয় পার্টি
প্রেসিডেন্ট, আইসিটি এমপ্লোয়ি সোসাইটি অব বাংলাদেশ