শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনায় চালছে গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়

অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনায় চালছে গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গুলো চলাচ্ছে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা। কিছুটা কম হলেও বৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ ও অনিয়ম রয়েছে। পাশাপাশি নারী কেলেংকারীর অভিযোগও উঠেছে বেশ কিছু ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স ছাড়াই অবৈধ ভাবে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে গাজীপুর মহানগরসহ জেলার সবকটি উপজেলার বেশ কয়েকটি ক্লিনিক এবং ডায়গনস্টিক সেন্টার। ফলে অহরহ ভুল চিকিৎসায় প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষ। আর এই নিয়ে মাঝে মধ্যেই ঘটছে ক্লিনিক ভাংচুরের ঘটনা। একদিকে চিকিৎসার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় অপর দিকে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু ইদানিং সময়ে গাজীপুরে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা বলা চলে। অপরদিকে এসব অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে লাখ লাখ টাকার মাসোহারায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কপিতয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিক এবং জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক কর্মচারী জানান, গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জনের রহস্যজনক ভূমিকায় উক্ত দপ্তরের কর্মচারি আকিবুরসহ আরো বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সর্বদা সক্রিয় রয়েছে। গাজীপুর মহানগরসহ জেলার সবকটি উপজেলার ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা এসব অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিজস্ব কোন চিকিৎসক না থাকলেও ক্লিনিকের সাইনবোর্ড, প্যাড, কিংবা লিফলেটে দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকদের নাম ব্যবহার করা কোন নতুন ঘটনা নয়। দেশে সু-পরিচিত এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নাম ব্যবহার করে অদক্ষ এবং ভাড়া করা কথিত চিকিৎসক দিয়ে দাপটের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ ক্লিনিক মালিকেরা।
বছরের পর বছর ধরে গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারি গোপনে ঘুষ বাণিজ্যেতে লিপ্ত থাকলেও বিষয়টি বরাবরই অদৃর্শ্য রয়ে গেছে। তথ্যদাতারা জানান, সিভিল সার্জন অফিসের দুষ্ট চক্র ঘুষ গ্রহণের প্রবনতা আরো বিভিন্ন ভাবে বিস্তৃত। বর্তমানে গাজীপুর মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কথিত ডাক্তার, কবিরাজ ও হারবাল চিকিৎসকদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বর্তমানে হুমকির মুখে। এ কারণে জেলায় মা ও শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির পাশাপাশি অপচিকিৎসার ছোবলে প্রতিনিয়ত ফতুর হয়ে পড়ছেন সাধারণ লোকজন। সূত্রমতে, সিভিল সার্জন অফিসের এই অসাধু চক্রকে তুষ্ট করে বর্তমানে গাজীপুর জেলার সবকটি উপজেলায় শতাধিক হাতুড়ে ডাক্তার নিয়মিত রোগী দেখছেন। তারা প্রায় প্রতিদিন চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রের পাশাপাশি ঔষুধের নামে সাধারণ রোগীদের অনুমোদনহীন বিভিন্ন কোম্পানীর ঔষুধের নাম লিখে রোগ মুক্তির পরিবর্তে অসহায় রোগীদের পৌঁছে দিচ্ছে মৃত্যুর দিকে।
জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের অসংখ্য হাতুড়ে ডাক্তারের বিরুদ্ধে গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিসে ভুক্তভোগী এবং সাংবাদিকগণ বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েও কার্যালয়ের কারো নীরবতা ভাঙ্গাতে পারেনি। বরং ভুক্তভোগী এবং সাংবাদিকদের তথ্যকে পুঁজি করে ঐ চক্রটি অভিযুক্ত ডাক্তারকে নোটিশ দিয়ে গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এনে দফারফা করে ছেড়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের বেশ কয়েকজন বৈধ ক্লিনিক এবং ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিক জানান, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় স্বার্থের বিনিময়ে নীরব থেকে এসব অবৈধ কর্মকান্ডে সহায়তা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর ও টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক জানান, সরকারী তদারকী এবং নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যত্রতত্র কোন অনুমোতি ছাড়াই গড়ে উঠছে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় সরকারি হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সরকারি চিকিৎসকরা নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করছেনা। তাঁরা কোন মতে হাজিরা দিয়ে ছুটে যায় প্রইভেট ক্লিনিকে। এসব চিকিৎসক সরকারি সেবা দেয়ার চাইতে নিজের গড়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ফলে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো ঠিকমত স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছেনা।
গাজীপুরে অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়গনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা কয়টি এবং এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিগত দিনে কি ব্যবস্থা গ্রহণ হয়েছে এর কোন পরিসংখ্যান গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া যায়নি। সরকারি বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে এসব মেডিকেল সেন্টারগুলো বছরের পর বছর তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা জানতে চাইলে গাজীপুর সিভিল সার্জন ডাঃ শাহ আলম এই প্রতিনিধিকে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘এরা কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে কিভাবে প্রতিষ্ঠান চালায় তা আমি নিজেও জানি না’। তিনি জানান, গাজীপুরে ক্লিনিক এবং ডায়গনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৭৮টি। অনুমোদনহীন বিভিন্ন ক্লিনিক এবং ডায়গনস্টিক সেন্টারে অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘঠিত হয় এমন প্রশ্নে সিভিল সার্জন বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কি বলবো। আমার কিছু করার নাই’।
অবৈধ মেডিকেলের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মেডিকেলে ঢুকতে গেলে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসে। চেয়ার রক্ষার জন্য চোখ বন্ধ করে রাখা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই’।