শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > অতি আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ

অতি আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলের টানা অবরোধে বোমা-আগুনে প্রায় প্রতিদিনই যখন মানুষের মৃত্যু ঘটছে, সারা দেশে নানা ক্ষেত্রে জীবনযাত্রা বিঘিœত, তখন শাসকদলের নেতারা শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। প্রথমে ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছিলেন, ‘কথা দিলাম আগামী সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে জনজীবনে স্বাভাবিক চলাফেরা নিশ্চিত করা হবে।’

এর তিন দিন পর ২২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের একই ধরনের কথা বলেন। গতকাল রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা দলের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘আগামী সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ আর গতকালই রাত ৯টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীবাসে পেট্রল বোমায় প্রায় ১৯ জন যাত্রী দগ্ধ। গতকালই রাজশাহীর তানোরে সন্ধ্যায় নাশকতাকারীরা যাত্রীবাহী বাসে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করায় আবার শিশুসহ ৯ জন দগ্ধ। গতকালই সকাল ৮টায় হবিগঞ্জ শহরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম ও সহকারী সুপার সাজ্জাদ ইবনে রায়হানের বাসভবন লক্ষ করে বোমা ফাটিয়ে সাহস দেখায় নাশকতাকারীরা।
তার আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৬টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে। বরিশাল শহরের প্রধান সড়কে আগুন জ্বালিয়ে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটানো হয়। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে গানপাউডার ছিটিয়ে বাসে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় যুবলীগ সভাপতির বাড়িতে। বগুড়া শহরে দুটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়। সাত দিনে ঠা-া করার ঘোষণার পরে একদিনও নাশকতা বন্ধ থাকেনি। আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করছেন, পরিস্থতির দ্রুত উন্নতি ঘটছে। গতকাল আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠছে, রাজধানীতে তো হরতাল-অবরোধের কোনো প্রভাব পড়েনি, ট্রেন চলছে, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় কমে এসেছে, দূরপাল্লার গাড়িও চলতে শুরু করেছে, এখন কিছু চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা ঘটছে। এগুলো দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।’
কোন ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ নেতারা দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কথা বলছেন? উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ২২ জানুয়ারি ন্যাশনাল কমিটি ফর ইনটেলিজেন্স কো-অর্ডিনেশনের (এনসিআইসি) সদস্যরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতি অবহিত করেছেন। তাঁরা আশ্বাস দিচ্ছেন যে, এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দলের একাধিক নেতা মনে করেন, এটা কোনো আন্দোলন নয়-এটা হচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকা-। রাজনৈতিক আন্দোলন হলে সেটা দমন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, কারণ রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকে। কিন্তু দেশের কোনো মানুষই যেখানে সন্ত্রাস চায় না, সেখানে সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে যেকোনো পথে দমন করা যায়। দলের ওই নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার চলমান আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকা- হিসেবে ধরে নিয়ে সরকার ও দলের সকল শক্তি নিয়োগ করে মাঠে নামা হয়েছে, এদের নির্মূল করা এখন সময়ের ব্যাপার।
কিন্তু তার জন্য কোন ধরনের পদক্ষেপকে কার্যকরী মনে করছেন? জানতে চাইলে জবাবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, নাশকতা দমনে প্রশাসনের সব স্তর সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসী এলাকাগুলোতে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে, তারা সন্ত্রাস দমনে চরমপন্থা পর্যন্ত ব্যবহার করছে, এতে ইতোমধ্যেই ভয়ে চুপসে গেছে সন্ত্রাসীরা।
তিনি আরও জানান, এ ছাড়া ২০-দলের আন্দোলনে সক্ষম এমন নেতাসহ মাঠকর্মীদের গ্রেফতার চলছে। সন্ত্রাসীদের নির্দেশ দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার মতো বেশিরভাগ নেতাই এখন কারাগারে। বাকিরা পলাতক। তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরির সঙ্গে ওইসব এলাকার ২০-দলীয় জোট নেতাদের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে সামাজিকভাবে কোণঠাসা করে ফেলা হচ্ছে। একদিকে পুলিশের ভয়, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দ্বিমুখী চাপে ২০-দলীয় জোটের অনেক নেতা-কর্মীই এখন দল ছেড়ে সরকারি দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগের অপর এক নেতা বলেন, তাঁরা মনে করছেন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে উন্নতি ঘটতে পারে। এমন ভাবনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারেক জিয়ার প্রকাশ্য বক্তব্য বন্ধ হওয়ায় বেশ সুফল পাওয়া গেছে। তারেকের উস্কানিমূলক বক্তব্য এখন সরাসরি গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। এখনও হয়তো কেউ কেউ বার্তা পাচ্ছে নানা কায়দা-কৌশল করে। সে কারণে হিসেব করা হচ্ছে যে, খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে আরও হতাশ হয়ে পড়বে বিএনপি কর্মীরা।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির সম্ভাবনা আছে কি না-জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আশার বাণী শুনয়ে বলেন, ‘আশা করছি দ্রুত উন্নতি হবে।’ তিনি বলেন, বোমাবাজ সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের তালিকাও করা হয়েছে, যারা সন্ত্রাসের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে, এদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলে দ্রুত সময়েই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘ওরা রাজনীতির নামে সন্ত্রাস করে রাতের আঁধারে গোপনে দাঁড়িয়ে একটা বোমা ছুড়ে আবার আঁধারে মিলিয়ে যায়। আমরা প্রকাশ্যে রাজপথে থাকি। ওদের রাজপথে আসার সাহস নেই।’
তনি বলেন, ‘এখন আমরা পাড়া-মহল্লায় কমিটি করে চোর-ডাকাত তাড়ানোর মতো পাহারা বসালেই ওদের খেলা খতম হয়ে যাবে।’আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যেই দেখছি বিএনপির কর্মীরা মাঠে নেই, দেশে রাজনৈতিক কোনো আন্দোলন নেই। বিএনপি কর্মীরা সন্ত্রাসীদের হাতে আন্দোলন ছেড়ে ঘরে বসে আছে। এখন দেশে যা ঘটছে সেগুলো সন্ত্রাসীদের কাজ।’ তাঁর কথা, একটি গণভিত্তিসম্পন্ন রাজনৈতিক দলের গঠিত সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে কোনো সন্ত্রাসী টিকতে পারে না, পারবেও না। হানিফ বলেন, ‘ধীরে ধীরে নাশকতা কমে আসছে, পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে প্রায়, ঢাকায় এখন আগের মতোই যানজট লাগে। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক, দু’চারটা চোরাগোপ্তা হামলা আছে মাত্র।’ স:খ: