বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
দফায় দফায় রুদ্ধদ্বার ঘরোয়া বৈঠকের পরেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে পারছে না বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। ১১ অক্টোবর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহবায়ক ড.কামাল হোসেনের বাসায় শেষ বৈঠক হবে। সবকিছুর দফারফা করবেন ড.কামাল। থাকবে না বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া। ধারণ করবে নতুন নাম। আসবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার অঙ্ক সোমবারের ৩য় দফার বৈঠক থেকেও মেলেনি।
বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন যুক্তফ্রন্টের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।
রোববার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফের গুলশানের বাসায় বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নয় নেতার বৈঠক হয়। জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৫ দফা দাবিতে ঐক্যমত্য হয়েছেন তারা। দেবেন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক।
পরদিন সোমবার যুক্তফ্রন্ট নেতা আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় ফের বৈঠকে বসেন ওই নেতারা। তবে দুই বৈঠকের একটিতেও ছিলেন না যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্প ধারার সভাপতি এ কি এম বদরুদোজ্জা চৌধুরী। পরিশ্রান্ত থাকায় আসেননি ঐক্য প্রক্রিয়ার আহবায়ক ড.কামাল হোসেন। তবে তাদের দলের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন।
যুক্তফ্রন্ট’র এক নেতা এই প্রতিবেদককে জানান, কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীকে রেখে রবের বাসায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কামাল হোসেনের ১১ অক্টোবর তার বেইলি রোডের বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেখানে বসে শেষ ফয়সালা হবে।
তিনি বলেন, আজকের (সোমবার) বৈঠকে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠেছে- তার একটি নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তবে তা চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত করবেন ড.কামাল। এই নামেই আগামী সরকারবিরোধী সকল আন্দোলন পরিচালিত হবে। যে ৫ দফা দাবি ঐক্যমত্য হয়েছিলাম রোববার, তাতে আজ (সোমবার) আরও সংযোজন হয়েছে। বিএনপিও ও যুক্তফ্রন্ট আরও কয়েকটি দাবি তুলেছে। এগুলোরও চূড়ান্ত ফয়সালা হয়নি। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিটি থাকছে। আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে- যা এখনও বলার মতো না। সকল প্রস্তাবের পক্ষে বিপক্ষে বিস্তর কথা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি দাবি ও লক্ষ্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের এক নেতা জানান, ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বাধীন বিএনপি জামায়াতে ইসলামীকে ছাড়া বাকি ১৮ দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য থাকার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বিষয়টির এখনও কূলকিনারা হয়নি। জামায়াতে ইসলামীকে রেখেই বিএনপি ঐক্য আসবে। তবে জোটে থাকলে আপত্তি নেই যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার।
তিনি আরও জানান, বিপদে বন্ধু যাতে পরে শত্রু না হয়ে যান- তারও একটি নিশ্চয়তা যান যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। ক্ষমতায় গেলে নেতৃত্ব কোন ধরনের হবে- তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
বৈঠকের বিষয়ে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার অংশ হিসেবে বৈঠক হয়ছে। অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। ১১ তারিখ সব বলা যাবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) গণমাধ্যম কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ ফরায়েজী এই প্রতিবেদককে বলেন, আলোচনার পুরো সময় আমি ছিলাম না। তবে সকল দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি জানানো হয়েছে। সকলের দাবি এক করে চূড়ান্ত হবে কামাল হোসেনের বাসায়।
রাত সাড়ে আটটার পর থেকে বারোটা পর্যন্ত চলা বৈঠকের থেকে বেরিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপি-যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ব্যাপারে একমত হয়েছে। শিগগিরই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক আসবে।
চার ঘন্টা ধরে চলমান ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, যুক্তফ্রন্টের আসম আবদুর রব, আব্দুল মালেক রতন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, রবের স্ত্রী তানিয়া রব, বিকল্প ধারার মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু, সুলতান আহমেদ মনসুর এবং বিএনপির পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল, খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ।
এই প্রতিবেদককে মাহমুদুর রহমান মান্না জানাম, অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি। তবে ছিলেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম আকরাম ও শহীদুল্লাহ কায়সার।