সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডাবলুর ওসি পদে পুনঃ পদায়ন: বিতর্ক থামছেই না

 

নুর আলম সিদ্দিকী মানু :

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে আবারও পদায়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ মনিরুল হক ডাবলু। তবে এই নিয়োগ ঘিরে ফের উঠেছে তীব্র বিতর্ক ও প্রশ্নের ঝড়। মাত্র কিছুদিন আগেই আশুলিয়া থানায় তার ওসি হিসেবে পদায়ন এবং সেই সঙ্গে অর্ধ কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরও গুরুত্বপূর্ণ থানায় তার পুনঃপদায়ন জনমনে নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।

ডাবলুর রাজনৈতিক পরিচয়

মনিরুল হক ডাবলু এক সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি তৎকালীন সভাপতি লিয়াকত সিকদার এবং সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিত। ২০২২ সালে তার জন্য একটি ডিও লেটার দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু।

 

তবে পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিন্ন প্রত্যয়নপত্রে দেখা যায়, তিনি ছাত্রদলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন—যেখানে তাকে ঢাবির হোস্টেলভিত্তিক ছাত্রদল কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এক ব্যক্তির দুটি বিপরীত রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে এই দ্বৈততা স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তোলে তার নিয়োগের বৈধতা ও পেশাগত নৈতিকতা নিয়ে।

 

অর্থের বিনিময়ে পদায়নের অভিযোগ

২০২৫ সালের শুরুর দিকে আশুলিয়া থানার ওসি হিসেবে ডাবলুর পদায়ন নিয়েই ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ উঠে, তিনি প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বিনিময়ে পদটি পান। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার তাকে অবিলম্বে এসপি অফিস ক্লোজ করে সরিয়ে নেন।

কিন্তু মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তাকে আবারও ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

এ বিষয়ে প্রশাসনের ব্যাখ্যাতেও প্রশ্ন

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান দাবি করেছেন, ওসি মনিরুল হক ডাবলুর পদায়ন সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই হয়েছে এবং এতে কোনো আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটেনি। তার ভাষায়, “আমরা তার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও পূর্বতন কাজের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো তথ্যগুলো ভুল ও বিভ্রান্তিকর।”

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যদি বিতর্কিত লেনদেনের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ হয়, তবে তাকে তড়িঘড়ি ‘ক্লোজ’ করার প্রয়োজন কেন হয়েছিল? আর যদি সেই অভিযোগ আংশিক সত্যও হয়ে থাকে, তবে কীভাবে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তাকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি থানার নেতৃত্বে বসানো হলো?

এই ব্যাখ্যায় কোথাও যেন স্বচ্ছতা নেই। অভ্যন্তরীণ তদন্তের ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ না করে শুধু ‘অভ্যন্তরীণ যাচাই’কে ভিত্তি ধরে এমন নিয়োগ জনগণের আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জনগণের উদ্বেগ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনআস্থা যখন নানা কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে, তখন এ ধরনের পদায়ন সেই আস্থার বাকি অংশটুকুও চুরমার করছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে, যেখানে পেশাদারিত্ব নয়, বরং রাজনৈতিক লবিং আর অর্থের লেনদেনই নিয়োগের মাপকাঠি, সেখানে নিরাপত্তার আশা অবান্তর।

প্রতিবেদকের অভিমত:

একজন বিতর্কিত, রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বারবার ওসি পদে বসিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে যা সুস্পষ্ট প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এই ঘটনায় অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরি।

 

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫