রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে বেকায়দায় বাংলাদেশ

অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে বেকায়দায় বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দেশটির সেনাবাহিনীর তা-বে বেকায়দায় পড়েছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা নিলেও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছেন না। দিনের বেলা ভিটেমাটি ছাড়া এসব রোহিঙ্গা সীমান্তের কাছে নাফ নদীতে অপেক্ষা করে। সূর্যের আলো মিলিয়ে রাত গভীর হলে দালালদের মাধ্যমে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে প্রবেশ করছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ অনুপ্রবেশের

দায়ে গত এক সপ্তাহে বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে ৫ শতাধিক মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে । এদিকে জাতিসংঘের অভিবাসনসংক্রান্ত সংস্থা আইওএম (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেন্টস)-এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, সোমবার ৫শরও বেশিসংখ্যক মানুষকে সীমান্ত পেরিয়ে পাহাড়ি ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিতে দেখেছেন তিনি।

জাতিসংঘের অন্যান্য ত্রাণ কর্মকর্তাও তাদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেখেছেন। তবে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা জানায়নি। জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা জানিয়েছেন, এক ঝাঁক মানুষকে একসঙ্গে ঢুকে যেতে দেখেছেন তারা।  উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের ৬০ বছর বয়সী মৌলভী আজিজ খান একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে বলেন, গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। তিনি জানান, ওই সময় আমি আমার ৩ কন্যা আর তার ৩ সন্তানকে নিয়ে কাছাকাছি একটি পাহাড়ে পালিয়ে যাই। পরে আমরা সীমান্ত অতিক্রম করতে সমর্থ হই।

সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চরম উত্তেজনা দেখা গেছে। অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়। দুদিনের মাথায় ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। তারা দাবি করে, প্রায় ৩০০ মানুষ পিস্তল এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে সৈন্যদের উপর আক্রমণ করলে সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে তাও বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। রাখাইনে নতুন করে গঠিত ইনফরমেশন টাস্কফোর্স-এর সদস্য এবং প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জ তাই দাবি করেন, এ নিয়ে তারা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের কোনো আলামত তারা পাননি। তিনি বলেন, ৯ অক্টোবর থেকে এখানকার মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছে কিনা সেনাবাহিনী ও পুলিশকে নিয়ে তা আমরা খতিয়ে দেখেছি। অবশ্য কিছু মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিল। তবে তারা আবার ফিরে এসেছে। কক্সবাজার ও বান্দরবানের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তপথ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ কিলোমিটার জলসীমান্ত। সীমান্তে বসবাসরত একাধিক সূত্র বলেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং, দমদমিয়া, নোয়াপাড়া, ঝিমংখালী, সাবরাং, হ্নীলা, নাজিরপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, খারাংখালী এবং লেদা এলাকায় অনুপ্রবেশ বেড়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত চৌকিগুলোতে অতিরিক্ত তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। দিনের আলোতে বিজিবি তৎপরতা থাকায় অনুপ্রবেশ হচ্ছে না। তবে রাতের আঁধারে নাফ পাড়ি দিয়ে দালালদের সহায়তায় তারা অনুপ্রবেশ করছে।

রয়টার্সসহ কয়েকটি গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোহাম্মদ হাসেম নামে এক অনুপ্রবেশকারী বলেন, আমার বাড়ি মংডুর কেয়ারী পাড়া গ্রামে। মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। আমরা ৪০ দিন জঙ্গলে কাটিয়েছি। এরপর প্রায় ৬ মাইল পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে উনচিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে কুতুপালং বস্তিতে এসে আশ্রয় নিয়েছি। আরেক অনুপ্রবেশকারী কামাল আহমদ বলেন, তারা একসঙ্গে ২০টি পরিবার উনচিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। মিয়ানমারের আরেক নাগরিক সুফিয়া বেগম পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক জানান, গত ২ দিনে ৩৫টি পরিবারের প্রায় আড়াই শতাধিক রোহিঙ্গা কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে।