রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > অভিযোগ সত্য হলে প্রমাণ করুন

অভিযোগ সত্য হলে প্রমাণ করুন

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজ, এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ভারতের বিপক্ষে টানা হার। দলের বাজে পারফরমেন্সে খারাপ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্র্যান্ড ইমেজেও। কেন পারফরমেন্সে এমন ধস? সদ্য এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের দাবি- দলের প্রতি ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বর্তমান কমিটির স্পষ্ট নজর না থাকাটাই এর অন্যতম কারণ। ক্রিকেট বোর্ডের বেশ কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতি, বিপিএলের ফিক্সিংয়ের বিচার নিয়ে প্রহসন ও আংশিক বিচার, অভিযোগ থেকে একজন পরিচালককে বাঁচানোর চেষ্টা, ক্রিকেট কূটনৈতিক ব্যর্থতা, পেশাদারিত্বের অভাব, কমমূল্যে টিভিস্বত্ব বিক্রিসহ অবকাঠামো উন্নয়নে আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ তোলে সংগঠনটি। তবে এসব অভিযোগ মিথ্য ও বানোয়াট বলে উড়িয়ে দিলেন বিসিবি পরিচালক ইসমাঈল হায়দার মল্লিক। তিনি বলেন, ‘অভিযোগগুলো সত্য হলে তারা প্রমাণ করুক। তারা প্রমাণ দিয়েই অভিযোগ কেন করছেন না তারা?’ অন্যদিকে বিসিবি’র আরেক পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজনের বিপক্ষেও অভিযোগ করা হয় সেই সংবাদ সম্মেলনে। এ বিষয়ে তার বিপক্ষে আনা অভিযোগগুলোর প্রমাণ দাবি করেন সুজনও। তিনি বলেন, ‘আমার বিপক্ষে কোন অভিযোগ থাকলে কেন তারা সেগুলোর প্রমাণ দিচ্ছেন না!’ আরেক পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার দাবি, মিথ্যাচার করা হয়েছে ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরমেন্স এতটাই হতাশার যে, কোন বিদেশী সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান খেলা দেখাতে আগ্রহ দেখায় না। ৬ বছরের জন্য বিসিবি’র টিভিস্বত্ব কিনে নিয়েছে স্বদেশী গাজী টিভি। ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের অভিযোগ, বর্তমান বোর্ডের দুর্নীতির কারণেই ব্র্যান্ড ইমেজ কমেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের। এ জন্য শেষ পর্যন্ত দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান নামমাত্র মূলে সম্প্রচার স্বত্ব কিনে নিয়েছে। এ বিষয়ে ইসমাঈল হায়দার বলেন, ‘এর আগে নিম্বাসের সঙ্গে আমাদের টিভিস্বত্ব নিয়ে ৫৬ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি ছিল। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ৩৬ মিলিয়ন ডলার ছিল প্রডাকশন ব্যয়। সেই হিসেবে বিসিবি’র মূল পাওনা ছিল ২০ মিলিয়ন। যার মধ্যে বিসিবি পেয়েছে মাত্র ৮ মিলিয়ন ডলার। এখনও ১২ মিলিয়ন পাওনা নিয়ে আমাদের নিম্বাসের সঙ্গে মামলা চলছে। তবে গত বোর্ডের করা চুক্তিতে কিছু ত্রুটি ছিল, যে কারণে মামলার রায় কতটা আমাদের পক্ষে আসবে তা নিয়ে সংশয় আছে। আর এবার আমরা উন্মুক্ত বিডের মাধ্যমে টিভিস্বত্ব বিক্রি করেছি এবং এ ২০ মিলিয়ন ডলারে কোন রকম প্রডাকশন খরচও নেই।’
এ ছাড়া অভিযোগ, কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইসমাঈল হায়দার বলেন, ‘তাই যদি হতো তা হলে তো বাংলাদেশে এমন রাজনৈতিক সঙ্কটে বিশ্বকাপের আসরই হতো না। আর ‘বিগ থ্রি’র যে প্রপোজাল ছিল তাতে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদাই থাকার কথা ছিল না। কিন্তু আমাদের বোর্ডের কূটনৈতিক দক্ষতার কারণেই তা হতে পারেনি। এ ছাড়া আমাদের এখন খেলার পরিমাণও দ্বিগুণ হয়েছে এবং আইসিসি থেকে যা আয় হতো তাও প্রায় দ্বিগুণ পাব আমরা। আর ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ভারতে কেন এবং আমরা বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পেলাম না কেন, এটা সাধারণ একটা বিষয়। আইসিসি’র বিবেচনায় এবার আর্থিক দিকটাকেই বড় করে দেখা হয়েছে। ভারত ছাড়া কি আর কোন দেশ বিশ্বকাপ পেয়েছে এই সময়ে? শ্রীলঙ্কা পেয়েছে? পাকিস্তান পেয়েছে? নিউজিল্যান্ড কিংবা ওয়েস্টইন্ডিজ পেয়েছে কি? আসলে এটা আইসিসি’র বিষয়।’ অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভিআইপি গ্যালারির করপোরেট বক্স নিয়ে আর্থিক অনিময় নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের বিশ্বকাপে বক্স বিক্রি হয়েছিল সাড়ে পাঁচ কোটি টাকায়। আর এবার বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১২ কোটি টাকায়। আমরা কমিশনের কথা বলেছিলাম কিন্তু বক্সগুলো বিক্রির জন্য কোন কমিশন দেয়া হয়নি।’
বিপিএলের ফিক্সিংয়ের বিচার নিয়ে প্রহসন হয়েছে ও আংশিক বিচার করে একজন পরিচালককে বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছে- এ নিয়ে মল্লিক বলেন, ‘ফিক্সিংয়ের তদন্তের দায়িত্ব আইসিসি’র। বিসিবি শুধু তাদের সাহায্য করবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ যদি আইসিসি তদন্ত করে এবং সত্যতা পায় তাহলে আইন আনুযায়ী অগ্রসর হবে বিসিবি।’ অন্যদিকে খালেদ মাহমুদ সুজন তার বিপক্ষে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি যদি ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকি তাহলে প্রমাণ দিক। আর ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্রে কোথাও লেখা নেই যে চাকরি করে বোর্ডের পরিচালক থাকা যাবে না।’ এছাড়াও মাঠ ও অবকাঠামো উন্নয়নে টেন্ডার ছাড়া কাজের বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে লোকমান হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘একেবারে মিথ্যা-বানোয়াট সব কথা।
তবে দুটি ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ইসমাঈল হায়দার। এর মধ্যে একটি প্রফেসনালিজমের অভাব ও নিজেদের লোকদের বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। মল্লিক বলেন, ‘হ্যাঁ এটা সত্য যে, গোটা বোর্ডকে এখনও প্রফেশনাল কাঠামোতে রূপ দিতে পারিনি। আমরা সিএফওএর পরীক্ষা নিয়েছিলাম। কিন্তু তেমন যোগ্য লোক না পাওয়ায় তা এখনও সম্ভব হয়নি। আর স্বজনপ্রীতির কথা বলছেন? আমি বলবো যারা আমাদের বোর্ডকে সমর্থন দিয়েছে তারাই তো এখানে যুক্ত হবেন। নিশ্চয় যারা বিরোধিতা করেছে তারা আসবে না?’