রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যে ভেজাল, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যে ভেজাল, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: কোনমতেই রোখা যাচ্ছে না ভেজাল খাদ্যের থাবা। অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। চরম হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য। চিকিৎসকরা বলছেন, ভেজাল খাবারের ফলে শুধু এই প্রজন্মই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও। ক্রমাগত ভেজাল খাবার গ্রহণের ফলে পুরুষত্বহীন, পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকি অধিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে প্রতি বছর ৪৫ লাখেরও অধিক মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

খাদ্যে ভেজালের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘দেশে বর্তমানে খাদ্য ভেজালে ফরমালিন ও কার্বাইড ব্যবহৃত হচ্ছে। খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে ক্যানসার ও কিডনি নষ্টসহ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। দেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদেরকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল ফুড সেফটি অ্যাক্ট ২০১৩ ইতোমধ্যে প্রণয়ন ও কার্যকর করা হয়েছে।’

খাদ্য নিরাপত্তায় ন্যাশনাল ফুড সেফটি পলিসি চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘সম্প্রতি ন্যাশনাল ফুড সেফটি অথরিটি গঠিত হয়েছে এবং এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে সরকার বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে এবং এ কার্যক্রম দেশব্যাপী চলছে। একই সাথে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।’

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে বিভিন্ন খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করে অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০১১ সালে ৫ হাজার ৮১২টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ৫৪ শতাংশ, ২০১২ সালের ৫০টি খাদ্যপণ্যের ৫ হাজার ৩২২টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ৫৮৮টির মধ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে। যা মোট খাদ্যপণ্যের ৪৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৪২টি খাদ্যপণ্যের ৪ হাজার ৯৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ১৩৭টির মধ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে। যা মোট খাদ্যপণ্যের ৪৩ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। ২০১৪ সালের নমুনা পরীক্ষার কাজ চলছে জানা গেছে।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মনো-সোডিয়াম, ইথোফেন, ক্যালসিয়াম, কার্বাইড, ফরমালিন, চক পাউডার, ইউরিয়া, মার্জারিন, পশুর চর্বি, খনিজ তেল, রেডরি গুঁড়া, ন্যাপথলিন, সুডান কালার, ইটের গুঁড়া, কাঠের গুঁড়া, ডিডিটি, রোডামিন সাইক্লোমেটের মতো বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়ানিক মেশানো হচ্ছে। সরিষার তেলে মেশানো হচ্ছে রেডরি তেল, মরিচের গুঁড়া ও খনিজ তেল। সোয়াবিন তেলে মেশানো হচ্ছে পাম অয়েল ও ন্যাপথলিন। শুকনা মরিচের গুঁড়ায় বিষাক্ত সুডান কালার, চকলেটে স্যাকারিন ও মনোসোডিয়াম, জুসে কৃত্রিম রঙ, শুঁটটি মাছে ডিডিটি, সবুজ শাকসবজিতে কৃত্রিম রঙ দেয়া হচ্ছে। ফলের মধ্যে কলা, আম, পেঁপে, টমেটো, আনারস পাকাতে ও দীর্ঘসময় তাজা রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছেন ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথোফেন।

এছাড়াও চিনিতে চক পাউডার ও ইউরিয়া, দুধে ফরমালিন, ঘি ও মাখনে মার্জারিন ও পশুর চর্বি মেশানো হচ্ছে। কোমল পানীয়র সঙ্গে রোডামিন, মাছে ফরমালিন। এসবের পাশাপাশি খাবার সুস্বাদু করতে ব্যবহার করা হচ্ছে সাইক্লোমেট।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যের জন্য খাবারে যেকোন রাসায়ানিক পদার্থ ব্যবহারই ক্ষতিকারক। খাদ্যে ভেজাল থাকলে উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, কিডনির রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছেই। খাদ্যে ভেজালের কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল, ফলে খাদ্যে ভেজাল রোধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, ‘ন্যাশনাল ফুড সেফটি আইন ২০১৩-এর আওতায় খাদ্যে ভেজাল রোধে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় খাদ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। ওই কর্মকর্তারা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে এ বিষয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন।’ বাংলামেইল২৪ডটকম