শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > অবরোধে অস্থির রাজধানীর বাজার

অবরোধে অস্থির রাজধানীর বাজার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা বিরতিহীন অবরোধে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পণ্য খালাস করতে এসে আটকা পড়েছে শত শত ট্রাক। আবার পণ্য আনতে গিয়েও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে আছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক। অবরোধের আগে সবজি ভর্তি ট্রাক নিয়ে যেসব ব্যবসায়ী ঢাকায় এসেছিলেন, ওই দিন রাতে তাদের চলে যাওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ট্রাক ফিরে যেতে পারেনি।

এদিকে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হওয়ায় ক্রেতার অভাবে পরিবহন করা অনেক সবজি বিক্রি হচ্ছে না। এতোকিছুর পরও যারা সবজি বিক্রি করতে পেরেছেন লাগাতার অবরোধে খালি ট্রাক নিয়ে তারা ফিরে যেতে সাহস করছেন না। তাই তারাও আটকে আছেন রাজধানীতে।
এদিকে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের গতিশীলতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় একটি সমঝোতা ও সমাধানের পথ বের করারও আহবান জানিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
এফবিসিসিআই বলছে ,একদিনের হরতাল আর অবরোধে দেশে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনির্দিষ্টকালের অবরোধে ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দেশজুড়ে সবজিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য ব্যবসায়ীরা রাজধানীতে পণ্য আনতে পারছেন না। ফলে সবজিসহ সকল প্রকার নিত্যপণ্যের সরবরাহ সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর বাজারগুলো। চলমান অস্থিরতায় রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৩ টাকা পর্যন্ত। আরেক দফা দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি ডাল, চিনি, সয়াবিনের সঙ্গে বেড়েছে বেশিরভাগ মসলা জাতীয় পণ্যের দামও।
একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন পেঁয়াজ-রসুন ও আদা আমদানিকারক। তিনি বলেন, অবরোধের আগে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এখনও ওই দরেই বিক্রি করছি। তবে অবরোধের কারণে ভারত থেকে আসা আমদানি পণ্যবাহী কোনও ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই সকল প্রকার পণ্যের সরবরাহ কমে যাবে এবং এই অজুহাতে দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
শান্তিনগর বাজারের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, বেশি চাহিদাসম্পন্ন দু’একটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ফুলকপি ১৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। ২৫ টাকার শিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
খিলগাঁও বাজারের দোকানি রমজান আলী বলেন, অবরোধ চললেও কিছু গাড়ি ঢাকায় ঢুকতে পারছে। এছাড়া গত সপ্তাহে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ছিল। তাই এখনও বাজারে কোনও পণ্যের সঙ্কট দেখা যাচ্ছে না। তবে কৃষক ও আড়তদারদের ওপর অবরোধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তার মতে, টানা হরতাল-অবরোধে যে কোনও সময় বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সৈয়দ আবু সিদ্দিকী বলেন, টানা অবরোধে পণ্য সরবরাহ বন্ধ। ডিম ও মুরগি উৎপাদন হলেও ঠিকমতো বাজারে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এছাড়া মুরগির জন্য কেনা খাবার ফার্মে পৌঁছাতেও সমস্যা হচ্ছে। তাই এখন বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও আগামীতে কী হবে, তা বলা মুশকিল।
বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ ও হরতালের নামে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় গত ২০ দিনে দেশের পোল্ট্রি শিল্পের প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির (বিপিআইসিসি) আহ্বায়ক মসিউর রহমান।
হরতাল-অবরোধে প্লাস্টিক খাতে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) জানিয়েছে, হরতাল-অবরোধের প্রভাবে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ৫ শতাংশের সমান। একই কারণে প্রতিদিন দেশের বিমা কোম্পানিগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকা-এমন তথ্য জানান সংগঠনটির সভাপতি শেখ কবির হোসেন।
মিরপুর ১-এর চাল আড়ত বহুমুখী সমিতির সাবেক সভাপতি ও কাদের রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবদুর রহিম বলেন, চালের বাজার এমনিতেই কিছুটা মন্দা। তবে অবরোধ আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে ঘাটতি দেখা দেবে। এক্ষেত্রে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারি বিক্রয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব মতে, ঢাকার বাজারে আগের সপ্তাহের তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ৮৮ থেকে ৯২ টাকায় বিক্রি হলেও তা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৮ টাকায়। বেড়েছে দেশি ও ব্রয়লার মুরগির দাম। এছাড়া প্রতি হালি ডিম গত সপ্তাহে ২৮ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা দরে।
কারওয়ান বাজারের আড়তদার, শ্রমিক, খুচরা ব্যবসায়ী ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গাড়ি রাখার স্থানের টোল তোলার দায়িত্বে থাকা লোকজন জানিয়েছেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই সবজি ও নিত্যপণ্য বোঝাই ট্রাক এসেছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।
কারওয়ান বাজারের আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে সবজি বেশি আসে মেহেরপুর, যশোর, ঈশ্বরদী, পাবনা, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা থেকে। একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
প্রতিদিন দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, ঈশ্বরদী ও চুয়াডাঙ্গা থেকে গড়ে ৫ থেকে ৬ শত ট্রাক ভর্তি সবজি ও বিভিন্ন প্রকার নিত্যপণ্য ঢাকায় আসে। তবে গত এক সপ্তাহে ট্রাক তেমন আসেনি। ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে পণ্য পাঠানোর অনুরোধ থাকলেও ট্রাক মালিক সমিতি পরিস্থিতি না বুঝে ট্রাক ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ী ও নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক উত্তাপের কারণে ঢাকার অনেক স্থানেই নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা। রাস্তায় কমে গেছে গাড়ি। নাশকতার আশঙ্কায় মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চলতি সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও রয়েছে নাশকতার আশঙ্কা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, হানাহানি এসব আমরা চাই না।
এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা মানে অর্থনীতির চাকা থেমে থাকা। সাময়িকভাবে ক্ষয়ক্ষতি কম মনে হলেও এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। এ ধরনের রাজনৈতিক আচরণ দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করে তোলে বলেও জানান তিনি।
ডিসিসিআই’র সদ্য বিদায়ী সভাপতি শাহজাহান খান বলেন, রাজনৈতিক হানাহানি চাই না। হানাহানি করে কোনও প্রকার সমাধান আনা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন সমঝোতাপূর্ণ আলোচনা। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম ডেস্ক